Advertisement
E-Paper

রাতের থানায় মহিলা পুলিশ আনাতে ডাক যায় বাড়িতে

দেশ জুড়ে একাধিক গণধর্ষণের ঘটনার পরে রাতের কলকাতা কতটা নিরাপদ সেই প্রশ্নও উঠে গিয়েছে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২৭
অপর্যাপ্ত: শহরের অনেক থানাতেই রাতে থাকেন না কোনও মহিলা পুলিশকর্মী। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

অপর্যাপ্ত: শহরের অনেক থানাতেই রাতে থাকেন না কোনও মহিলা পুলিশকর্মী। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

রাতে শহরের প্রায় কোনও থানাতেই থাকেন না মহিলা পুলিশকর্মী। ফলে ওই সময়ে থানায় গেলে অভিযোগকারিণী কোনও মহিলা পুলিশকর্মীর সাহায্য পান না। ব্যতিক্রম হাতেগোনা কয়েকটি মহিলা থানা। অভিযোগ, বাকি সব থানার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে থানার কাছে বাড়ি আছে এমন মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারকে ডাকিয়ে আনেন বড়বাবুরা। নয়তো থানা থেকে ফোন যায়, পুলিশের ডিভিশন অব রিজার্ভ অফিসে (ডিআরও)।

দেশ জুড়ে একাধিক গণধর্ষণের ঘটনার পরে রাতের কলকাতা কতটা নিরাপদ সেই প্রশ্নও উঠে গিয়েছে। কলকাতার ভুক্তভোগীদের বড় অংশই অভিযোগ করছেন যে, রাতে থানায় গেলে কোনও মহিলা পুলিশকর্মীকে পাননি তাঁরা। অস্বস্তির কথা বলতে হয়েছে ওই অবস্থাতেই। কখনও আবার অভিযোগকারিণীর সঙ্গে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলে পুরুষ পুলিশকর্মী বলে দিয়েছেন, ‘‘দেখছেন একা আছি। কী করে যাব! সকালে আসুন।’’ এই প্রেক্ষিতে তাঁরা মডেল তথা অভিনেত্রী ঊষসী সেনগুপ্তের সঙ্গে ঘটা কয়েক মাস আগের এক্সাইড মোড়ে ঘটনাটির কথা তুলছেন। ঊষসী অভিযোগ করেছিলেন, জনা পনেরো যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে সেই রাতে তিনি নিকটবর্তী
ময়দান থানায় গেলে তাঁকে বলা হয়েছিল, ঘটনাস্থল ওই থানা এলাকায় পড়ে না। ঊষসীর অভিযোগ ছিল, পুলিশ তাঁকে বলে, ‘এত রাতে আপনার সঙ্গে কে যাবে?’

নারকেলডাঙার একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশও রাতে থানায় মহিলা পুলিশকর্মী কার্যত না থাকার কথা মেনে নিয়েছে। বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক মঙ্গলবার নারকেলডাঙা থানার ওসির ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মামলা শুরু করেননি ওসি। এ-ও বলেছেন, ‘‘ওই ওসিকে গুরুত্বহীন জায়গায় বদলি করা উচিত।’’ লালবাজারের এক কর্তা এ ব্যাপারে মঙ্গলবারই বলেন, ‘‘ওসির কিছু করার ছিল না। নির্যাতিতার বাবা যখন এসেছিলেন, তখন থানায় কোনও মহিলা অফিসার ছিলেন না। ওসি তাই অভিযোগ নথিবদ্ধ করতে তাঁদের উল্টোডাঙা মহিলা থানায় পাঠান।’’

গত কয়েক দিন শহরের একাধিক থানায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, সব ক্ষেত্রেই প্রায় একই অবস্থা। এমনকি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার জারি করা নয়া কার্যবিধি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) মেনে থানায় থাকে না পর্যাপ্ত বাহিনীও। ওসি বা অতিরিক্ত ওসি রাতে বেরিয়ে যাওয়ার পরে প্রায় সব থানাতেই কাজ সামলান এক জন ডিউটি অফিসার (সাব ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার)। তাঁকে সাহায্য করার জন্য থাকেন আরও এক জন। তবে তিনি কোন পদমর্যাদার হবেন, তার কোনও ঠিক নেই। কোনও রাতে সেই ভূমিকা পালন করেন অতিরিক্ত সাব ইনস্পেক্টর, কোনও রাতে আবার হোমগার্ড বা সিভিক ভলান্টিয়ার। প্রায়শই জরুরি ফোন ধরারও লোক থাকে না।

ইস্টার্ন সাবার্বান ডিভিশনের একটি থানায় রাতে গিয়ে দেখা গেল, টেবিল সামলাচ্ছেন এক জন অতিরিক্ত সাব ইনস্পেক্টর। তিনি বলেন, ‘‘বাইরে কয়েক জন টহল দিচ্ছেন। আরও কয়েক জন ব্যারাকে বিশ্রাম করছেন। দরকারে ডাক পড়লেই নেমে আসবেন।’’ কিন্তু মহিলা অফিসার..? থামিয়ে দিয়ে ওই পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘অফিসার? রাতে মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও কাউকে পাবেন না। ওঁদের কাছেই বাড়ি। দরকার পড়লে তাঁদের ডেকে নেওয়া হয়।’’ পূর্ব ডিভিশনের একটি থানায় আবার দেখা গেল, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বেরিয়ে গেলেন মহিলা অফিসার। কয়েক জন সিভিক মহিলা পুলিশও ডিউটিতে ইতি টেনে বাড়ির পথ ধরলেন। এর পরে কোনও মহিলা অভিযোগ করতে এলে? থানার বড়বাবু বললেন, ‘‘এমনিতেই লোক কম। এখনকার মতো কেউ একটা অভিযোগ লিখে নেবেন। আর খুব দরকার পড়লে তো মহিলা সিভিকরা কাছেই থাকেন।’’

জরুরি সময়ে বাড়ি থেকে ডাকিয়ে আনা হবে? তবু তাঁরা থানায় ডিউটিতে থাকবেন না? প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলেও কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাহিনীর সংখ্যা যে কম, তা নতুন করে বলার নয়। যতটুকু পরিকাঠামো আছে, তা দিয়েই কড়া হাতে কাজ চালানোর চেষ্টা করছেন বর্তমান পুলিশ কমিশনার। তিনি নিজে আচমকা থানা পরিদর্শনে গিয়েছেন একাধিক বার। অব্যবস্থা দেখলে যে ছাড়া হবে না, তা-ও তিনি বলে দিয়েছেন।’’

তবু রাতের গরহাজিরার চেনা ছবি পাল্টায় না কেন? কলকাতা পুলিশের সিপি বলেন, ‘‘বাহিনী পর্যাপ্ত রয়েছে। তবু বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

Women Kolkata Police Security
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy