Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাঠে ফেলে কুপিয়ে খুন যুবককে

রক্তাক্ত অবস্থায় ফাঁকা মাঠ দিয়ে দৌড়োচ্ছেন এক যুবক। পিছনে হাতে ধারাল অস্ত্র নিয়ে তাঁকে তাড়া করছে আরও ছয় যুবক। সব দেখেও ভয়ে সামনে এগোনোর সাহস হচ্ছে না কারও। প্রায় এক কিলোমিটার এই দৌড় চলার পরে আর একটি মাঠে ওই যুবককে ফেলে কোপালো ছয় জনে!

তারক মণ্ডল

তারক মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা 
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৪
Share: Save:

রক্তাক্ত অবস্থায় ফাঁকা মাঠ দিয়ে দৌড়োচ্ছেন এক যুবক। পিছনে হাতে ধারাল অস্ত্র নিয়ে তাঁকে তাড়া করছে আরও ছয় যুবক। সব দেখেও ভয়ে সামনে এগোনোর সাহস হচ্ছে না কারও। প্রায় এক কিলোমিটার এই দৌড় চলার পরে আর একটি মাঠে ওই যুবককে ফেলে কোপালো ছয় জনে!

সোমবার বেলা এগারোটা নাগাদ ই এম বাইপাসের ধারে ফাঁকা মাঠের এই দৃশ্য কোনও সিনেমার শুটিংয়ের নয়। বছরের শেষ দিনে এমন ভাবেই শহরের বুকে প্রকাশ্যে খুন করা হল এক যুবককে। পুলিশ জানায়, তারক মণ্ডল (৩০) নামের ওই যুবকের বাড়ি কলকাতা পুরসভার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধাপার হাটগাছিয়া বস্তিতে। ই এম বাইপাস লাগোয়া ওই বস্তিতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা বলেই পরিচিত ছিলেন ওই যুবক। রবিবার রাতে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে বকখালি থেকে পিকনিক করে ফিরেছিলেন।

যুবকের পরিবারের লোকেরা জানান, এ দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন তারক। বেলা ১১টা নাগাদ পিকনিকে ব্যবহৃত জিনিসপত্র গোছানোর জন্য তাঁকে ডাকতে আসেন বন্ধু স্বপন। দু’জনে মিলে বাড়ির পাশেই ক্লাবে যান। অভিযোগ, সেখানেই ধারাল অস্ত্র নিয়ে তারকের উপরে চড়াও হয় স্থানীয় ছয় যুবক— ভজ মণ্ডল, ছোটু মণ্ডল, অনি মণ্ডল, ভুলু মাইতি, মিলন জানা ও নিবাস দাস। ওই যুবকেরা এলাকায় দুষ্কৃতী বলেই পরিচিত। তারককে মারতে দেখে বাধা দিতে গিয়ে জখম হন স্বপনও। প্রাণে বাঁচতে ক্লাবের রেলিং টপকে পিছন দিকে থাকা মাঠ দিয়ে ছুটতে শুরু করেন তারক। তাঁর পিছু নেয় দুষ্কৃতীরাও।

পুলিশ জানায়, হাটগাছিয়া থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ট্যাংরা থানা এলাকার পাগলা ডাঙা রোডের মাঠে গিয়ে ফের তারককে পাকড়াও করে ওই ছ’জন। সেখানেই ভোজালি দিয়ে ওই যুবকের গলায়, ঘাড়ে, মুখে পরপর কোপ মারা হয়। কেটে দেওয়া হয় হাতের শিরা। এর পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তারককে মাটিতে ফেলেই চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা তারকের বাড়িতে খবর দেন। তারক খুন হয়েছে খবর চাউর হতেই হাটগাছিয়া বস্তির বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয় পূর্ব যাদবপুর, ট্যাংরা ও প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ। আসে লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখা ও গোয়েন্দা বাহিনীও। এলাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়।

তারকের বৌদি বৃহস্পতি মণ্ডলের দাবি, বস্তি দেখভালের দায়িত্ব ছিল ওই যুবকের উপরেই। এলাকায় ওই ছ’যুবকের দাদাগিরি থেকে অসামাজিক কাজের প্রতিবাদ করতেন তারক। তা নিয়েই ওই যুবকের উপরে ক্ষেপে ছিল ওই দুষ্কৃতীরা। এমনকি, মাস কয়েক আগে বস্তিরই একটি আবর্জনা ফেলার জায়গায় কয়েকটি পরিবারকে ঘর করে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ওই যুবক। তা নিয়েও আপত্তি ছিল ওই দুষ্কৃতীদের। কারণ তাদের ওই জায়গায় টাকা নিয়ে লোক বসানোর মতলব ছিল বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। এ দিন ঘটনার পরে পাড়ার মহিলারা এক জোট হয়ে ওই ছয় যুবকের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালান।

স্থানীয় কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘তারক আমাদের দলের কর্মী। তবে এই খুনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগাযোগ নেই। ওঁদের মধ্যে পারিবারিক কোনও অশান্তি ছিল বলে শুনেছি। তবে বিষয়টি কোনও ভাবেই মানা যায় না।’’ যদিও পারিবারিক অশান্তির কথা মানতে চাননি বৃহস্পতিদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘পারিবারিক সমস্যা কিছু ছিল না। তারক থাকলে দুষ্কৃতীদের সব অসামাজিক কাজে সমস্যা হচ্ছিল।’’ স্থানীয়দের অভিযোগ, তারককে সরিয়ে এলাকার দখল নিতেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Youth TMC Leader EM Bypass
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE