Advertisement
E-Paper

উনিশের শহরে কি খোলা হাওয়া পাবেন যুগলেরা

প্রগতিশীলতার সেই মুখই খানিকটা ধাক্কা খেয়েছিল প্রকাশ্যে আলিঙ্গন করার ‘অপরাধে’ দমদম মেট্রো স্টেশনে এক যুগলকে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনায়। সাম্প্রতিক অতীতে এমন ঘটনা আর না ঘটলেও তা নাড়িয়ে দিয়েছিল তরুণ সমাজকে।

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৮
 দাদাগিরি: দমদম মেট্রো স্টেশনে যুগলকে গণপিটুনি। ফাইল চিত্র

দাদাগিরি: দমদম মেট্রো স্টেশনে যুগলকে গণপিটুনি। ফাইল চিত্র

ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদ্‌যাপন, হাত ধরে পাশাপাশি বসার মতো ‘অপসংস্কৃতির’ বিরুদ্ধে স্ব-নিযুক্ত অভিভাবকদের দাদাগিরির বহু ঘটনা দেখেছে অন্য শহর। তবে শিক্ষা ও সহিষ্ণুতায় এগিয়ে থাকার ‘তকমা’ নিয়ে গর্ববোধ করে কলকাতা।

প্রগতিশীলতার সেই মুখই খানিকটা ধাক্কা খেয়েছিল প্রকাশ্যে আলিঙ্গন করার ‘অপরাধে’ দমদম মেট্রো স্টেশনে এক যুগলকে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনায়। সাম্প্রতিক অতীতে এমন ঘটনা আর না ঘটলেও তা নাড়িয়ে দিয়েছিল তরুণ সমাজকে। তরুণদের অনেকেরই মত, যুগলদের প্রতি সহিষ্ণু নয় কলকাতাও। তা তাঁরা অসমকামী হোন, কিংবা সমকামী। পার্কে পাশাপাশি মহিলা-পুরুষ বসলে বেজে ওঠে রক্ষীর বাঁশি। উড়ে আসে কুরুচিকর মন্তব্য। আর সমলিঙ্গের দু’টি মানুষ ঘনিষ্ঠ হলে তো কথাই নেই। জোটে বিদ্রুপ।

আঠেরো পেরিয়ে পা পড়ল উনিশে। একবিংশ শতাব্দী তো প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে। এই শহর কি তবু প্রাপ্তমনস্ক হতে পারল না? দমদমের ঘটনা প্রসঙ্গে সমাজতত্ত্বের শিক্ষক প্রশান্ত রায় বলেন, ‘‘তরুণ প্রজন্মের কিছু বয়স্কদের বেমানান লাগতেই পারে। এ সব ক্ষেত্রে বিষয়টি দেখলাম, চোখে পড়ল, কিন্তু মন নিয়োগ করলাম না, সেটাই হতে পারত প্রাপ্তমনস্কতার লক্ষণ।’’

দ্রুত সামাজিক-রাজনৈতিক পরির্বতনের জেরেই দুই প্রজন্মের মূল্যবোধের সংঘাত ঘটছে বলে মনে করেন মনোবিদ উশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘তরুণদের মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে বলে বিশ্বাস করেন বেশির ভাগ প্রবীণ। আবার তরুণেরা ভাবছেন, বয়স্করা অতি রক্ষণশীল।’’ তাঁর মতে, দমদমের মতো ঘটনাকে যদি বার্তা হিসেবে নেয় দুই প্রজন্মই, তা হলে কিছু ইতিবাচক শেখার সুযোগ রয়েছে। পরির্বতনের প্রসঙ্গটি তুলছেন প্রশান্ত রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘নীতি-ন্যায্যতা পাল্টে যাচ্ছে সব সময়ে। বিষয়গুলি স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া শুরু হলেই অসহিষ্ণুতা কমবে। তবে মান্যতা মেলার প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ।’’

যুগলদের নিয়ে নীতি-পুলিশির কারণ কী? নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, বেশির ভাগটাই আসে বঞ্চনা বা ঈর্ষার জায়গা থেকে। কোনও বিষয় সরাসরি আমাকে আঘাত না করলে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাব কেন? শুধু তরুণ নয়, মধ্যবয়সি কোনও নারী-পুরুষকে নিয়মিত একসঙ্গে দেখলেও তাঁদের নিয়ে চর্চা হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, শহরে প্রকাশ্যে কথা বলার পরিসরটুকুও কেউ পা‌ন না। সেটা তৈরি হলে এবং তা ব্যবহারের সুযোগ পেলে প্রাপ্তমনস্কতার জায়গাটাও তৈরি হয়।

এ শহর যে যুগলদের প্রতি অসহিষ্ণু, তেমনটা অবশ্য মনে করেন না সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বহু যুগলকে ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখতে পাই। তাঁদের দেখলেই আক্রমণ হচ্ছে, এমন ভাবা ঠিক নয়। দমদমের বিষয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’’ শীর্ষেন্দুবাবুর মত, কেউ জনসমক্ষে কেমন আচরণ করবেন সেটা প্রাপ্তবয়স্কতার নয়, নৈতিকতা ও শালীনতার ব্যাপার। বিদেশে কিছু আচরণ গ্রহণযোগ্য মানেই এখানেও তেমন হবে, তা নয়। গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে সময় লাগে। তিনি আরও বলেন, ‘‘মারধর করা অন্যায়, বেআইনিও। সে ক্ষেত্রে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নিক।’’

সম্প্রতি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ‘সমকামী’ মনে হওয়ায় চড় মারার অভিযোগ উঠেছিল এক পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে। ওই পুলিশকর্মী পরে ক্ষমা চান। রক্ষকের এই আচরণে সমকামীদের হেনস্থার আশঙ্কা কি আরও বাড়িয়ে দেয় না? এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তারা জানাচ্ছেন, বাহিনী এই ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ একেবারেই সমর্থন করে না। তুলনায় তরুণ পুলিশকর্মীরা এ নিয়ে যথেষ্ট সংবেদনশীল। তবে এ বিষয়ে সমাজের সব স্তরে সচেতনতা এখনও আসেনি, তারই প্রতিফলন ঘটে কোনও কোনও ঘটনায়। এমন অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: নতুন বছরে ঐতিহ্যের সম্মান দিক শহর!

চার বছর হল অগ্নিসাক্ষী রেখে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন এ শহরের সমকামী যুগল সুচন্দ্রা দাস ও শ্রী মুখোপাধ্যায়। তাঁদের আশা, নতুন বছরে শহর উদার ও সহনশীল হবে। সম্মান দিতে শিখবে অন্যের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে। ছকভাঙা মানেই যে নেতিবাচক, এমন ভাবনাও বদলাবে বলে আশা দুই কন্যার।

New Year Kolkata Tolerance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy