Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
KMC

বিধিনিষেধ সত্ত্বেও কেন দেবাঞ্জনদের প্রবেশ রুখতে ‘ব্যর্থ’ পুরসভা

২০১৭ ও ২০১৯ সালে পুরভবনে প্রবেশে কড়াকড়ি করার পরেও ফের একই বিষয়ে নির্দেশিকা জারির প্রয়োজন পড়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১ ০৬:৩০
Share: Save:

দেবাঞ্জন দেবেরা ‘অবাঞ্ছিত অতিথি’ হয়ে যখন-তখন পুরভবনে প্রবেশ করতে পারেন— এই কথাটা চার বছর আগেই বুঝতে পেরেছিলেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। তাই নির্দেশিকা জারি করে সমস্ত দফতর ও পুর প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে সতর্ক করতে বলেছিলেন, সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে ‘অবাঞ্ছিত প্রবেশকারী পুরভবনে ঢুকে প্রকৃত ভিজ়িটরদের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারেন। সেই সঙ্গে ওই ব্যক্তির উপস্থিতি পুর কর্তৃপক্ষের জন্যও নিরাপত্তাজনিত একটি সমস্যা তৈরি করতে পারে।’

কিন্তু সাম্প্রতিক কালে দেবাঞ্জনের কীর্তি ফাঁসের পরে গত শুক্রবার পুর কর্তৃপক্ষের জারি করা নির্দেশিকা জানান দিচ্ছে, অতীতে জারি করা সেই নিয়ম-বিধি পুর নির্দেশিকার সংখ্যা বাড়িয়েছে মাত্র! কিন্তু পুরভব‌নের নিরাপত্তার চিরাচরিত ঢিলেঢালা চিত্রে কোনও রকম পরিবর্তন আনতে পারেনি। ফলে দেবাঞ্জন কী করে পুর প্রশাসকের ঘরে পৌঁছে গেল, সেই ঘটনার দায় পুর কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না বলেই মনে করছেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে পুর প্রশাসনের নজরদারির ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন তাঁরা।

নতুন নির্দেশিকায় পুরকর্মীদের পরিচয়পত্র, পুরসভায় আগত ব্যক্তির সচিত্র পরিচয়পত্র, প্রবেশপথে তার পরীক্ষা, পুরসভার ‘মেয়র্স গেট’ দিয়ে শুধুমাত্র ভিআইপি, পুর প্রতিনিধি, উচ্চপদস্থ কর্তাদের প্রবেশাধিকার, বেআইনি প্রবেশে সতর্ক থাকা-সহ একগুচ্ছ নিয়মের কথা বলা হয়েছে। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম শনিবার অবশ্য বলেছেন, ‘‘সবার পরিষেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা তা দিতে বাধ্য। কিন্তু অনেকেই দ্রুত পরিষেবা পেতে পুরসভার কাউকে ধরে নিচ্ছেন। সেই জন্যই বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়েছে।’’ যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের বক্তব্য, আসলে ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়! সে কারণেই ২০১৭ ও ২০১৯ সালে পুরভবনে প্রবেশে কড়াকড়ি করার পরেও ফের একই বিষয়ে নির্দেশিকা জারির প্রয়োজন পড়েছে।

পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই পুর কমিশনারের জারি করা ২৯ নম্বর নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, পুরকর্মী-আধিকারিকদের নাম, পদ, এমপ্লয়ি-আইডি, ঠিকানা-সহ পরিচয়পত্র দেওয়া হলেও তা তাঁরা গলায় ঝুলিয়ে রাখেন না। অথচ প্রত্যেক কর্মচারীর জন্য পরিচয়পত্র তৈরি করতে পুরসভার যথেষ্ট খরচ হয়। ফলে নিজস্ব পরিচয়ের প্রমাণস্বরূপ ওই পরিচয়পত্র নিজের সঙ্গে রাখাটাই যথেষ্ট নয়, তার প্রদর্শনও বাঞ্ছনীয়। ওই নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছিল, প্রতিদিন অগুনতি সাধারণ মানুষ পুর পরিষেবা সংক্রান্ত কাজে কেন্দ্রীয় পুরভবন এবং পুরসভার অন্য অফিসগুলিতে যান। এই পরিস্থিতিতে কে সাধারণ মানুষ আর কে পুরসভার কর্মী, পরিচয়পত্র না থাকলে তা আলাদা করে চিহ্নিত করাটা মুশকিল হয়ে যায়। যা পুরসভার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি ‘চ্যালেঞ্জ’ হতে পারে!

পুরসভার তথ্য বলছে, বয়ানে কিছুটা বদল করে একই কড়াকড়ির পুনরাবৃত্তি হয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই বছরের ৫ মার্চ পুর কমিশনারের জারি করা ১৪৪ নম্বর নির্দেশিকায় একই ভাবে আধিকারিক, কর্মীদের (স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক) জন্য পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এ-ও বলা হয়, বেআইনি প্রবেশাধিকার ও দালালদের পুরভবনে ঢোকা আটকাতে সেখানে আসা প্রত্যেককে একটি ‘ভিজ়িটর্স স্লিপ’ দেওয়া হবে। সেখানে আগত ব্যক্তি কোন আধিকারিকের সঙ্গে কী কারণে দেখা করতে যাচ্ছেন, তা সময়, তারিখ-সহ উল্লেখ করতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রবেশপথে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী সংশ্লিষ্ট আধিকারিক বা কর্মীকে ফোন করে জেনে নেবেন, তিনি আগত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করবেন কি না। যদি কোনও ব্যক্তির কাছে পুরসভার বৈধ ‘ভিজ়িটর্স স্লিপ’ না থাকে, তা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রক্ষী আটকাবেন।

কিন্তু শুক্রবারের নির্দেশিকা জারির ঘটনাতেই প্রমাণ হচ্ছে যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সব নিয়ম-বিধি ধুয়েমুছে গিয়েছে। তাই প্রয়োজন পড়েছে পুরনো মোড়কে ফের এক নতুন নির্দেশিকার। পুর মহলের একাংশে এ-ও রসিকতা শুরু হয়েছে যে— পুর কর্তৃপক্ষ প্রমাণ করিলেন, অতীতের নির্দেশিকায় কাজ না হওয়ার সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলিতেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Fraud Debanjan Deb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE