Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ভুল করেছি, স্বামীকে খুন করে আক্ষেপ তরুণীর

বেলুড়ের নিস্কো হাউজিং চত্বরে অগ্নিদগ্ধ যুবক আশুতোষ মালির দেহ উদ্ধারের পরে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁর স্ত্রী কুমকুমকে। খুনে সাহায্য করার অভিযোগে ধরা পড়ে কুমকুমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুমন কুমার।

কুমকুম মালি

কুমকুম মালি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০০:০৯
Share: Save:

নিজের হাতে স্বামীকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পরেও কোনও অনুশোচনা ছিল না স্ত্রীর চোখে-মুখে। জেরায় খুনের কথা স্বীকার করার সময়েও তার চোয়াল ছিল শক্ত। যা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন তদন্তকারীরাও। অবশেষে নিজের ভুল বুঝে কান্নায় ভেঙে পড়েছে ওই তরুণী।

বেলুড়ের নিস্কো হাউজিং চত্বরে অগ্নিদগ্ধ যুবক আশুতোষ মালির দেহ উদ্ধারের পরে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁর স্ত্রী কুমকুমকে। খুনে সাহায্য করার অভিযোগে ধরা পড়ে কুমকুমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুমন কুমার। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথম দিকে জেরায় সুমন বারবার কান্নায় ভেঙে পড়লেও কুমকুমের মধ্যে অনুশোচনার লেশমাত্র দেখা যেত না। কিন্তু পরে পুলিশি জেরার মুখে কুমকুম স্বীকার করেছে যে, খুন করাটা তার ভুল হয়েছিল। তখন অবশ্য কান্নায় ভেঙে পড়েছে সে। ২৭ বছরের ওই তরুণী তদন্তকারীদের জানিয়েছে, সুমনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে পারার পর থেকেই আশুতোষ তাকে প্রচণ্ড মারধর করতেন। তা সহ্য করতে না পেরেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল সে। ওই তরুণী পুলিশকে বলেছে, স্বামীকে খুন না করে বাচ্চাদের নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে গেলেই ভাল হত।

গত ১৭ মার্চ সকালে উদ্ধার হয়েছিল আশুতোষের দেহ। পরের দিন সন্ধ্যায় প্রথমে গ্রেফতার হয়েছিল কুমকুম। পরে হাওড়া স্টেশনের বাইরে থেকে পাকড়াও করা হয় দিল্লির বাসিন্দা সুমনকে। তদন্তে জানা যায়, প্রথমে বিষ খাইয়ে, তার পরে ছুরি দিয়ে বুকে আঘাত করে আশুতোষকে খুন করেছিল কুমকুম। আর সেই দেহ লোপাট করতেই সুমন ও তার বন্ধু লালু সাহায্য করেছিল তাকে।

মৃতদেহ বস্তায় ভরে বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে আবর্জনার স্তূপে নিয়ে ফেলেছিল ওই দুই যুবকই। এর পরে কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল দেহ।

পুলিশকে সুমন জানিয়েছে, দিল্লিতে তার একটি চাউমিনের দোকান রয়েছে। কুমকুমের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাই ওই তরুণীর কথা সে ফেলতে পারেনি। খুনে সাহায্য করতে চলে এসেছিল কলকাতায়। সুমন আরও জানিয়েছে, কুমকুম তাকে বলেছিল, ‘আশুতোষ মরে গেলে আমি বাচ্চাদের নিয়ে থাকব। খুনটা আমিই করব। তুমি শুধু দেহটা লোপাট করতে সাহায্য করো। তার পরে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়ো।’ মাসখানেক পরে সুমনের বিয়ের তারিখও ঠিক হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তদন্তে নেমে পুলিশ সেই সাইকেলটিও উদ্ধার করেছে, যাতে চাপিয়ে আশুতোষের দেহ ওই আবর্জনার স্তূপ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল সুমন ও লালু। তবে এখনও সন্ধান মেলেনি লালুর। উদ্ধার হয়নি খুনে ব্যবহৃত ছুরি ও আশুতোষের মোবাইলটিও। কুমকুমের দাবি, সেগুলি রয়েছে লালুর কাছেই। তাই ছুরি ও মোবাইলের সঙ্গে লালুরও খোঁজ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।

বেলুড়ের ওই দগ্ধ দেহকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল জটিলতাও। পুলিশ জানায়, আর একটি পরিবার দাবি করেছিল, ওই দেহ তাদের নিখোঁজ ছেলের। ডিএনএ পরীক্ষারও দাবি ওঠে। কিন্তু আশুতোষের

খুনিরা যেখানে খুনের কথা কবুল করে দেহ ফেলার জায়গাও দেখিয়ে দিয়েছে, সেখানে দেহটি যে তাঁরই, সে বিষয়ে পুলিশ মোটামুটি নিঃসংশয় ছিল। তবে পুলিশ জানায়, পোড়া দেহটি ভাল ভাবে দেখার পরে ওই পরিবার অবশ্য জানিয়েছে, সেটি তাদের ছেলের নয়। মঙ্গলবার আশুতোষের বাবার হাতে দেহটি তুলে দিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE