Advertisement
E-Paper

বধূর ঝুলন্ত দেহ, গ্রেফতার স্বামী ও ভাশুর 

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম অঙ্কিতা সাউ (২৪)। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে কাশীপুর থানা এলাকার কাশীপুর রোডে, অঙ্কিতার শ্বশুরবাড়িতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০১:৫৪
অঙ্কিতা সাউ (বাঁ দিকে) এবং রাজেশ সাউ।

অঙ্কিতা সাউ (বাঁ দিকে) এবং রাজেশ সাউ।

ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছে, তাই খাওয়া হয়নি। মেয়ের মুখে সে কথা শুনে মা পরামর্শ দিয়েছিলেন, পিৎজা বানিয়ে খেয়ে নিতে। খাওয়া হয়েছে কি না, তা জানতে এর পরে একাধিক বার ফোনও করেছিলেন মা। কিন্তু মেয়ের ফোন বন্ধ থাকায় আর কথা হয়নি। পরদিন সকালে জামাই ফোন করে প্রতিবেশীকে জানাল, সেই মেয়ে অসুস্থ। সকলে যেন দ্রুত হাসপাতালে চলে আসেন। পরিবারের সদস্যেরা আর দেরি করেননি। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছে তাঁরা দেখলেন, মৃত্যু হয়েছে মেয়ের। জামাই-সহ শ্বশুরবাড়ির সকলে উধাও।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম অঙ্কিতা সাউ (২৪)। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে কাশীপুর থানা এলাকার কাশীপুর রোডে, অঙ্কিতার শ্বশুরবাড়িতে। পুলিশ জেনেছে, ওই বাড়ি থেকেই ঝুলন্ত অবস্থায় অঙ্কিতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির ‌অন্য সদস্যেরা। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রাতেই অঙ্কিতার বাবা লক্ষ্মণ সাউয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ পণের দাবিতে মৃত্যু ঘটানো এবং বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। রবিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে অঙ্কিতার স্বামী রাজেশ সাউ এবং তার দাদা দিলীপ সাউকে। শিয়ালদহ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি অরূপ চক্রবর্তী জানান, অঙ্কিতার স্বামী, ভাশুর এবং জায়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সোমবার ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে অঙ্কিতার সুরতহাল করা হয়। একই সঙ্গে ময়না-তদন্তের ভিডিয়োও করে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, স্বামীর সঙ্গে তাঁর জায়ের অবৈধ সম্পর্কের কারণে টানাপড়েনের জেরেই অঙ্কিতা আত্মঘাতী হয়েছেন। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, রাজেশের সঙ্গে গত বছর ১০ জুলাই বিয়ে হয় ডানকুনির বাসিন্দা অঙ্কিতার। রাজেশ কাশীপুর বিবিরবাগান এলাকায় আনাজ বিক্রি করে। সঙ্গে অটোও চালায় সে। কাশীপুরের বাড়িতে দোতলার ঘরে থাকতেন অঙ্কিতা এবং রাজেশ। নীচে রাজেশের দাদা-বৌদির সংসার। পুলিশ জেনেছে, ঘটনার দিন দোতলার ঘরের বাইরে ঝুলন্ত অবস্থায় অঙ্কিতার দেহ উদ্ধার করে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। পুলিশের কাছে অঙ্কিতার বাবার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পণের জন্য চাপ দেওয়া হত। সেই সঙ্গে চলত মানসিক অত্যাচার। অঙ্কিতার ভাই অঙ্কিত সোমবার অভিযোগ করেন, রাজেশের সঙ্গে তার বৌদির অবৈধ সম্পর্কের কথা জেনে ফেলেছিলেন অঙ্কিতা। একটি ভিডিয়ো ছিল তাঁর দিদির কাছে। ওই ভিডিয়ো মুছে ফেলার জন্য চাপ দিচ্ছিল রাজেশ এবং দিলীপ। অঙ্কিতের আরও দাবি, তাঁরা দিদির বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য কথা বলছিলেন। কিন্তু সে সবের আগেই এমনটা ঘটে গেল। অঙ্কিতার বাপেরবাড়ির প্রতিবেশী অনিতা প্রজাপতি বলেন, ‘‘অঙ্কিতা সব জেনে গিয়েছিল বলেই ওকে মেরে ফেলা হয়েছে। রবিবার সকালে আমাকে ফোন করে বলা হয়, অসুস্থ হয়ে পড়েছে অঙ্কিতা। এর পরে আর ফোন ধরেনি রাজেশ।’’

সোমবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অঙ্কিতার পরিজনেরা সেখানে ভিড় করে রয়েছেন। অঙ্কিতার এক আত্মীয় বলেন, ‘‘যে মেয়ে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলল ফোনে। সেই মেয়ে কী ভাবে আত্মহত্যা করে?’’ এ দিকে, সোমবারই এই ঘটনায় পুলিশ মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে বলে কাশীপুর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে মৃতার পরিবারর তরফে। একই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, তদন্তকারী এক অফিসার তাঁদের চড় মারার হুমকি দিয়েছেন। পুলিশ অবশ্য পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে জানিয়েছে, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Death Suicide Crime Arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy