Advertisement
E-Paper

অশান্তি জরিপ করতে পুলিশের ‘ব্যাকপ্যাক’

ঢাল-লাঠি-জলকামান নয়। এ বার গোলমালের মোকাবিলায় কলকাতা পুলিশের হাতিয়ার সাংবাদিকের ‘লাইভ-ইউ ব্যাকপ্যাক’। লালবাজার সূত্রের খবর, শহরের সভা-মিছিল ঘিরে প্রায়ই গোলমাল বাধে। গত ২৯ নভেম্বর সংখ্যালঘুদের একটি মিছিল ঘিরে গোলমালের ঘটনা যার সর্বশেষ উদাহরণ। শীর্ষ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, গোলমালের সময়ে ওয়্যারলেস বা ফোনের বার্তা শুনেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় সদর দফতরে থাকা শীর্ষ কর্তাদের। তাই এ বার সরাসরি ছবি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন তাঁরা।

অত্রি মিত্র ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৬
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

ঢাল-লাঠি-জলকামান নয়। এ বার গোলমালের মোকাবিলায় কলকাতা পুলিশের হাতিয়ার সাংবাদিকের ‘লাইভ-ইউ ব্যাকপ্যাক’। লালবাজার সূত্রের খবর, শহরের সভা-মিছিল ঘিরে প্রায়ই গোলমাল বাধে। গত ২৯ নভেম্বর সংখ্যালঘুদের একটি মিছিল ঘিরে গোলমালের ঘটনা যার সর্বশেষ উদাহরণ। শীর্ষ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, গোলমালের সময়ে ওয়্যারলেস বা ফোনের বার্তা শুনেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় সদর দফতরে থাকা শীর্ষ কর্তাদের। তাই এ বার সরাসরি ছবি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন তাঁরা।

পুলিশ সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতেই লালবাজারের কর্তারা পাঁচটি ‘লাইভ ইউ’ যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাহিনীর পাঁচটি ডিভিশনকে একটি করে এই যন্ত্র দেওয়া হবে। গোলমালের সময়ে পুলিশকর্মীরা ক্যামেরা হাতে ছবি তোলেন। লাইভ-ইউ দিয়ে সেই ছবি এ বার সরাসরি চলে যাবে সদর দফতরের কন্ট্রোল রুমে। সেই ছবি দেখে কর্তারা নির্দেশ দেবেন, গোলমালের পরিপ্রেক্ষিতে কী করতে হবে বা হবে না। শুধু তা-ই নয়, গোলমালের পরবর্তী তদন্তেও ওই ছবি কাজে আসবে। বাহিনীর অন্দরেই অবশ্য অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, গোলমাল থামানোর ক্ষেত্রে ইদানীং বারবার সিদ্ধান্তহীনতার ভুগছে পুলিশ। নয়া যন্ত্র কি সেই ‘রোগ’ সারাতে পারবে? কেউ কেউ বলছেন, গোলমালের সময়ে রাস্তায় না নামলে পরিস্থিতি আঁচ করা যায় না। শুধু ছবি দেখে নির্দেশ দিলে হিতে বিপরীত হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

কী এই লাইভ-ইউ ব্যাকপ্যাক? এটি একটি ভিডিও-অডিও তথ্য পাঠানোর যন্ত্র। বড় ল্যাপটপের মতো দেখতে। ক্যামেরায় ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠানো যায়। টেলি-সাংবাদিকেরা সাধারণত আউটসাইড ব্রডকাস্টিং (ওবি) ভ্যানের মাধ্যমে সরাসরি খবর পাঠান। কিন্তু ওবি ভ্যান থেকে খবর যায় স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে। সেটি অত্যন্ত খরচ-সাপেক্ষ। তাই অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি ছবি পাঠানোর জন্য লাইভ-ইউ ব্যবহার করা হয়। এটির মধ্যে থ্রিজি বা ফোরজি প্রযুক্তির ইন্টারনেট-সহ সিমকার্ড ভরা থাকে। ইন্টারনেট মাধ্যমেই ছবি যায়। ফলে তুলনায় খরচ কম হয়।

লালবাজার সূত্রের খবর, এর আগে ওবি ভ্যানের প্রযুক্তির মতো কয়েকটি গাড়ি শহরের পথে নামানোর কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু খরচ-সাপেক্ষ হওয়ায় এ বার লাইভ-ইউ প্রযুক্তির কথা ভাবা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওবি ভ্যানের তুলনায় লাইভ-ইউ ব্যাকপ্যাক নিয়ে কাজ করাও সহজ। তাই বড় গোলমালে কাজ করতে পুলিশের অসুবিধা হবে না।” আর এক কর্তার বক্তব্য, “অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (৩) দেবাশিস রায় এই নয়া প্রযুক্তি রূপায়ণের দায়িত্বে। তিনি ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে তিনি বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে পারবেন।”

শীর্ষ কর্তাদের এমন সিদ্ধান্তে খুশি নন লালবাজারের অফিসারদের একাংশ। অনেকে বলছেন, গোলমালের সময় ঘরে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কারণ রাস্তায় কী পরিস্থিতি রয়েছে, তা আঁচ করা খুব সহজ নয়। ২০০৭ সালে তসলিমা নাসরিনের একটি বই ঘিরে শহরে গোলমাল বেধেছিল। তখন কর্তারা সবাই রাস্তায় নেমেছিলেন।

কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও। তাঁরা বলছেন, সম্প্রতি পুলিশের উপরে লাগাতার হামলা চালিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যরা। আলিপুর থানায় হামলা করেছেন শাসক দলের লোকেরাও। থানার সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্তদের ছবি দেখা গেলেও পুলিশ প্রথমে পাঁচ জন ‘নিরীহ’ লোককে ধরেছিল। পরে চাপের মুখে এক জনকে গ্রেফতার করা হলেও তদন্ত আর এগোয়নি। ২৯ নভেম্বরের ঘটনায় আহত হন পাঁচ জন আইপিএস। লালবাজার সূত্রের খবর, সেই ঘটনায় বাহিনীর কর্তারা ব্যবস্থা নিতে চাইলেও নবান্নের সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। এক পদস্থ কর্তার প্রশ্ন, “গোলমাল ও পুলিশ পেটানোর পরেও যদি ব্যবস্থা না নিতে পারি, তা হলে ঘরে বসে ছবি দেখেই বা লাভ কী?”

kolkata police live you backpack kuntak chattopadhyay atri mitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy