Advertisement
E-Paper

অনলাইনে বিদেশ পাড়ি রসগোল্লার

পুজোর হাওয়ায় যেন সত্যিই ডানা মেলেছে বাঙালির রসগোল্লা। এ বিজয়ায় চাইলে, ওবামার দেশে বসেও তার আবাহন সম্ভব। কোনও চেনাজানা বন্ধু-আত্মীয়ের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার ব্যাপার নেই।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৪৭

পুজোর হাওয়ায় যেন সত্যিই ডানা মেলেছে বাঙালির রসগোল্লা।

এ বিজয়ায় চাইলে, ওবামার দেশে বসেও তার আবাহন সম্ভব। কোনও চেনাজানা বন্ধু-আত্মীয়ের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার ব্যাপার নেই। আমেরিকায় বসে অনলাইন অর্ডার করেও হাতে-হাতে চলে আসবে কলকাতার রসগোল্লা।

এ বারের বিজয়া-পর্বে বাঙালির জন্য এ এক নতুন প্রাপ্তি। রসগোল্লাকে টিন-বন্দি করে বহু যুগ আগেই গ্লোবাল করে তুলেছিলেন, যারা সেই কেসি দাশের হাত ধরেই রসগোল্লার এই অনলাইন অনুপ্রবেশ।

এমনিতে মুজতবা আলির লেখাতেও রসগোল্লার ইউরোপ-অভিযানের নানা কিস্‌সা শোনা যায়! তবু কেসি-কর্তা ধীমান দাশ উৎফুল্ল, আমাজন সংস্থার সঙ্গে চুক্তির সুবাদে রসগোল্লা যাচ্ছে আমেরিকায়। তাঁর আশা, ধাপে ধাপে বিদেশে অন্যত্রও রসগোল্লা অনলাইন অর্ডার করা যাবে।

তবে বরাবরের ‘বিজয়া স্পেশ্যাল’ রসের মিষ্টি দুর্গার চোখের আদল-বিশিষ্ট ‘ত্রিনয়নী’ বা ‘রসমালঞ্চ’কে এখনও দূরে পাঠানো যাচ্ছে না। ‘‘ও-সব সুখী মিষ্টি, রসগোল্লার মতো ছ’মাস টিন-বন্দি করা মুশকিল। মৃদু আফশোসও করছেন ধীমান।

বিজয়ার মিষ্টিসুখ নিয়ে বঙ্গজীবন যতই আবেগে থরথর করুক, বিজয়ার মিষ্টি এ যাবৎ দোকানের কাউন্টারে তাৎক্ষণিক কেনা-বেচার পরিসরেই যেন আটকে থেকেছে। অনলাইন কেনাবেচার জমানায় তার গতিবিধি খানিকটা হলেও বেড়েছে বৈ কী! তা ছাড়া, কর্পোরেট-সংস্কৃতির হাওয়া এসে লাগছে বাঙালির বিজয়ার গায়েও। কেসি দাশের ধীমান থেকে বলরামের কর্ণধার সুদীপ মল্লিক, নকুড়-কর্তা প্রণব নন্দী, হিন্দুস্থান সুইটসের রাজদীপ পাল বা রিষড়ার ফেলু মোদকের কর্তা অমিতাভ মোদক অবধি এক মত, মিষ্টির কারবার গত বারের থেকে দশ শতাংশ অবধি বেড়েছে কর্পোরেট আনুকূল্যে।

দেখা যাচ্ছে, শুধু মিষ্টিতে আর চিঁড়ে ভেজে না। বলরামের সুদীপ যেমন বিষ্ণুপুর থেকে কুমোরটুলি মাটির হাঁড়ির জন্য ঢুঁড়ে ফেলেছেন। কেসি দাশের স্পঞ্জ রসগোল্লা বিদেশে পাড়ি দিলেও গায়ে বাহারি নকশা করা মাটির হাঁড়ির প্যাকেজিংয়ে বলরামের রসগোল্লা কর্পোরেট ক্রেতারা কলকাতার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। বলরাম দরকার মতো বাঁশের ডালা, কাঁসার থালা, মাটির থালার আধারের ব্যবস্থা করছে। হিন্দুস্থান সুইটসে আবার এক ধরনের মাটির রং করা প্লাস্টিকের হাঁড়িরও ভাল কদর।

এই নয়া প্যাকেজিংয়ে তা হলে বাজার মাত করছে কোন ধরনের মিষ্টি? এ ক্ষেত্রে জয়জয়কার ‘শুভ বিজয়া’ ছাপ কড়াপাক সন্দেশের। ১০০ গ্রাম থেকে এক কেজি— নানা অবতারে সে হাজির। বলরাম পেল্লায় শাঁখের গর্ভে আম-কমলার নির্যাস বা মিহিদানাও ভরে দিচ্ছে। টিনের রসগোল্লায় হিন্দুস্থান সুইটসও ভাল লড়াই দিচ্ছে। ফেলু মোদকের অমিতাভ বলছিলেন, পুজোর আগে থেকেই এ বার শুধু দিল্লি-মুম্বই নয় দক্ষিণ ভারতেও প্রচুর ক্রেতার আর্জি রাখতে হয়েছে। ‘‘চেন্নাইয়ের এক মহিলাকে বাঙালি ক্ষীরের গুঁজিয়া পাঠাতে হয়েছে। এবং কড়াপাকের সন্দেশ, রসগোল্লা, দানাদারের চাহিদা লেগেই আছে!’’— বলছেন তিনি। বলরামের মুম্বইয়ে নিপুণ ভাবে দই পাঠানোরও অভিজ্ঞতা রয়েছে।

এ সব সাবেক মিষ্টির সঙ্গে লড়াই করে নতুন প্যাকেজের মধ্যে রসিকজনের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে কিছু অন্য ধরনের মিষ্টিও। যেমন, এই বিজয়ায় ফেলু ময়রা চেরিফল খচিত টুটিফ্রুটি সন্দেশ করেছে, সাহেবি ডেজার্ট গানাশের আদলে এক ধরনের আতাসন্দেশ ও চকোলেট সন্দেশ বলরামের সৃষ্টি। তবু কর্পোরেটের শোভন আপ্যায়নেও কারও কারও সেই নিমকি-কুচোগজার কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস পড়ে। মুচমুচে কুচোগজার মিষ্টিতে সামান্য কালোজিরের ঝালের মোচড়টুকু একদা অন্য আবেশ রেখে যেত। সেই অভাববোধেও পুজো শেষের মনখারাপ যেন ঘন হয়েছে।

abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy