Advertisement
E-Paper

পাশে ‘স্যারেরা’, প্রযুক্তির হাত ধরে ওদের স্বপ্ন-উড়ান

বইয়ের পাতার জ্ঞান স্কুলে মিলতই। কিন্তু বাঁকুড়ার দ্বাদশ শ্রেণির কোয়েল টুডু এখন বইয়ের পাশাপাশি ইন্টারনেট ঘেঁটে ভারতের উপজাতি-সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখছে। অঙ্ক না মিললে চটপট ভিডিও চ্যাটে ভুল শুধরে নিচ্ছে অষ্টম শ্রেণির গোবিন্দ মুর্মু। সৌজন্যে রাজ্যের এক দল ইঞ্জিনিয়ার।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৪

বইয়ের পাতার জ্ঞান স্কুলে মিলতই। কিন্তু বাঁকুড়ার দ্বাদশ শ্রেণির কোয়েল টুডু এখন বইয়ের পাশাপাশি ইন্টারনেট ঘেঁটে ভারতের উপজাতি-সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখছে। অঙ্ক না মিললে চটপট ভিডিও চ্যাটে ভুল শুধরে নিচ্ছে অষ্টম শ্রেণির গোবিন্দ মুর্মু। সৌজন্যে রাজ্যের এক দল ইঞ্জিনিয়ার।

তাঁরা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সমাজকল্যাণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নয়। কিন্তু তাঁদের চেষ্টায় এ রাজ্যের কয়েকশো আদিবাসী পড়ুয়া ই-লার্নিংয়ের সুবিধা পাচ্ছে। প্রথাগত শিক্ষার বাইরে, প্রযুক্তিগত ভাবে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষিত করতে এগিয়ে এসেছেন ওই ইঞ্জিনিয়ারেরা। ল্যাপটপে কী ভাবে ভিডিও কনফারেন্স করতে হয়, ইন্টারনেটে কী করে দরকারি বই খুঁজতে হয়, ডাউনলোড করতে হয়, কম্পিউটার চালানোর খুঁটিনাটি শেখানোর পাশাপাশি পড়ুয়াদের বিজ্ঞান, ইংরেজি ও অঙ্ক শেখাচ্ছেন তাঁরা।

বছর চারেক ধরে তাঁরা বাঁকুড়ার শুশুনিয়ায় এই কাজ করছেন। এর পরে তাঁরা উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের নিয়েও কাজ করতে চান।

হঠাৎ আদিবাসী পড়ুয়াদের প্রথাগত শিক্ষার বাইরে প্রযুক্তিগত দিক থেকে স্বাবলম্বী করার ভাবনা কেন? কাজের মূল উদ্যোক্তা রাজীব দাসশর্মা কলকাতার একটি অনাথ আশ্রমের শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে যেতেন। সেখানেই তাঁর আলাপ হয় শুশুনিয়ার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বাবুনাথ টুডুর সঙ্গে। তাঁর আমন্ত্রণে সাঁওতাল গ্রাম দেখতে যান রাজীববাবু। সেখানে তাদের অসুবিধা দেখে তিনি ঠিক করেন, প্রযুক্তিগত ভাবে এদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করলে কেমন হয়? বন্ধু ও পরিচিতদের প্রথমে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান রাজীববাবু। ধীরে ধীরে ‘শিক্ষক’-এর সংখ্যা বাড়ে। এখন তা দাঁড়িয়েছে ১৫-তে।

এই ‘শিক্ষক’-দের বেশিরভাগই কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে থাকেন। কেউ থাকেন বেঙ্গালুরু, কেউ আবার দিল্লি।

প্রত্যন্ত গ্রামে আদিবাসী পড়ুয়াদের এঁরা পড়ান কী ভাবে? রাজীববাবুরা জানান, ভৌগোলিক দূরত্বকে সরিয়ে দিয়েছে প্রযুক্তি। যেখানে তাঁরা কাজ করেন, সেখানে স্থানীয় মানুষও তাঁদের সাহায্য করেন। যেমন, শুশুনিয়ায় তাঁদের সাহায্য করছেন বাবুনাথবাবু ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী। স্কুলপড়ুয়াদের নির্দিষ্ট সময়ে এক জায়গায় জড়ো করেন তাঁরা। রুটিন মাফিক ক্লাস চলে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে। ইঞ্জিনিয়ারের দল পড়ুয়াদের জন্য একটি প্রোজেক্টর দিয়েছে। যা থাকে টুডু দম্পতির কাছে। পড়ুয়াদের ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেন এই কারিগরেরা। এই কাজের পোশাকি নাম তাঁরা দিয়েছেন ‘এডুকেট ওয়ান কিড’।

স্কুলের বাইরে নতুন শিক্ষকদের পাশে পেয়ে খুশি পড়ুয়ারাও। যষ্ঠ শ্রেণির সাগেন মুর্মু বড় হয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। তার এই স্বপ্নপূরণে পাশে আছেন ইঞ্জিনিয়ার স্যারেরা। সাগেন বলে, ‘‘রাজীব স্যার বলেছে, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে শুধু ল্যাপটপ চালানো শিখলেই হবে না। অঙ্ক, ইংরেজিটাও শিখতে হবে। স্যার সপ্তাহে দু’দিন এই ল্যাপটপে আমায় অঙ্ক আর ইংরেজি শেখায়।’’ অষ্টম শ্রেণির রামলাল হেমব্রমের আগ্রহ আবার ইংরেজি সাহিত্যে। সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলে পড়লেও ইংরেজি নিয়ে সে পড়তে চায়। সেই স্বপ্ন বাস্তব করতে এখন থেকেই রামলালকে তৈরি করছেন ওই ‘শিক্ষকেরা’। ল্যাপটপে ব্যাকরণ থেকে সাহিত্যের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরছেন তাঁরা। রামলাল বলে, ‘‘স্কুলের পরে কোনও বিষয় পড়তে পড়তে আটকে গেলে মুশকিলে পড়তাম। এখন স্যারেরা আছেন। আর কোনও সমস্যা হয় না।’’

তবে ইঞ্জিনিয়ারের দল বলছেন, শুধু ইঞ্জিনিয়ারই নয়। শিক্ষক, গায়ক, ইতিহাসবিদ, চিত্রশিল্পী— সবাইকে পাশে চাই। শুধু প্রযুক্তিতে নয়, সার্বিক ভাবে ওরা এগিয়ে যাক।

Tribal Students E Learning
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy