Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল

জরুরি অস্ত্রোপচার সীমিত কেন

কলকাতা শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল। এসএসকেএমের ‘অ্যানেক্স’ বা শাখা-র মর্যাদা পেয়েছে এই হাসপাতাল। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ, যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক ও নার্স সেখানে মজুত। খালি রয়েছে শয্যাও। তা সত্ত্বেও দিনের পর দিন সেখানে কোনও রকম জরুরি অস্ত্রোপচার হচ্ছে না।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০০:২৫
Share: Save:

কলকাতা শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল। এসএসকেএমের ‘অ্যানেক্স’ বা শাখা-র মর্যাদা পেয়েছে এই হাসপাতাল। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ, যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক ও নার্স সেখানে মজুত। খালি রয়েছে শয্যাও। তা সত্ত্বেও দিনের পর দিন সেখানে কোনও রকম জরুরি অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। যেখানে পাশেই এসএসকেএম ও এম আর বাঙুরে জরুরি অস্ত্রোপচারের রোগী উপচে পড়ছে, ভিড়ের চোটে অস্ত্রোপচারের সুযোগ না পেয়ে অন্যত্র রেফার হয়ে যাচ্ছেন অনেকে। সেখানে জানুয়ারি থেকে মার্চ— এই তিন মাসে শম্ভুনাথে জরুরি অস্ত্রোপচার হয়েছে মোটে ৩৬টি! জেলাস্তরে নিতান্ত সাধারণ মানের হাসপাতালেও এর চেয়ে অনেক বেশি অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে।

এই রিপোর্ট হাতে আসার পরেই চক্ষু চড়কগাছ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের। তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখেন, বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে শম্ভুনাথে জরুরি অস্ত্রোপচারের কেস হচ্ছেই না। সবই রেফার হচ্ছে। কিন্তু শম্ভুনাথ স্টেট জেনারেল স্তরের হাসপাতাল। সেখানে এক মাসে অন্তত ৩০০-৫০০টি জরুরি অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। সেখানে তিন মাসে অস্ত্রোপচার হয়েছে মাত্র ৩৬টি। অথচ হাসপাতালে ৪ জন সার্জন, ৫ জন অ্যানাসথেটিস্ট রয়েছেন। হাতেগোনা কিছু জরুরি সিজার কেস ছাড়া সেখানে বাদবাকি ‘কোল্ড কেস’ হচ্ছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই তিন মাসে এমআর বাঙুরে জরুরি অস্ত্রোপচারের হয়েছে ২৭৮৪টি। এর ভিতর ফিস্চুলেকটমি, অ্যাপেনডেক্টমি, সেলুলাইটিস, সেবাসিয়াস সিস্ট, রেক্টাল প্রলপাস, শোল্ডার ডিসলোকেশন, হেড ইনজুরি প্রভৃতি রয়েছে। এগুলির মধ্যে ১৩৭টিই আবার হয়েছে রাত ১০ টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে। তিন মাসে এসএসকেএম-এ জরুরি অস্ত্রোপচারের সংখ্যা ৮৭১। শম্ভুনাথের সঙ্গে এদের পার্থক্য চোখে পড়ার মতো।

শম্ভুনাথের একাধিক সার্জনের দাবি, তাঁরা কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন, এমন মনে করাটা ঠিক নয়। তাঁরা অস্ত্রোপচার করতেই চান, কিন্তু রোগীরা এই হাসপাতালে আসতে চাইছেন না। এর বদলে এসএসকেএম বা অন্য মেডিক্যাল কলেজে যাচ্ছেন। সুপার সৌমাভ দত্তের কথায়, ‘‘আমরা জরুরি অপারেশনের জন্য তৈরি, কিন্তু রোগী পাচ্ছি না। সবাই মেডিক্যাল কলেজ স্তরের পরিষেবা চান। ভাবেন সেখানে গেলে বেশি ভাল ফল পাবেন। আমাদের ভরসা করতে পারেন না। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আমাদের আর্জি, রোগী জোগাড় করলে আমরাও দিন-রাত জরুরি অস্ত্রোপচার করব।’’

যা শুনে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘এ সব কথা বাহানা ছাড়া কিছু নয়। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য কলকাতার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারলে বর্তে যান। সেখানে শম্ভুনাথ দাবি করবে, তারা রোগী পাচ্ছে না, আর আমাদের সেটা বিশ্বাস করতে হবে? আসলে জরুরি অস্ত্রোপচার করতে এবং রোগী পেতে উদ্যোগী নয় তারা। কে ক’টা জরুরি সার্জারি করছেন, আমরা তার তালিকা চাইলেই এরা মুশকিলে পড়বে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘শম্ভুনাথ এসএসকেএমের অ্যানেক্স। এসএসকেএম থেকে অনেককে শম্ভুনাথে রেফার করার পরে শম্ভুনাথই আবার তা রেফার করে দিয়েছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে।’’

এ বিষয়ে শম্ভুনাথের সুপার জানান, কিছু কিছু বিষয়ে তাঁদের হাত-পা বাঁধা বলে জরুরি অস্ত্রোপচারের কিছু রোগীকে ভর্তি নিতে পারেন না। যেমন, শম্ভূনাথে কোনও সার্জিক্যাল আইটিইউ নেই। ফলে জটিল কেসে অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে যথাযথ ভাবে রাখার উপায় নেই। এখানে নিউরোসার্জারি নেই, অর্থোপেডিক্স থাকলেও মাত্র এক জন ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসক সেখানে। ফলে রাতবিরেতে দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত বা হাত-পা ভাঙা রোগী নেওয়া যায় না। আবার কার্ডিওলজি বিভাগ নেই বলে আচমকা হৃদরোগে আক্রান্তের কেসও নেওয়া হয় না।

এ ছাড়া শম্ভুনাথের একাধিক সার্জনের মতে, তাঁদের হাসপাতালে অতিসক্রিয় দালাল চক্র রয়েছে। কোনও জরুরি অস্ত্রোপচারের কেস এলে গেট থেকেই দালালেরা রোগীর বাড়ির লোককে ধরে বোঝায়, এখানে অস্ত্রোপচার হলে রোগী সুস্থ হবেন না। বরং কিছু টাকা দিলে তাঁরা রোগীকে এসএসকেএমে জায়গা করে দেবেন। বাড়ির লোক তাতে রাজি হয়ে রোগী নিয়ে চলে যান। আবার এসএসকেএম থেকে যে সব জরুরি সার্জারি শম্ভুনাথে রেফার হয় তাঁদের বেশিরভাগকে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা হাসপাতাল সম্পর্কে ভুল ধারণা দিয়ে কমিশনের লোভে অন্য বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে নিয়ে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE