Advertisement
E-Paper

ভাতা বন্ধ, ‘আত্মঘাতী’ যাত্রাশিল্পী

লঞ্চ তখন মাঝগঙ্গায়। সামনের ডেকে বসেছিলেন অশীতিপর এক বৃদ্ধ। হাতে ধরা একটা লাঠির মাথায় প্লাস্টিকে মোড়া কিছু কাগজ। হঠাৎ চটি খুলে উঠে দাঁড়ান তিনি। লাঠিটাকে সযত্নে রেখে দেন ডেকের একপাশে। এর পরে লঞ্চ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন গঙ্গায়। তাঁকে বাঁচাতে লঞ্চকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট ফেলেন। কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করে তলিয়ে যান জলের অতলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪২
হারাধন দাস

হারাধন দাস

লঞ্চ তখন মাঝগঙ্গায়। সামনের ডেকে বসেছিলেন অশীতিপর এক বৃদ্ধ। হাতে ধরা একটা লাঠির মাথায় প্লাস্টিকে মোড়া কিছু কাগজ। হঠাৎ চটি খুলে উঠে দাঁড়ান তিনি। লাঠিটাকে সযত্নে রেখে দেন ডেকের একপাশে। এর পরে লঞ্চ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন গঙ্গায়। তাঁকে বাঁচাতে লঞ্চকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট ফেলেন। কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করে তলিয়ে যান জলের অতলে।
শনিবার সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ বাঁধাঘাট থেকে আহিরীটোলা যাওয়ার সময়ে এই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন লঞ্চে থাকা জনা তিরিশ যাত্রী। আহিরীটোলায় যাত্রী নামিয়ে ফিরে আসার পর বাঁধাঘাটের লঞ্চ অফিস থেকে ঘটনাটি জানানো হয় স্থানীয় থানায়। খবর যায় কলকাতা রিভার ট্রাফিক পুলিশে। পুলিশ জানায়, দিনভর তল্লাশির পরেও বৃদ্ধের খোঁজ মেলেনি। বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ওই বৃদ্ধের নাম হারাধন দাস (৮২)। বাড়ি হাওড়ার বেলগাছিয়ার ‘এন’ রোডে। তিনি যাত্রা ও নাট্য জগতের সঙ্গে যুক্ত এক প্রবীণ বেহালাবাদক। তাঁর পরিবার সূত্রে খবর, কিছু বছর ধরে যাত্রা-নাট্য শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রবীণ শিল্পীদের জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের বরাদ্দ করা বছরে ৭ হাজার টাকার অনুদান তিনি পাচ্ছিলেন না। পুলিশের ধারণা, এ নিয়ে তিনি অবসাদে ভুগছিলেন।
লঞ্চকর্মী শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘বৃদ্ধ যাত্রী চটি খুলে, লাঠিটা রাখার পরেও বুঝতে পারিনি কী হতে চলেছে। যখন বুঝলাম তিনি ঝাঁপ দিয়েছেন, লাইফ জ্যাকেট ফেলেছিলাম। কিন্তু উনি সেটা ধরলেন না।’’
পুলিশ জানায়, ওই প্রবীণ শিল্পীর লাঠি থেকে মিলেছে প্লাস্টিকে জড়ানো কিছু কাগজ। তার মধ্যে একটি ‘সুইসাইড নোট’ মিলেছে। পুলিশ জানায়, সেখানে হারাধনবাবু তাঁর মৃত্যুর জন্য যাত্রা অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তিকে দায়ী করেছেন। ওই ব্যক্তির সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ আরও জেনেছে, ২০১২-এর পর থেকে তিনি সরকারি অনুদান পাননি। নিজের অবস্থার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ স্থানীয় বিধায়ক ও কাউন্সিলরের কাছে একাধিক বার চিঠি লিখেছেন। কিন্তু সুরাহা হয়নি।

এ দিন তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা যায় গোটা পরিবার শোকে মুহ্যমান। স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার খবর তখনও জানানো হয়নি তাঁর স্ত্রী ৭০ বছরের বৃদ্ধা নিরুপমা দাসকে। নিরুপমাদেবী বলেন, ‘‘১৯৯৪ সাল থেকে উনি অনুদানের টাকা পাচ্ছিলেন। তিন বছর আগে হঠাৎ অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব ভেঙে পড়েন। অশক্ত শরীর নিয়ে বহু জায়গায় ছোটাছুটি করেছিলেন। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’ হারাধনবাবুর ছেলে কৃষ্ণচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘অনুদান বন্ধ হওয়ায় বাবা খুব অপমানিত হন। আঘাতও পেয়েছিলেন। তবে এমনটা করবেন ভাবিনি।’’

কিন্তু কেন বন্ধ হল অনুদান? রাজ্যের যুব ও আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা প্রতি বছর কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে যাত্রা শিল্পীদের অনুদান দিই। এ বছরও ৩০০ জনকে দিয়েছি। ওই শিল্পীর ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছে বলতে পারব না। খোঁজ নিয়ে দেখবো।’’

Yatra artist suicide ganga boat haradhan das
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy