Advertisement
E-Paper

দর্শক শিশু, সিলিং থেকে ঝুলছেন মা

শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গার্ডেনরিচ থানার পাহাড়পুর রোডে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ছেলের সামনেই এমন ভাবে আত্মঘাতী হয়েছেন মা। ওই তরুণীর নাম সোনালি হালদার (২৪)।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১০
এই ঘরেই পাওয়া যায় সোনালির ঝুলন্ত দেহ। পড়ে রয়েছে তাঁর শিশু সন্তানের স্লেট। শুক্রবার, পাহাড়পুরে। নিজস্ব চিত্র

এই ঘরেই পাওয়া যায় সোনালির ঝুলন্ত দেহ। পড়ে রয়েছে তাঁর শিশু সন্তানের স্লেট। শুক্রবার, পাহাড়পুরে। নিজস্ব চিত্র

সকাল থেকেই বন্ধ ঘরের দরজা। বারবার ধাক্কা দিয়েও ভিতর থেকে কোনও সাড়া মিলছিল না। বেশ কিছু ক্ষণ পরে ঘরের ভিতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে সন্দেহ বাড়ে প্রতিবেশী ও বাড়িওয়ালার। ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে তাঁরা দেখেন সিলিং থেকে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলছে তরুণী মায়ের দেহ। আর মেঝেতে বসে অঝোরে কেঁদে চলেছে চার বছরের ছোট্ট ছেলেটি!

শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গার্ডেনরিচ থানার পাহাড়পুর রোডে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ছেলের সামনেই এমন ভাবে আত্মঘাতী হয়েছেন মা। ওই তরুণীর নাম সোনালি হালদার (২৪)। তাঁর বাপের বাড়ি বহরমপুরে। মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাচ্চাটিকে এক জন মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে গার্ডেনরিচ থানাতেই রাখা হয়েছে। সেখানেই তাকে খাবারদাবার দেওয়া হচ্ছে। ভুলিয়ে রাখার জন্য দেওয়া হচ্ছে খেলনা, চকলেটও। সারা ক্ষণ পুলিশ ‘কাকু’দের সঙ্গেই দৌড়োদৌড়ি করেছে ছোট ছেলেটি। তদন্তকারীদের সে জানিয়েছে, সকালে তার মা জল তুলেছিলেন। তার পরে এক জন এসেছিলেন টাকা চাইতে। এর পরে মা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। পুলিশের বক্তব্য, বাচ্চাটি তাদের বলেছে, ‘‘মা তো নিজেই দড়ি নিয়ে নিল। বারবার বারণ করছিলাম, এমন কোরো না। মা শুনল না।’’

পুলিশ আরও জেনেছে, ওই তরুণীর স্বামী রিয়াজ মাস দেড়েক ধরে অন্যত্র কাজ করতে গিয়েছেন বলেই প্রতিবেশীরা জানেন। রিয়াজ পেশায় রাজমিস্ত্রি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, রিয়াজ বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা ধার করেছিলেন। এমনকী অন্যত্র কাজে যাওয়ার সময় মোবাইলটিও সোনালির কাছেই রেখে গিয়েছিলেন। আর পাওনাদারেরা ওই মোবাইলে ফোন করেই টাকার তাগাদা দিতেন সোনালিকে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, পাওনাদারদের অপমান সহ্য করতে না পেরেই ওই তরুণী আত্মঘাতী হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, পাহাড়পুর রোডের কসাই পাড়ায় ঘিঞ্জি গলির ভিতরে সিরাজুদ্দিন আহমেদের একতলা বাড়ির ছাদের উপরে রয়েছে দু’টি অ্যাসবেস্টসের ঘর। তারই একটিতে থাকতেন সোনালি। এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ সিরাজুদ্দিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম ছাদে জামাকাপড় মেলতে গিয়ে দেখেন সোনালির ঘরের দরজা বন্ধ। মমতাজ বলেন, ‘‘এত ক্ষণ ধরে ঘুমোচ্ছে ভেবে সোনালির নাম ধরে ডেকে দরজায় ধাক্কা দিলাম।
কিন্তু খুলল না।’’ তিনি আরও জানান, বেলা ১২টা নাগাদ আর এক ভাড়াটে যুবক শুনতে পান ওই ঘরের ভিতর বাচ্চাটি কাঁদছে। ওই যুবকও বেশ কয়েক বার ধাক্কা দিলেও কেউ দরজা খোলে না। তখন তিনি ফের মমতাজকে ডেকে আনেন।

এ দিন বিকেলে মমতাজ জানান, দরজার নীচের একটি ভাঙা অংশ দিয়ে ভিতরে কী অবস্থা দেখার চেষ্টা করেন তিনি। দেখে মনে হয়, সোনালি বোধ হয় ঘরের ভিতরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘তখন বাইরে থেকে বাচ্চাটিকে বলতে থাকি ‘তোর বাবা এসেছে। দরজা খোল।’ কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছিল না। শুধু বাচ্চটিই কাঁদছিল।’’ এর পরেই সকলে মিলে দরজা ভেঙে দেখেন সিলিং থেকে সিল্কের ওড়নায় গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন সোনালি। তাঁর পা প্রায় মেঝেতেই ছুঁয়ে রয়েছে। একটি হাত মুঠো করে ধরেছে ওড়ানাটা। মেঝেতে পড়ে রয়েছে ভাঙা মোবাইল।

পরে পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ সোনালির ঘরে তল্লাশি করে ব্যাগের ভিতর থেকে ছেঁড়া একটি কাগজ পান। তাতে একদিকে মা ও আর এক দিকে ভাই বলে দুটি নম্বর লেখা ছিল। তদন্তকারীরা প্রথমে ভাই লেখা নম্বরটিতে ফোন করলেও তা থেকে কোনও সাড়া মেলে না। এর পরে মা লেখা নম্বরটিতে ফোন করে তদন্তকারীরা বিষয়টি জানান। সোনালির মা সন্ধ্যা হালদার পুলিশকে জানান, তাঁর মেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল রিয়াজের সঙ্গে। মেয়ের সঙ্গে তাঁর আর কোনও সম্পর্ক নেই। যদিও পরে তাঁরা গার্ডেনরিচে আসছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

সিরাজুদ্দিন জানান, মাস চারেক আগে এলাকাতেই একটি আবাসন বানানোর কাজে যুক্ত ছিলেন রিয়াজ। সেই সময়েই পরিচিত একজনের অনুরোধে রিয়াজকে ঘর ভাড়া দেন তিনি। তবে মাস দুয়েক ধরে রিয়াজ ভাড়া দিচ্ছিলেন না। দেড় মাস আগে এক দিন আচমকাই উধাও হয়ে যান তিনি। সোনালি প্রতিবেশীদের জানিয়েছিলেন, বাইরে কাজে গিয়েছেন রিয়াজ। সংসারে অনটন দেখা দেওয়ায় এলাকারই কয়েকটি বাড়িতে প্রতিদিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে রান্নার কাজ করতে যেতেন সোনালি।

Suicide গার্ডেনরিচ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy