Advertisement
E-Paper

ফুটেজে বন্দি প্রতাপ অধরা, প্রশ্ন পুলিশেই

আলিপুর থানায় হামলা চালানোর পরে ঘটনাস্থলে তাঁর উপস্থিতির প্রমাণ পায়নি পুলিশ। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আলিপুর থানা অভিযোগই লিপিবদ্ধ করাতে পারেনি। কিন্তু মঙ্গলবার আলিপুরেই বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সভায় হামলার ঘটনায় গোপালনগর মোড়ের সিসিটিভি ও ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪২

আলিপুর থানায় হামলা চালানোর পরে ঘটনাস্থলে তাঁর উপস্থিতির প্রমাণ পায়নি পুলিশ। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আলিপুর থানা অভিযোগই লিপিবদ্ধ করাতে পারেনি।

কিন্তু মঙ্গলবার আলিপুরেই বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সভায় হামলার ঘটনায় গোপালনগর মোড়ের সিসিটিভি ও ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার ছবি। পুলিশের কাজে বাধাদানের এমন ‘অকাট্য’ প্রমাণ মজুত থাকতেও কেন তাঁকে এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নে পুলিশের নিচুতলায় ক্ষোভ ক্রমশ ছড়াচ্ছে।

নিচুতলার অভিযোগ: প্রতাপের দলবলের হামলার জেরে গত ১৪ নভেম্বর আলিপুর থানার পুলিশকর্মীদের প্রাণ বাঁচাতে ফাইল হাতে থানার টেবিলের নীচে লুকিয়ে পড়তে হয়েছিল। সে যাত্রায় রাজ্যের পুর-নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ঘনিষ্ঠ প্রতাপ সাহার বিরুদ্ধে এফআইআর-ই দায়ের করতে পারেনি আলিপুর থানা। এ বার নিচুতলার চাপে অভিযোগ দায়ের করা হলেও কেন ওই তৃণমূল নেতাকে এখনও ছেড়ে রাখা হচ্ছে, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বাহিনীর অন্দরে।

বৃহস্পতিবার এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘এ বারও প্রতাপকে ছাড় দেওয়ার জন্য চাপ এসেছিল। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে প্রতাপের ছবি থাকায় এফআইআরে ওঁর নাম লেখা হয়।’’ তার পরেও প্রতাপের গায়ে আঁচ পড়েনি। বুধবার নববর্ষের দিনও তাঁকে নিজের এলাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। তবে এ দিন সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েও তাঁর দেখা মেলেনি।

যদিও ফোন করে প্রতাপের সাড়া মিলেছে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি কোনও ভাবে ওই ঘটনার (রূপা-কাণ্ড) সঙ্গে যুক্ত নই।’’ পাশাপাশি প্রতাপের দাবি, ‘‘আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাই আমি আগাম জামিনের আবেদনও করব না।’’ তা উনি রয়েছেন কোথায়?

সে সম্পর্কে প্রতাপ কোনও মন্তব্য করেননি। যদিও আলিপুর থানার নিচুতলার দাবি, তিনি এলাকাতেই আছেন। এবং ‘উপরমহলে’ যোগসাজশের সুবাদেই লালবাজারের কর্তারা শাসকদলের ওই নেতার গায়ে হাত দিতে পারছেন না বলে সাধারণ পুলিশকর্মীদের একাংশের অভিযোগ। এই মহলের মতে, রাজ্যের জায়গায় জায়গায় বারবার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হাতে পুলিশ আক্রান্ত হলেও কেউ গ্রেফতার না-হওয়ায় আখেরে পুলিশেরই ভাবমূর্তি ধাক্কা খাচ্ছে।

পুলিশের কর্তা-ব্যক্তিরা কী বলেন? মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ হওয়ার দৌলতেই কি ছাড় পাচ্ছেন প্রতাপ সাহা?

আলিপুর থানার ওসি থেকে ডিসি সাউথ— কেউ মুখ খুলতে চাননি। লালবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে তাঁরা দায় এড়িয়েছেন। অন্য দিকে লালবাজারের ডিসি কিংবা যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার একাধিক অফিসার জানিয়েছেন, পুলিশ কমিশনার ছাড়া কারও এ বিষয়ে কিছু বলার এক্তিয়ার নেই। কমিশনারের ভাষ্য কী?

জানার জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হয়। তাঁর ফোন বেজে কেটে গিয়েছে। এসএমএস করা হলেও উত্তর মেলেনি। পুর-নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করবেন না।

তবে লালবাজারের অফিসারদের একাংশের বক্তব্য, মঙ্গলবার কিছু অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি মঞ্চ থেকে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে কটূক্তি করেছিল, যার উত্তরে রূপা কিছু বলেন। এবং মঞ্চে লাগানো শাসকদলের পতাকা খুলতে শুরু করেন। তখনই গণ্ডগোল শুরু হয়। সিসিটিভি এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্মীদের সাহায্যে ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে। নির্বাচন কমিশনে পুলিশ কমিশনারের রিপোর্ট পাঠানোর সময় এই কথাই লেখা হবে বলে ওই অফিসারদের দাবি।

গোপালনগর মোড়ের সিসিটিভি ফুটেজে কী কী ধরা পড়েছে?

তদন্তকারী সূত্রের খবর: ফুটেজে দেখা গিয়েছে, মঙ্গলবার প্রথমে প্রতাপ সাহার লোকজন বিজেপি’র মঞ্চ দখল করে নিয়েছিল। বিজেপি কর্মীদের নামিয়ে দিয়ে তারা মঞ্চের চেয়ারগুলো ভাঙচুর করে। বিজেপি-র পতাকা খুলে ফেলা হয়। এ সব চলাকালীন রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে এলে তাঁর গাড়িও ভাঙচুর হয়। মোতায়েন পুলিশকর্মীরা তখন বিজেপি নেত্রীকে সরিয়ে দেন। পুরো ঘটনাপর্বে প্রতাপ সাহার ভূমিকা কী?

পুলিশ সূত্রের খবর: ফুটেজে দেখা গিয়েছে, প্রতাপ প্রথমে আলিপুর থানার ওসি’র সঙ্গে তর্ক জুড়েছেন। পরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছেন। ক্যামেরা এ-ও বলছে, উপস্থিত পুলিশকর্মীদের কাজে তিনি আগাগোড়া বাধা দিয়ে গিয়েছেন।

সিসিটিভি’র ওই ফুটেজ পুলিশ এ দিন বাজেয়াপ্ত করেছে। তা দেখে দেখে প্রতাপের সাঙ্গপাঙ্গকে শনাক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ-কর্তা। মঙ্গলবারের ঘটনা নিয়ে তিন-তিনটি মামলাও দায়ের হয়েছে। এখনও কেউ ধরা পড়ল না কেন?

সরকারি ভাবে কর্তারা মুখ না খুললেও সাধারণ পুলিশকর্মীরা বলছেন, মঙ্গলবার রাতে ঠিক হয়েছিল, সিসিটিভির ফুটেজ মোতাবেক প্রতাপ ও তাঁর সঙ্গীদের গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু লালবাজার থেকে নির্দেশ আসে, গ্রেফতার করতে হলে দু’পক্ষের সমস্ত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে। যদিও তদন্তকারীরা তাতে রাজি হননি বলে সূত্রের ইঙ্গিত। ‘‘একে এই টানাপড়েন, তার উপরে রাত পোহালে পুরভোট। সব মিলিয়ে গ্রেফতার পিছিয়ে গিয়েছে।’’— দাবি সূত্রটির।

লালবাজারের এক অফিসারও বলেন, ‘‘ভোটের আগে হয়তো কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। তবে ভোট মিটলে ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের পাকড়াও করা হবে। এখন থানার সব পুলিশ ভোট নিয়ে ব্যস্ত।’’ আর এক অফিসারের পর্যবেক্ষণ, নভেম্বরে থানা ভাঙচুরের ঘটনায় প্রতাপের ছবি সিসিটিভি-তে ধরা না-পড়লেও এ বার পড়েছে। তাই এ বার ওই নেতা খুব সহজে পার পাবেন না।

‘‘এখন না হোক, মামলা আদালতে গেলে পুলিশের কিন্তু আর কিছু করার থাকবে না।’’— মন্তব্য অফিসারটির।

elusive tmc leader tmc leader pratap saha pratap saha vs roopa ganguly roopa ganguly alipore gopalnagar alipore police station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy