Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বাঁশদ্রোণীতে যুবকের দেহ ঘিরে রহস্য

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বাঁশদ্রোণী লাগোয়া সোনারপুর থানার রেনিয়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ হালদার রবিবার রাত দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরোন।

মৃত বিশ্বজিৎ হালদার। (পাশে) ভেঙে পড়েছেন মা টুকটুকি হালদার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

মৃত বিশ্বজিৎ হালদার। (পাশে) ভেঙে পড়েছেন মা টুকটুকি হালদার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:৩৮
Share: Save:

রাস্তার ধারে দাঁড় করানো মোটরবাইক। পাশেই পড়ে রয়েছে দুই যুবকের রক্তাক্ত দেহ। শনিবার গভীর রাতে ১০০ ডায়ালে ফোন পেয়ে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিশ্বজিৎ হালদার (২২) নামে এক যুবক হাসপাতালে মারা যান। অন্য যুবক সমীর মজুমদার চিকিৎসাধীন। রবিবার ভোরে বাঁশদ্রোণীর নতুনবাজারে এই রহস্য মৃত্যু ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বাঁশদ্রোণী লাগোয়া সোনারপুর থানার রেনিয়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ হালদার রবিবার রাত দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরোন। বিশ্বজিতের মা টুকটুকি হালদার বলেন, ‘‘ছেলে সবে রাতের খাওয়া সেরে টিভি দেখতে বসেছিল। তখনই ওর মোবাইলে ফোন আসে। ফোন ধরে কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি হয়। তার পরেই ‘আসছি’ বলে বা়ড়ি থেকে বেরোয়। ফিরছে না দেখে বারবার ফোন করি। কিন্তু ওর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। গভীর রাতে পুলিশ ফোনে ঘটনাটি জানায়।’’ মৃতের মায়ের অভিযোগ, ‘‘আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে।’’

মৃতের পরিবারের আরও অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে বিশ্বজিৎকে ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। মৃতের মামা গৌর নস্করের অভিযোগ, ‘‘বিশ্বজিৎ এমনিতে শান্ত স্বভাবের ছেলে। গত এক মাস ধরে ওকে ফোনে কারও সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলতে শুনছি। আমাদের অনুমান, ওকে খুন করা হয়েছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ বাঁশদ্রোণীর নতুনবাজারে রাস্তার পাশেই নিজের বাড়ির সদর দরজায় জোর ধাক্কাধাক্কির শব্দ শুনতে পান গৃহবধূ অনিমা সরকার। অনিমাদেবীর কথায়, ‘‘আমার স্বামী সম্প্রতি মারা গিয়েছেন। দুই ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে থাকি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ সদর দরজায় প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কি আর চিৎকার শুনে আমরা আতঙ্কে জেগে উঠি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সেই সময় দরজায় অনবরত আওয়াজ শুনে আমার মেয়ে ১০০ ডায়ালে ফোন করে। ভোর সওয়া চারটে নাগাদ ফোন করলে পুলিশ মিনিট পনেরোর মধ্যে ঘটনাস্থলে আসে।’’ বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই যুবককে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিশ্বজিৎকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। সমীরকে এম আর বাঙুর থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ জানিয়েছে, দু’জনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। দু’জনেই মত্ত অবস্থায় ছিল।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনারপুরের রেনিয়ায় দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন পেশায় রিকশা চালক অমর হালদার। ছোট ছেলে বিশ্বজিৎ ফল্স সিলিংয়ের কাজ করতেন। আহত সমীরও বিশ্বজিতের সঙ্গে কাজ করতেন। স্থানীয় বাসিন্দা দেবু মণ্ডল বলেন, ‘‘রাত তিনটে নাগাদ সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলাম। বাড়ির কাছে বিশ্বজিৎকে তিন জনের সঙ্গে মদ খেতে দেখেছিলাম। তার পরে আর কিছুই জানি না।’’ পুলিশ জেনেছে, মোটরবাইকটি বিশ্বজিৎ চালাচ্ছিলেন। পিছনে বসেছিলেন সমীর। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘সমীর অচৈতন্য। কথা বলার অবস্থায় নেই। ওঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব কিছু পরিষ্কার হবে।’’

রবিবার নতুনবাজারে গিয়ে দেখা গেল, পুলিশ দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। সেখানে একটি মদের বোতলও প়ড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। মৃতের মোবাইলের কল লিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে সব স্পষ্ট হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bansdroni Youth Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE