রবিবার রেখা বসাককে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আনন্দপুরে। নিজস্ব চিত্র
দুপুর বারোটা নাগাদ মুড়ি-চিনি নিয়ে কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুললেন বছর পঁয়তাল্লিশের মহিলা। ফিসফিস করে বললেন, ‘বোন সকাল থেকে কথা বলছে না। নড়াচড়াও বন্ধ!’
এ কথা শুনে আবাসিক সমিতিতে খবর দেন সীমা তিওয়ারি নামে ওই প্রতিবেশী। তাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আনন্দপুর থানার পুলিশ রবিবার দুপুর দুটো নাগাদ পৌঁছয় ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ওই সরকারি আবাসনে। সীমাদেবীকে সঙ্গে নিয়েই পুলিশ চারতলার ফ্ল্যাটে যায়। দেখা যায়, শোয়ার ঘরের খাটে পড়ে রয়েছে নিথর দেহ। সেই ঘরের এক পাশে বসেই কয়েক ঘণ্টা আগে দিয়ে যাওয়া মুড়ি খাচ্ছেন মৃতার দিদি।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম পুতুল বসাক (৩৮)। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গিয়েছেন পুতুল।
শনিবার গভীর রাতে বা রবিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে। তাঁর দিদি রেখা বসাক আপাতত পুলিশের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: শহরে ‘ম্যাজিক মাশরুম’-সহ ধৃত তিন যুবক
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রেখা, পুতুল ও তাঁদের আরও এক বোন বাবার সঙ্গে ওই আবাসনে থাকতেন। তাঁদের বাবা সরকারি কর্মচারি ছিলেন। বছর পনেরো আগে বাবা মারা যান তিনি। বছর বাইশ ধরে ওই আবাসনে থাকলেও কখনওই প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলতেন না ওঁরা। নিজেদের মতো থাকতেই পছন্দ করতেন। বছর দুই আগে বাড়ির ছোট বোন মারা যান। পুলিশি তদন্তে জানা যায়, অপুষ্টিজনিত কারণেই এই মৃত্যু। এর পরে ওই সরকারি আবাসন কমিটির তরফে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কমিটির অভিযোগ, পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। তার পরে কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, প্রতিবেশীরাই দুই বোনকে দেখভালের দায়িত্ব নেবেন। ফি দিন ওই বিল্ডিংয়ের তিনতলার দু’টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা খাবার পৌঁছে দিতেন।
রেখা, পুতুলের প্রতিবেশী সীমাদেবী এ দিন জানান, ছোটবোন মারা যাওয়ার পরে দুই বোনের মধ্যে ঝগড়া, মারামারি আরও বেড়েছিল। তাঁদের ঘর আরও অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকত। দুর্গন্ধ এ়ড়াতে অধিকাংশ দিন বাইরে থেকে খাবার দিয়েই চলে যেতেন তিনি। কয়েক দিন ধরে পুতুল খাবার নিতে বেরোতেন না। রেখাই খাবার নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতেন। তাঁর কথায়, ‘‘বুঝতে পারতাম দু’জনের মানসিক সমস্যা রয়েছে। খাবার ঠিক মতো ভাগ করতে পারবে না। তাই দু’জনকে আলাদা করে খেতে দিতাম। কিন্তু কয়েক দিন পুতুলকে দেখতে পাইনি। যখন দেখলাম মনে হল কঙ্কাল শুয়ে রয়েছে।’’
এ দিন আবাসন কমিটির তরফে অভিজিৎ দত্ত জানান, ওঁদের দেখভালের ব্যবস্থা করার জন্য বারবার পুলিশকে জানানো হয়েছে। গত ১৪ জানুয়ারি লিখিত ভাবে আনন্দপুর থানায় জানানো হয়। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা করেনি। এ দিন পুলিশ রেখাদেবীকে নিয়ে যায়। অভিজিৎবাবু জানান, বছর দুয়েক আগে বসাক পরিবারের ছোট মেয়ে মারা যাওয়ার পরেও দুই বোনকে পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোনও রকম চিকিৎসা করানো হয়নি। কয়েক দিন পরে বাড়িতে ফেরত দিয়ে যায়। আবাসিক সমিতির আশঙ্কা, এ বারও একই ঘটনা ঘটবে।
লালবাজারের এক কর্তা অবশ্য জানান, বছর দুয়েক আগে ছোট বোন মারা যাওয়ার পরে ওঁদের মানসিক চিকিৎসার জন্য একটি বেসরকারি কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ওঁরা আপত্তি করেন। এমনকী আবাসিকদের একাংশও আপত্তি জানান। তবে রেখাদেবী এখন পুলিশের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। আবাসন সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তাঁর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy