Advertisement
১১ মে ২০২৪

নির্যাতিতাদের ভরসা বাড়াচ্ছে মহিলা থানা

সুজেট জর্ডন যদি এঁদের দু’জনকে পেতেন! অভিযোগ লেখাতে থানায় এসে কিছু বলার আগেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেছিলেন তরুণী। নিজের দুরবস্থার কথা শোনাবেন কী! ওসি তখন তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০০:২১
Share: Save:

সুজেট জর্ডন যদি এঁদের দু’জনকে পেতেন!

অভিযোগ লেখাতে থানায় এসে কিছু বলার আগেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেছিলেন তরুণী। নিজের দুরবস্থার কথা শোনাবেন কী! ওসি তখন তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। সঙ্গে এক জন সাব-ইনস্পেক্টর। তাঁরা ওই মহিলার গায়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, ‘‘আগে শান্ত হও। চা-জল খাও। তার পরে সব শুনব। ভয় নেই, আমরা তোমার দিদির মতো। আমরা তো আছি!’’ এই ছবি পাটুলির থানার।

পার্ক স্ট্রিটের গণধর্ষিতা সুজেট জর্ডনের বক্তব্য ছিল, তিনি যখন অভিযোগ জানাতে থানায় যান, তখন দু’জন সাব-ইনস্পেক্টর তাঁর কথা শুনে নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টা করেছিলেন। ঘটনাচক্রে ওই দু’জনই ছিলেন পুরুষ। কিন্তু পাটুলির ওই থানায় ওসি এবং সাব-ইনস্পেক্টর দু’জনই মহিলা। কারণ, এটি মহিলা থানা। অফিসার, কনস্টেবল সবাই মহিলা। কোনও দ্বিধা, সঙ্কোচ না করে এর পর অভিযোগ জানাতে আসা ওই তরুণী সব কিছু খুলে বলেন। জানান, কী ভাবে এক ব্যক্তি বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনের পর দিন তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছেন। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘আপনজনের মতো ভেবে ওই তরুণী আমাদের সে দিন সব কিছু জানিয়েছেন। এতে তদন্তে সুবিধা হচ্ছে।’’

আর এই ধরনের সুবিধের জন্যই তৈরি হয়েছে কলকাতা পুলিশের চারটি মহিলা থানা। পাটুলি, আমহার্স্ট স্ট্রিট, ওয়াটগঞ্জ ও টালিগঞ্জে। যেগুলির উদ্বোধন হয় ২৭ জানুয়ারি।

এর মধ্যে প্রথম অভিযোগ দায়ের হয় আমহার্স্ট স্ট্রিট মহিলা থানায়। ৩০ জানুয়ারি। এক মহিলা নিজেই থানায় গিয়ে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ জানান। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা সূত্রের খবর, দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।

ওয়াটগঞ্জ মহিলা থানায় বধূ নির্যাতনের দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। নির্যাতিতারা অভিযোগ করেছেন, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অন্য কয়েক জনের বিরুদ্ধে। পুলিশকে দু’জনেই বিশদে জানান, বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই টাকা দাবি করে শ্বশুরবাড়িতে তাঁদের উপর কী ধরনের শারীরিক অত্যাচার করা হত।

লালবাজার জানাচ্ছে, মহিলা থানা হওয়ায় বিভিন্ন অপরাধের শিকার মহিলারা যেমন ঘটনা গোপন না করে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে আগ্রহী হচ্ছেন, তেমনই মহিলা পুলিশদের কাছে বিস্তারিত ভাবে তাঁরা সব কিছু জানাতে স্বচ্ছন্দ হচ্ছেন বলে সুবিধা হচ্ছে তদন্তেও।

থানায় সুজেট জর্ডনের মাথায় এমন ভরসার হাত কেউ রাখেনি। সুজেট আজ নেই।

তবে আশার কথা, তাঁর মতো আর কাউকে যাতে ওই অবস্থায় পড়তে না হয়, সেটাই নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে শহরের চারটি মহিলা থানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police station women victim crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE