Advertisement
E-Paper

এক দিন নয়, রোজই তাঁদের নারী দিবস

যেমন টিকিয়াপাড়ার বছর একুশের তরুণী, কহকশাঁ পরভিন। তাঁর উত্তরণের গল্প যাঁরাই শোনেন, বিস্মিত হয়ে বলেন ‘কী লড়াইটাই না করেছ এত দিন ধরে!’ কিন্তু তিনি বলছেন, ‘‘লড়াই তো এখনও করছি, রোজ করি, যত এগোব তত করব।’’

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০২:৪৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিশাল একটা জলের ফোঁটা। তবে জল নয়, শব্দ দিয়ে তৈরি। পৃথক কতগুলো শব্দ জুড়ে জলের ফোঁটার আকৃতি দেওয়া হয়েছে। শব্দগুলো আলাদা হলেও, যোগাযোগের দিক থেকে খুব বিচ্ছিন্ন নয়। ‘সোচ’, ‘ক্যারেক্টার’, ‘পহেচান’, ‘সেফটি’, ‘সমাজ’, ‘ফ্রিডম’— ইত্যাদি। বস্তুত, যে শব্দগুলোর সঙ্গে রোজ মুখোমুখি হতে হয় মেয়েদের, সেই শব্দগুলোই তৈরি করেছে এই শিল্প, যার পোশাকি নাম ‘ইনস্টলেশন আর্ট’। আর যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁরা এই শব্দগুলোর শুধু মুখোমুখিই হননি, রীতিমতো লড়াই করেছেন। নারী দিবস উপলক্ষে এই ইনস্টলেশন আর্টের মাধ্যমেই লড়াইয়ের বার্তা রাখলেন তাঁরা।

যেমন টিকিয়াপাড়ার বছর একুশের তরুণী, কহকশাঁ পরভিন। তাঁর উত্তরণের গল্প যাঁরাই শোনেন, বিস্মিত হয়ে বলেন ‘কী লড়াইটাই না করেছ এত দিন ধরে!’ কিন্তু তিনি বলছেন, ‘‘লড়াই তো এখনও করছি, রোজ করি, যত এগোব তত করব।’’

‘‘বাবা ছাগলের খাওয়ার পাতা বিক্রি করতেন টিকিয়াপাড়ার বাজারে। পাঁচ সদস্যের সংসারে খাবার জোটানোই মুশকিল ছিল। দাঁতে দাঁত চেপে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলাম বাড়ির অমতে, সায়েন্স নিয়েই। তার পর সব অন্ধকার।’’— বলছিলেন বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ইলেক্ট্রিক্যালের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।

অবশ্যম্ভাবী বিয়ে থেকে বাঁচতে যখন হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তিনি, তখনই খড়কুটোর মতো মিলেছিল কেয়াতলার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যোগাযোগ। মেধাবী ও গরিব ছাত্রীদের পড়ার দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। মেধা কম ছিল না কহকশাঁর। তাই রূপকথা তৈরি হতে সময় লাগেনি। ছোটবেলা থেকে ‘আর্টস প়ড়ো, বিয়ে করে নাও’ শুনে তিতিবিরক্ত হয়ে ওঠা তরুণী আজ চোখে চোখ রেখে বলছেন, ‘‘আমি ইঞ্জিনিয়ার হব। গবেষণা করব।’’

তবে লড়াই ফুরোয়নি। এখন লড়াই পুরুষবন্ধুর সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতে বসলেই বাবার উপদেশের সঙ্গে— ‘মেয়েদের জীবন কাপড়ের মতো, এক বার দাগ লেগে গেলে ওঠে না।’ কলেজ থেকে বাড়ি ফিরতে একটু রাত হলেই আত্মীয় পড়শিদের কৌতূহলের সঙ্গে। ‘‘কিন্তু আমি তো কাপড় নই, আমি মানুষ। দাগ লাগলেই হল!’’— কহকশাঁর আশা, এক দিন এটা বাবাকেও বুঝিয়ে দিতে পারবেন।

মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারের ঋতুপর্ণা কুণ্ডু সদ্য চাকরি পেয়েছেন রাজ্য সরকারের ‘ওয়াটার রিসোর্স ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ দফতরের জুনিয়র সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। মাংস কেটে দিন গুজরান করা ঋতুপর্ণার বাবা স্কুলের গণ্ডি পেরোননি। তুখোড় ছাত্রী ঋতুপর্ণার কলেজ যাওয়া যখন টাকার অভাবে প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল, তখন এগিয়ে এসেছিল ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনই।

এই স্বপ্ন সত্যি করা মেয়েরাই সাজিয়েছেন রোজকার জীবনের লড়াইয়ে গেঁথে যাওয়া শব্দগুলো। নারী দিবস উপলক্ষে সেই ইনস্টলেশন রাখা রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মলে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাহানা ভৌমিক বলছিলেন, ‘‘ওরা না জেনেই অনেকটা লড়াই করে ফেলেছে। পরে আমরা হাত ধরেছি। সংগঠনের মূল কথা হল, ‘বিন্দুতে সিন্ধু’। আমাদের সাহায্যটা বিশাল কিছু নয়। ওরা যে নিজেরা বুঝতে পেরেছে, নিজের পায়ে দাঁডা়তেই হবে, সেটাই বড় কথা।’’ এই কাজে হাত মিলিয়েছে এক শিল্প সংস্থা। তার তরফে পারমিতা সাহা জানান, এই মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে উঠে আসা শব্দগুলোকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। বললেন, ‘‘নারী দিবস একটা দিন। কিন্তু আমরা তো গতকাল মেয়ে ছিলাম, আগামী কালও থাকব। তাই লড়াইয়ের শব্দগুলো একই থাকে। এই কথাই জানাতে চাই শহরবাসীকে।’’

Women's Day Women's Day Special
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy