Advertisement
E-Paper

পাভলভে ভর্তি হলেন ঝাঁপ দিতে যাওয়া যুবক

হেমন্ত গগৈ নামে বছর তিরিশের সেই যুবক কেন শুক্রবার হাওড়া সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন তারই উত্তর মেলাতে পারছেন না উত্তর বন্দর থানার তদন্তকারীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৯
হেমন্ত গগৈ

হেমন্ত গগৈ

তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। পাশ করেছেন দিল্লি থেকে। অসমের ডিব্রুগড়ে বাড়ির পা়ড়ায় ভাল ছাত্র হিসেবেই তাঁর পরিচয়!

হেমন্ত গগৈ নামে বছর তিরিশের সেই যুবক কেন শুক্রবার হাওড়া সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন তারই উত্তর মেলাতে পারছেন না উত্তর বন্দর থানার তদন্তকারীরা। তবে রাতভর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে মনে করছে, ভাল ছাত্র হয়েও খারাপ সঙ্গে পড়ে জীবন থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছিলেন হেমন্ত। থানার এক কর্তা শনিবার বলেন, ‘‘ওঁর মা ফোন ধরেই কেঁদে ফেলেন। ছেলে খারাপ সঙ্গে পড়েছে বুঝতে পারছিলেন। তবে কলকাতায় এসে ছেলে যে এমন কাণ্ড ঘটাবেন তা ভাবতে পারেননি তিনি।’’ এ দিন আদালতের নির্দেশে ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রিতে কাউন্সেলিংয়ের পরে আপাতত হেমন্তের ঠাঁই হয়েছে পাভলভ হাসপাতালে।

হাও়়ড়া সেতুর ১৯ নম্বর পিলারের সামনে থেকে শুক্রবার বিকেলে গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করেন হেমন্ত। দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে তাঁকে বুঝিয়ে, দাবি মতো কেক, চা, সিগারেট খাইয়ে সেখান থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করেন উত্তর বন্দর থানার ওসি এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা। তবে যুবক সহযোগিতা করেননি। এর জেরে সেতুর এক দিকের ফুটপাত বন্ধ হওয়ায় মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েন। ফল হয় ভয়াবহ। গাড়ির লম্বা লাইন স্ট্র্যান্ড রোড ছাড়িয়ে টি বোর্ড পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অনেকেই হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে পারেননি। রাত পৌনে ন’টা নাগাদ ওই যুবক সামান্য আচ্ছন্ন হলে তাঁর হাত-পা বেঁধে তুলে আনেন বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা।

মেডিক্যাল পরীক্ষার পরে রাতেই হেমন্তকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, সেখানেও হেমন্ত কোনও সহযোগিতা করেননি। সর্ব ক্ষণ তিনি বলছিলেন, ‘‘মদ দাও, সিগারেট দাও।’’ তার মধ্যেই কোনও মতে হেমন্তের থেকে তাঁর বাড়ির ফোন নম্বর নিয়ে থানা থেকে যোগাযোগ করা হয়। জানা যায়, হেমন্তের বাড়িতে একমাত্র তাঁর বয়স্ক মা রয়েছেন। হাওড়া সেতুতে ঝুলতে থাকা অবস্থায় স্ত্রীয়ের সঙ্গে কথা বলাতে হবে বলে হেমন্ত দাবি করছিলেন। কিন্তু, হেমন্তের মা জানান, তাঁর এখনও বিয়েই হয়নি!

পুলিশকে হেমন্তর মা জানিয়েছেন, দিল্লি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন হেমন্ত। হস্টেলে থাকাকালীনই নেশা শুরু করেন তিনি। পরে ডিব্রুগড়ে ফিরে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজে যোগ দেন। সেই চাকরি বেশি দিন রাখতে পারেননি। চাকরি যাওয়ার পরে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সদস্যদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন হেমন্ত। পুলিশের অনুমান, সেতুতে ঝুলতে থাকা অবস্থায় এই কারণেই ডিব্রুগড়ের বিধায়ককে ফোন করতে বলছিলেন ওই যুবক। পুলিশকে হেমন্তের মা বলেছেন, ‘‘ছেলে প্রায় রোজ মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরত। হঠাৎ কাজটাও ছেড়ে চলে যায়। ২৫ ডিসেম্বরের আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ছেলে ফেরেনি।’’ স্থানীয় থানায় ছেলের নিখোঁজের কথা জানিয়েছিলেন হেমন্তের মা। বর্ষবরণের দিন ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন হেমন্ত। তাঁর মায়ের দাবি, ‘‘ফোনে বলে, আমায় খুঁজবে না। আমি আর ফিরব না।’’

ওই যুবক এত দিন কোথায় ছিলেন এবং কী করে কলকাতায় এলেন, এই সব প্রশ্নের উত্তর পায়নি পুলিশ। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ওই যুবকের মায়ের পক্ষে কলকাতায় এসে ছেলেকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কিছুটা সুস্থ হলে পুলিশই ডিব্রুগড় থানার সহযোগিতায় হেমন্তকে বাড়ি পৌঁছে দেবে।

প্রশ্ন থেকে যায়, জীবনের মূল স্রোতে কি ফিরতে পারবেন ওই যুবক?

Crime Suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy