প্রতীকী ছবি।
কে আগে টাকা দেবে?— এ বার তা নিয়ে ‘দড়ি টানাটানি’ শুরু হয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে। যার প্রেক্ষাপট পূর্ব কলকাতা জলাভূমি সংরক্ষণ।
কেন্দ্রের বক্তব্য, সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থে রাজ্যের যা ভাগ রয়েছে, তা দিতে যে তারা প্রস্তুত, তা আগে লিখিত ভাবে জানাক। পাল্টা রাজ্য জানিয়েছে, কেন্দ্র আগে প্রকল্পের টাকা দিলে তবেই তারা প্রকল্পের জন্য নিজেদের ভাগের টাকা দেবে। আপাতত এই নিয়েই ‘টানাপড়েন’ শুরু হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। যাতে হতাশ ও বিরক্ত তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, বার বার চাপানউতোরে জলাভূমি সংরক্ষণের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য একটি ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করে তা জমা দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রকের কাছে। তখন মন্ত্রক রাজ্যকে জানিয়েছিল, সংশ্লিষ্ট প্ল্যানের জন্য কেন্দ্রীয় অনুদান পেতে হলে তা ‘ন্যাশনাল প্ল্যান ফর কনজ়ার্ভেশন অব অ্যাকোয়াটিক ইকোসিস্টেমস’-এর (এনপিসিএ, যা জলাভূমি ও হ্রদ সংরক্ষণের প্রধান নিয়ামক প্রকল্প) নিয়মবিধি মেনে করতে হবে। এ জন্য প্রস্তাবিত প্ল্যানে কিছু ‘পরিবর্তন’ দরকার।
সেই ঘটনার সূত্র ধরে গত জুনে জাতীয় পরিবেশ আদালত রাজ্য পরিবেশ দফতরের অধীনস্থ ‘ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ডস ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’-কে (ইকেডব্লিউএমএ) নির্দেশ দেয়, সংশোধিত প্ল্যান তৈরির জন্য। সেই মতো ইকেডব্লিউএমএ সংশোধিত প্ল্যান তৈরি করে। নতুন প্ল্যানে প্রস্তাবিত খরচ, আগের থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা কমে ১১০ কোটি টাকা (কেন্দ্র : রাজ্য- ৬০:৪০) হয়।
রাজ্য পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, এরই মধ্যে পরিবেশ মন্ত্রক জানায়, সংশোধিত প্ল্যানের সঙ্গে রাজ্য যেন লিখিত ভাবে এটাও জানায়, তারা তাদের অংশের টাকা দিতে দায়বদ্ধ থাকবে। সম্প্রতি পরিবেশ আদালতের কাছে রাজ্যের জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যাচ্ছে, রাজ্য তাদের অংশের টাকা দিতে ‘নীতিগত ভাবে’ সম্মতি জানালেও এই শর্ত রেখেছে যে, কেন্দ্রকে আগে প্রকল্পের টাকা দিতে হবে। তার পরেই রাজ্য প্রকল্পের জন্য টাকা দেবে। সব দিক বিবেচনা করে রাজ্যের অর্থ দফতর এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে হলফনামা জানাচ্ছে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে বছরখানেক আগে সমস্ত মন্ত্রকের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি নির্দেশের কথা অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তা হল, করোনা অতিমারি অর্থনীতির উপরে প্রভাব ফেলায় কেন্দ্র সমস্ত মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছিল, কোনও প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক যেন ভাল ভাবে পরীক্ষা করে দেখে ওই রাজ্যের অর্থ খরচের সামর্থ্য রয়েছে কি না। প্রয়োজনের ভিত্তিতেই যেন শুধু অর্থ বরাদ্দ করা হয়। সেখানে রাজ্যের এই ‘পাল্টা’ শর্ত জলাভূমি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পরিবেশবিদেরা।
সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘পূর্ব কলকাতা জলাভূমি সংরক্ষণে অর্থ বরাদ্দ নিয়েও চাপানউতোর! তা ছাড়া কিসের ভিত্তিতে প্রথম প্ল্যানে ১১৯ কোটি টাকা প্রস্তাবিত খরচ ধরা হয়েছিল? দ্বিতীয় বারের প্ল্যানে তা কমেই বা কী ভাবে ১১০ কোটি হল?’’ পরিবেশ বিজ্ঞানী তপন সাহা বলছেন, ‘‘পূর্ব কলকাতা জলাভূমি রামসার সাইটের অন্তর্ভুক্ত। তা সত্ত্বেও যে ভাবে কে আগে টাকা দেবে, তা নিয়ে টানাটানি চলছে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক।’’ নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকারের আবার বক্তব্য, প্রতি ক্ষেত্রে কেন্দ্রের টাকা পেতে রাজ্যকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। ফলে রাজ্যের যুক্তি সঙ্গত। একই সঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘তবে পরিবেশের ক্ষেত্রে এখনও যে কেন্দ্র-রাজ্য সহমত হতে পারছে না, তা খুবই আশ্চর্যের। কারণ, এ ক্ষেত্রে কে আগে টাকা দেবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। অহেতুক রাজনীতিকরণ হচ্ছে বিষয়টার।’’
এ প্রসঙ্গে পরিবেশমন্ত্রী রত্না দে নাগ অবশ্য বলছেন, ‘‘পূর্ব কলকাতা জলাভূমি সংরক্ষণে সব রকম ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy