গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি গলির মধ্যে দিয়ে মোটরবারইক নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন এক যুবক। আচমকা একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে পথ আটকে দাঁড়াল উল্টো দিক থেকে মোটরবাইকে আসা দুই দুষ্কৃতী। এর পরেই ওই যুবকের উপরে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে পরপর দু’টি গুলি চালিয়ে মুহূর্তের মধ্যে মোটরবাইক নিয়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার রামরাজাতলার অরবিন্দ রোড এলাকার বক্সীবাগানে। দিনেদুপুরে এই ঘটনা হাওড়া শহরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, দুপুরবেলা এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খুন করার পরেও দুষ্কৃতীরা বেমালুম পালিয়ে গেল কী করে? কেনই বা এলাকায় পুলিশের নজরদারি সে সময়ে চোখে পড়েনি? কেনই বা রাত পর্যন্ত পুলিশ এই ঘটনায় দুষ্কৃতীদের এক জনকেও গ্রেফতার করতে পারল না? যদিও পুলিশের দাবি, ঘটনার পরে দ্রুত পৌঁছেছিল তারা। খুব শীঘ্রই অপরাধীরা ধরা পড়বে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের ঘটনায় মৃত যুবকের নাম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বা (৪২)। তিনি ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ ও ছাঁট লোহা সরবরাহের ব্যবসা করতেন। এ দিন দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে স্থানীয় কামারডাঙায় এক বন্ধুর ইট-বালি-সিমেন্টের গোলায় গিয়েছিলেন। ফেরার পথে বক্সীবাগানে একটি ইরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে তাঁর পথ আটকে দাঁড়ায় রাস্তার উল্টোদিক থেকে আসা মোটরবাইক আরোহী দুই যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটে তার পাশেই চারতলা স্কুলটিতে তখন ক্লাস চলছিল। রাস্তাতেও কয়েক জন পথচারী ছিলেন। তাঁদের চোখের সামনেই ওই দুই দুষ্কৃতী কিছু বুঝে ওঠার আগে গৌতমবাবুর বুকের বাঁ দিকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে পরপর দু’টি গুলি চালিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি মোটরবাইক সমেত পড়ে যান। মাথার হেলমেট ছিটকে পড়ে রাস্তায়। তার পরেই মোটারবাইক নিয়ে কামারডাঙার দিকে চম্পট দেয় দুই দুষ্কৃতী।
পুলিশ জানায়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও ওই যুবক বাঁচার জন্য নিজেই কোনও রকমে হেঁটে এগিয়ে গিয়েছিলেন সামনের একটি নার্সিংহোমের কাছে। কিন্তু নার্সিংহোমে ঢোকার আগেই গেটের সামনে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে যান তিনি। যুবককে ওই অবস্থায় পড়ে যেতে দেখে নার্সিংহোম কতৃর্পক্ষই পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে ওই যুবককে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ দিকে, এই ঘটনার পরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে আসেন ডিসি ডিডি সুমিত কুমার-সহ পদস্থ পুলিশকর্তারা। পুলিশ আসার পরে স্কুল ছুটি দিয়ে পড়ুয়াদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটির শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দুপুর দেড়টা নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে তা যথেষ্ট জনবহুল। সামনেই রামরাজাতলা বাসস্ট্যান্ড, বাজার ও মন্দির। দুপুর সাড়ে ১২টার সময়ে স্বাভাবিক ভাবেই লোকজন যথেষ্ট ছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেও এই ঘটনা ঘটায় আতঙ্ক ছড়িছে গোটা এলাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে এমন ঘটনা এই এলাকায় ঘটেনি। কিন্তু সম্প্রতি জমি-বাড়ি দালালি ও ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ নিয়ে এলাকায় রীতিমতো সিন্ডিকেট ব্যবসা শুরু হয়েছে। আমাকেও বাড়ি করতে গিয়ে একটি ক্লাবকে মোটা টাকা দিতে হয়েছে।’’ রামরাজাতলা-কামারডাঙা এলাকায় জমি-বাড়ি-দালালি ও ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ নিয়েই যে এই খুন, তা প্রাথমিক তদন্তের পরে মানছে হাওড়া সিটি পুলিশ। কারণ পুলিশ জানতে পেরেছে, এলাকায় সিন্ডিকেট রাজ কায়েম নিয়েই ওই যুবকের সঙ্গে স্থানীয় একটি ক্লাবের গত কয়েক মাস ধরে বিবাদ চলছিল। মাঝখানে দু’পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের গোলমালও হয়েছিল। তারই বদলা নিয়ে এই খুন কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি ডিডি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ নিয়ে গোলমালের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে তদন্ত চলছে, এখনই পরিষ্কার ভাবে সব বলা যাবে না। আশা করি খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে।’’
কিন্তু দিনে-দুপুরে এই ঘটনা কি পুলিশি নজরদারির অভাব প্রমাণ করে না?
ডিসি ডিডি বলেন, ‘‘হাওড়া শহরে লক্ষ লক্ষ লোক বসবাস করেন। তাঁদের প্রত্যেককে নিরাপত্তা দেওয়া কি সম্ভব? পুলিশ তো প্রত্যেক অলিগলিতে নজরদারি চালাতে পারে না। তবে আমরা চেষ্টা করি। এ জন্যই শহরে অপরাধ অনেক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy