Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘বিমানে জঙ্গি’! যাত্রীর মশকরা ২৬/১১-য়

বিমানবন্দর (এনএসসিবিআই) থানা সূত্রের খবর, সদ্য ক্যাট পরীক্ষা দেওয়া ওই ছাত্রের নাম যোগবেদান্ত পোদ্দার। বেলেঘাটার বাসিন্দা ছাত্রটি বিমানে বসে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটে মজা করে লিখছিলেন— ‘টেররিস্ট অন ফ্লাইট, আই ডেস্ট্রয় উইমেন্স হার্টস।’

সোমবার এয়ারপোর্ট থানায় যোগবেদান্ত পোদ্দার। (ডানদিকে) মুখে রুমাল বেঁধে লেখা এই মেসেজ ঘিরেই ছড়ায় আতঙ্ক। নিজস্ব চিত্র

সোমবার এয়ারপোর্ট থানায় যোগবেদান্ত পোদ্দার। (ডানদিকে) মুখে রুমাল বেঁধে লেখা এই মেসেজ ঘিরেই ছড়ায় আতঙ্ক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ০২:০৯
Share: Save:

সোমবার ছিল ২৬/১১। মুম্বই হামলার দশ বছর। বিমানের গন্তব্যও ছিল মুম্বই। বিমানযাত্রী ছাত্রটির মুখে রুমাল বাঁধা। হাতে ধরা মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে ‘টেররিস্ট অন ফ্লাইট, আই ডেস্ট্রয় উইমেন্স হার্টস।’— এমন কয়েকটি লাইন। দেখতে পেয়ে আঁতকে উঠলেন এক বিদেশি যাত্রী। ঘটনা পরম্পরায় সোমবার সকালে তুমুল নাটক তৈরি হল কলকাতা বিমানবন্দরে। যার জেরে জেট এয়ারওয়েজের একটি বিমানের ওড়ার সময়ে বিলম্ব হল। দৌড়ঝাঁপ করে নাজেহাল হতে হল কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দাদের।

বিমানবন্দর (এনএসসিবিআই) থানা সূত্রের খবর, সদ্য ক্যাট পরীক্ষা দেওয়া ওই ছাত্রের নাম যোগবেদান্ত পোদ্দার। বেলেঘাটার বাসিন্দা ছাত্রটি বিমানে বসে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটে মজা করে লিখছিলেন— ‘টেররিস্ট অন ফ্লাইট, আই ডেস্ট্রয় উইমেন্স হার্টস।’ যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘বিমানে জঙ্গি, আমি নারী হৃদয় ধ্বংস করি।’ ইংরেজিতে লেখা সেই বক্তব্য চোখে পড়ে যায় বেঞ্জামিন প্লুকেট নামে জনৈক বিদেশি যাত্রীর। এর পরেই বিমানের ভিতর শুরু হয়ে যায় রুদ্ধশ্বাস এক নাটক। যা শেষ পর্যন্ত বিমান ছেড়ে নেমে আসে বিমানবন্দরের গোয়েন্দাদের অফিস পর্যন্ত।

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ওই ছাত্র ২৯ বি আসনে বসেছিলেন। নেটওয়ার্কিং সাইটে ভিডিয়ো কলে কথা বলছিলেন। সঙ্গে লিখছিলেনও। তাঁর মুখে রুমাল চাপা দেওয়া ছিল।

পুলিশ জানায়, বেঞ্জামিন নামে আইরিশ ওই যাত্রী বিষয়টি দেখে আঙুলের ইশারায় এক বিমানসেবিকাকে ডেকে ঘটনাটি বলেন। বেঞ্জামিন যোগবেদান্তের কোনাকুনি পিছনে একটি আসনে বসেছিলেন। বিমানসেবিকা ককপিটে গিয়ে ঘটনাটি পাইলটকে জানান। পাইলট এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে বাইরে থেকে নিরাপত্তারক্ষীদের সাহায্য চান।

বিমানটির ওড়ার সময় ছিল সকাল সওয়া ৮টা। ঘটনাটি ঘটে সকাল ৮টা নাগাদ। নিরাপত্তারক্ষীরা মালপত্র সমেত যুবককে নামিয়ে এনে তল্লাশি শুরু করেন। দুপুর পর্যন্ত চলে নাটক। অন্য যাত্রীদের বোর্ডিং কার্ড নতুন করে পরীক্ষা করে তাঁদের মালপত্র বিমান থেকে নামিয়ে আনেন নিরাপত্তারক্ষীরা। পরে যাত্রীদের দিয়েই মালপত্র চিহ্নিত করে তা বিমানে তোলা হয়। যুবককে জেরা করে তাঁর মজা করার বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হয়ে বিমানটিকে ওড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় বিমানটি উ়ড়ে যায়। বিমানবন্দরে আটক করা হয় ওই ছাত্রকে।

পুলিশ জানায়,ওই ছাত্রের মুম্বই হয়ে গোয়া যাওয়ার কথা ছিল। পাঁচ জন বন্ধুকে তিনি ওই বার্তা পাঠান। তাঁকে অনেক ক্ষণ জেরা করে বিমানবন্দর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁকে ছাড়াতে থানায় যাওয়া এক বন্ধুকেও যোগবেদান্ত ওই বার্তা পাঠান।

এ দিন বিকেলে বিমানবন্দর থানায় যোগবেদান্তকে জেরা করেন পুলিশ এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাঁর জিনিসপত্রও তল্লাশি করা হয়। জেরায় সবাইকে মশকরার কথাই জানান যোগবেদান্ত। বিকেলে তাঁকে পুলিশ ছেড়ে দেয়। কিন্তু এমন ঘটনার পরে কেন ওই যাত্রীকে গ্রেফতার করা হবে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিমানকর্মীর একাংশ।

ঘটনার পরে বেলেঘাটায় এ দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ দেখা যায়। বাড়ির লোক জন কেউ দরজা খোলেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE