Advertisement
E-Paper

এক দিন আলো, তার পরে আবার আঁধারে ছোটবেলা

শিশু দিবস উপলক্ষে হো চি মিন সরণির এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল বিশ্বনাথ, শম্ভু, করণদের সঙ্গে। ধাপার মাঠে ময়লা ঘেঁটে দিন গুজরান হয় তাদের। শুক্রবার এক দিনের উৎসবের পরে তাদের শৈশব যে ফের দুর্গন্ধে ভরা আবর্জনার পাহাড়েই আটকে যাবে, তা ভালই বুঝে গিয়েছে ১০-১২ বছরের এই খুদেরা। তাই তাদের ঘিরে আয়োজনের মধ্যেই মলিন হেসে শম্ভু বলে ফেলে, “কাল থেকে আর কেউ আসবে না আমাদের দেখতে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১৫
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জওহরলাল নেহরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাল স্কুলপড়ুয়ারাও। শুক্রবার, বিধানসভা ভবনে।  ছবি: সুদীপ আচার্য

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জওহরলাল নেহরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাল স্কুলপড়ুয়ারাও। শুক্রবার, বিধানসভা ভবনে। ছবি: সুদীপ আচার্য

শিশু দিবস উপলক্ষে হো চি মিন সরণির এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল বিশ্বনাথ, শম্ভু, করণদের সঙ্গে। ধাপার মাঠে ময়লা ঘেঁটে দিন গুজরান হয় তাদের। শুক্রবার এক দিনের উৎসবের পরে তাদের শৈশব যে ফের দুর্গন্ধে ভরা আবর্জনার পাহাড়েই আটকে যাবে, তা ভালই বুঝে গিয়েছে ১০-১২ বছরের এই খুদেরা। তাই তাদের ঘিরে আয়োজনের মধ্যেই মলিন হেসে শম্ভু বলে ফেলে, “কাল থেকে আর কেউ আসবে না আমাদের দেখতে। আবার দিনের পর দিন আমি স্কুলে যেতে পারব না। লোহার শিক হাতে নিয়ে ময়লার পাহাড়ে যেতে হবে। রোজ ১০-১২ ঘণ্টা ময়লা ঘেঁটে কাগজ-প্লাস্টিক বার করতে হবে। সেগুলি বেচে ৪০-৫০ টাকা মিলবে। টাকা আনতে না পারলে বাবা খুব মারবে।”

কলকাতার প্রান্তেই ধাপায় ময়লা ঘেঁটে দিন গুজরান হয় প্রায় ৫০ শিশু-কিশোরের। তারা স্কুলে যায় না, খেলতে পারে না, বরং অল্প বয়সে নেশাগ্রস্ত হয়, বাল্যবিবাহের শিকার হয়। শিশুশ্রম, শিশু অধিকার নিয়ে এত আলোচনা-আন্দোলন সত্ত্বেও এদের অবস্থা বদলায় না। শিশু দিবসের অনুষ্ঠান শেষে আবার তাদের ধাপার আবর্জনাতেই ফিরে যেতে হয়। নিজের দু’হাতে বড়-বড় ক্ষত আর অ্যালার্জির মতো দানা দেখাচ্ছিল বিশ্বনাথ। রোজ ময়লা ঘাঁটতে গিয়ে এই অবস্থা। স্থানীয় শক্তি সঙ্ঘ স্কুলে ক্লাস এইটে উঠেছিল। কিন্তু রোজগারের উপায় করতে গিয়ে এক বছর হল স্কুলে যেতে পারে না। তার পাশেই বসে ছিল সাত বছরের ছোট্ট করণ। জানাল, ধাপার মাঠে বড়-বড় কিছু ছেলে থাকে। তারা জোর করে খারাপ কাজ করায়, মারে। ময়লা নিয়ে যে সব ট্রাক আসে, তার চালকেরা মারের ভয় দেখিয়ে সাত-আট বছরের বাচ্চাদের ট্রাক থেকে ময়লা নামানোর কাজ করতে বাধ্য করে। অভিযোগ, বেশ ক’বার বেপরোয়া ভাবে ট্রাক চালিয়ে বাচ্চাদের চাপা দিয়েছে তারা।

শিশু দিবস কাকে বলে, তার তাৎপর্য কী, কিছুই জানে না শম্ভু, করণরা। শুধু জানে, এই একটা দিন ভাল জামা পরে, ভাল জায়গায় গিয়ে ভাল খাবার খেতে পারবে কয়েক ঘণ্টার জন্য। কিন্তু দিনের শেষে আবার ফিরে যেতে হবে অন্ধকার ঘরে। গলায় কেমন একটা ব্যঙ্গ নিয়ে বিশ্বনাথ বলে, “এক দিনের হিরো আমরা। তার পর ফের জিরো।” যা শুনে রাজ্যের শিশু অধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোকেন্দু দাশগুপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “ঠিকই। এক দিন ওদের আদর-যত্ন করে ছবি তোলা হল। তার পর সেই ছবি বিদেশে দেখিয়ে বোঝানো হল, স্বেচ্ছাসেবীরা অসামান্য কাজ করছে। প্রচুর টাকা অনুদান এসে গেল। অথচ বাচ্চাগুলোর ভাগ্য বদলালো না। এটাই চলছে। শিশুদের ক্ষণিকের আনন্দ বা মুক্তি আর সংগঠনগুলোর আর্থিক লাভ।”

রাজ্যের সমাজকল্যাণ কমিশনার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় আফশোস করে বলেন, “হাত পা বাঁধা আমাদের। সরকারি পরিকাঠামোয় এত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজকর্মের উপর নজরদারি অসম্ভব।” তবু আশা ছাড়তে চান না শিশু কল্যাণ কমিটির আধিকারিকেরা। বলেন, “সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খারাপ নয়। অনেকে শিশুদের জন্য ভাল কাজ করে। এক দিনের আতিথ্যে দায়িত্ব শেষ করে না।” অতএব কিছু হতাশ শৈশব আলোকিত হয়।

parijat bondhopadhyay momota bondhopadhyay childrens day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy