Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

বাঙুরে যুবকের মৃত্যু, প্রশ্নে রেফার-সংস্কৃতি

রোগী ‘রেফার’ করার রোগ সারছে না সরকারি হাসপাতালের। শনিবার টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতালে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় যে অভিযোগ আরও এক বার সামনে এলো। ওই ঘটনায় এ দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের পরিবার ও পাড়ার লোকজন। তাঁদের দাবি, ওই যুবকের ডেঙ্গি হয়েছে শুনেও হাসপাতাল চিকিৎসা করেনি।

গোলমাল: পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বচসা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

গোলমাল: পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বচসা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৪৬
Share: Save:

পরিকাঠামো আছে। অভাব নেই চিকিৎসকেরও। তবু, রোগী ‘রেফার’ করার রোগ সারছে না সরকারি হাসপাতালের। শনিবার টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতালে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় যে অভিযোগ আরও এক বার সামনে এলো। ওই ঘটনায় এ দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের পরিবার ও পাড়ার লোকজন। তাঁদের দাবি, ওই যুবকের ডেঙ্গি হয়েছে শুনেও হাসপাতাল চিকিৎসা করেনি।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এই ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে তারা। প্রাথমিক তদন্তে যে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শো-কজ করা হচ্ছে সুপারকে।

পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে ওই যুবকের মৃত্যুর খবর পেতেই তাঁর পরিবার ও পাড়ার লোকজন হাসপাতালে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ছুটে যায় পুলিশ। পৌঁছে যান যাদবপুর ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার রূপেশ কুমারও। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হাসপাতাল তদন্ত কমিটি গড়বে ও দোষীদের শাস্তি দেবে, এই আশ্বাস পাওয়ার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পুলিশ জানায়, মৃতের পরিবার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, বিশ্বনাথ পারিয়া (৩০) নামে ওই যুবকের বাড়ি দেশপ্রাণ শাসমল রোডে। তিনি গাড়ি পার্কিংয়ে যুক্ত একটি সংস্থায় কাজ করতেন। পুলিশের কাছে অভিযোগে বিশ্বনাথের পরিবার জানায়, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত জেনেও বাঙুরের চিকিৎসকেরা ন্যূনতম চিকিৎসা করেননি। একাধিক বার ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ দিন সকালেও ওই যুবককে বাঙুরে নেওয়া হয়েছিল। তবু ভর্তি নেওয়া হয়নি। বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা যান।

বিশ্বনাথের মা গীতাদেবী ও তাঁর মামাতো দিদি অনিতা ময়রা এ দিন জানান, তিন-চার দিন ধরে ওই যুবক প্রবল জ্বরে ভুগছিলেন। রক্ত পরীক্ষা হয়। সেই রিপোর্ট দেখে স্থানীয় এক চিকিৎসক জানান, ডেঙ্গি হয়েছে। দু’দিন আগে বিশ্বনাথকে বাঙুরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভর্তি নেওয়া হয়নি। বাড়ি ফিরে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। শুক্রবার সন্ধ্যায় শৌচাগারে বমি করতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান বিশ্বনাথ। ডান চোখে আঘাত লাগে। ফের তাঁকে বাঙুরে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা এসএসকেএমে পাঠান।

পরিবারের অভিযোগ, এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা শুক্রবার রাতে তাঁকে ফের বাঙুরে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে রাত আড়াইটে নাগাদ বিশ্বনাথকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা শুধু বলেন, বেশি করে জল ও প্রয়োজনে প্যারাসিটামল খাওয়াতে।

শনিবার ভোর থেকে ওই যুবকের পেটে যন্ত্রণা হতে থাকে। তা আরও বাড়লে সাড়ে সাতটা নাগাদ ফের নেওয়া হয় বাঙুরে। তখনও জরুরি বিভাগ তাঁর চিকিৎসা করেনি বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, বিশ্বনাথকে স্ট্রেচারে ফেলে রাখা হয়। পৌনে ন’টা নাগাদ তিনি মারা যান।

পুলিশ জানায়, খবর পেয়েই পড়শি ও পরিজনেরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসকদের গালিগালাজ করতে থাকেন। ভেঙে ফেলা হয় জানলার কাচ। জরুরি বিভাগে ঢোকার চেষ্টা আটকে দেয় পুলিশ।

বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ জরুরি বিভাগের সামনে এসে সুপার তাপস ঘোষ ঘোষণা করেন, ‘‘বিশ্বনাথের মৃত্যু খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মৃত্যুতে হাসপাতালের কারও গাফিলতি রয়েছে কি না, তা জানতে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে জরুরি বিভাগের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ভূমিকা খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এর পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

refer Dengue Mosquitoes SSKM MR Bangur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE