Advertisement
E-Paper

যুবককে ‘পিটিয়ে’ খুন, মুখে কুলুপ পাড়ার

মহালয়ার ভোরে এক যুবকের ‘রক্তাক্ত’ মৃতদেহ মিলল বেহালার সাঁতরাপাড়ায়। কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিধানসভা এলাকায়। পুলিশের ধারণা, গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় ওই যুবকের। এ দিকে, ঘটনাটি মহালয়ার ভোরে হলেও দিনভর তা জানতেই পারেননি স্থানীয় কাউন্সিলর কৃষ্ণা সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৯

মহালয়ার ভোরে এক যুবকের ‘রক্তাক্ত’ মৃতদেহ মিলল বেহালার সাঁতরাপাড়ায়। কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিধানসভা এলাকায়। পুলিশের ধারণা, গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় ওই যুবকের। এ দিকে, ঘটনাটি মহালয়ার ভোরে হলেও দিনভর তা জানতেই পারেননি স্থানীয় কাউন্সিলর কৃষ্ণা সিংহ। ওই বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ অবশ্য ঘটনাটি জানতেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শুনেছি লোকটা নাকি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল।’’ তবে কী ভাবে ঘটল ওই ভয়ঙ্কর ঘটনা, তা তাঁর ‘জানা নেই’।

যুবকের দেহটি প্রাথমিক ভাবে দেখে পুলিশের অনুমান, তাঁকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারা হয়েছে। তাঁর দেহে অজস্র আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাথার পিছনে রয়েছে গভীর ক্ষত। যা দেখে পুলিশের অনুমান, যুবকের মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এই সব প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতেই তদন্তকারীরা মনে করছেন, যুবকের মৃত্যুর কারণ গণপিটুনিই। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ নিয়ে পুলিশ কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছে না। পুলিশের একাংশের মতে, যুবককে যে ভাবে বেঁধে রেখে মারা হয়েছে, তা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, মহালয়ার ভোরে, যে দিন মানুষজন অন্য দিনের তুলনায় সাধারণত বেশি সজাগ থাকেন, সে দিন এক যুবককে এতক্ষণ ধরে এ ভাবে মারা হল। অথচ এলাকার কেউ কিছু টের পেলেন না! কিন্তু কেন এক যুবককে এই ভাবে মারা হল এবং কে বা কারা এতে যুক্ত, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। দফায় দফায় এলাকার বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা।

স্বভাবতই স্থানীয় মহলে প্রশ্ন উঠছে, জনবহুল এলাকায় ‘গণপিটুনি’তে এক জনের মৃত্যু হল, অথচ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কেউই তার আঁচ পেলেন না! এটা কী ভাবে সম্ভব! এ বিষয়ে কেউ কেউ পণ্ডিতিয়া রোডের এক আবাসনে স্থানীয় এক বস্তির বাসিন্দাদের হামলার প্রসঙ্গও তুলেছেন। সেখানে স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার কেন আগে জানতে পারেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। একই প্রশ্ন এখানেও।

শুক্রবার রাতে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৃষ্ণাদেবীর কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ মিনিট কয়েক পরেই তিনি জানান, ফোনে তাঁকে জানানো হয়েছে, ওই লোকটি মন্দিরে চুরি করতে ঢুকেছিল। তার পরে কী ঘটেছে, কেউ জানে না। অর্থাৎ, ওই যুবকের কী করে মৃত্যু হল, সে বিষয়ে বরো চেয়ারম্যানের মতোই জবাব দিয়েছেন তিনি। এমনকী পুলিশও জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন সাঁতরাপাড়ার বাসিন্দারা।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকাল ছ’টা নাগাদ বেহালার সাঁতরাপাড়া মোড়ে ওই যুবকের দেহটি পাওয়া যায়। প্রথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ওই যুবককে অনেকে মিলে পিটিয়ে মেরেছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন সাঁতরাপাড়ার বাসিন্দারা। এমনকী, মৃতদেহটি যে রাস্তায় পড়ে আছে, সেই খবরটি পর্যন্ত বেহালা থানায় ফোন করে এলাকার কোনও বাসিন্দা জানাননি বলেও জানিয়েছে পুলিশ। সূত্রের খবর, বাইরের এলাকার কেউ বেহালা থানায় ফোন করে দেহটি পড়ে থাকার খবর দেন।

পুলিশ জানায়, যে জায়গায় ওই যুবকের দেহ পড়ে ছিল, তার কাছেই একটি শীতলা মন্দির রয়েছে। ওই মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকলেও প্রণামীর বাক্স খোলা ছিল। যুবকের দেহের কাছে কিছু টাকা পড়ে ছিল। পাশ থেকে একটি হাতুড়ি এবং কড়াত পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের অনুমান, ওই যুবককে চুরির অপবাদে পিটিয়ে মেরেছেন এলাকারই কিছু লোক। কিন্তু সে ধরনের ঘটনায় সাধারণত পাড়ারই কেউ ফোন করে খবরটি জানিয়ে দেন পুলিশকে। এই ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। তাই তদন্তকারীদের অনুমান, চুরির ঘটনা সাজানোর জন্য যুবকের দেহের পাশে কেউ টাকাপয়সা রেখে দিয়ে থাকতে পারেন। কারণ চুরির জন্য মন্দিরের দরজার তালা কেউ ভাঙেনি। মন্দিরের দরজা বন্ধই রয়েছে।

neighbour police youth
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy