বলরাম মন্দিরের রথ।
কলকাতায় আজও টিকে আছে বনেদি বাড়ির রথযাত্রা। এক ঝলকে তেমনই কয়েকটি বাড়ির রথযাত্রা।
রামকৃষ্ণ মঠের রথ (বলরাম মন্দির): ১৮৮৪-র ৪ জুলাই উল্টোরথের দিন এখানেই রথ টেনেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। পরের বছরের ১৪ জুলাইও এখানেই রথ টেনেছিলেন তিনি, জানালেন রামকৃষ্ণ মঠ (বলরাম মন্দির)-এর অধ্যক্ষ স্বামী পূতানন্দ। তাঁর গৃহী ভক্তদের মধ্যে অন্যতম বলরাম বসু এখানেই প্রতি বছর রথযাত্রার আয়োজন করতেন। বারান্দায় রথ টানা হত। আজও তেমনই হয়। রথযাত্রা উপলক্ষে অসংখ্য মানুষ এখানে আসেন।
রানি রাসমণির রথ: আগে জানবাজারের রানি রাসমণির বাড়িতে হলেও এখন এই রথযাত্রা হয় দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে। রানির গৃহদেবতা রঘুনাথ জিউ বেশ কিছু বছর আগে মন্দির চত্বরে রাধাকৃষ্ণের দেবালয়ে স্থানান্তরিত হয়েছেন। রথযাত্রা শুরু হয় ১৮৩৮-এ। পুরনো রথটি ছিল রুপোর। তৈরি করতে খরচ হয়েছিল এক লক্ষ ২২ হাজার ১১৫ টাকা। সেই রথের সঙ্গে ছিল দু’টি সাজানো ঘোড়া, একটি সারথি এবং চারটি পরি। এগুলিও ছিল রুপোর। রথযাত্রা উপলক্ষে সে যুগে যুঁই ফুলের মালা কেনা হত কম করে আড়াই থেকে তিন মণ। দক্ষিণেশ্বর মন্দির দেবোত্তর এস্টেটের তরফে কুশল চৌধুরী বললেন, “পুরনো রথের আদলেই তৈরি বর্তমান রথটি। পুরনো প্রথাগুলি আজও চলছে।”
মার্বেল প্যালেসের রথ: এখানে রথের মধ্যে কাচের ফানুসে, রেড়ির তেলে ও মোমবাতির আলোয় গৃহদেবতা জগন্নাথকে রাখা হয়। পরিবারের তরফে হীরেন্দ্র মল্লিক জানালেন, স্নানযাত্রার দিন থেকেই শুরু হয় উৎসব। প্রথা অনুসারে স্নানযাত্রার পরে জগন্নাথ অসুস্থ হন এবং তাঁকে পাচন দিয়ে সুস্থ করা হয়। এর পরে হয় অঙ্গরাগ। রথের দিন মোট ছ’বার পুজো, চার বার আরতি হয়। রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক প্রচলিত বৈষ্ণব প্রথা অনুসারে আজও চলে সাবেকি আচার অনুষ্ঠান। মা লক্ষ্মীর ঘর থেকে আরতি করে রথযাত্রার শুভ সূচনা হয়। এর পরে রথে বসিয়ে জগন্নাথের মূল পুজো হয়। একে বলে ‘দাঁড়ে ভোগ’। এতে থাকে সন্দেশ, ফল ইত্যাদি ভোগ। তার পরে রথের রশিতে টান পড়ে। রথের মহাপ্রসাদের মধ্যে থাকে জগন্নাথবল্লভ, খাজা, গজা, খয়েরচূড়, নিমকি, কটকটি ইত্যাদি। আর ৫৬ ভোগের মধ্যে থাকে সাত-আট রকমের ডাল, ভুনিখিচুড়ি, শাক, নারকেলের পদ, বড়া, বড়ি, ঘণ্ট, ছেঁচকি, পরমান্ন ইত্যাদি। আর থাকে কাসুন্দি ও আচার। এ বাড়ির রথ বাড়ির বাইরে বেরয় না, বাড়ি সংলগ্ন নীলমণি উদ্যানেই টানা হয়। রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে আজও রথের দিন ও উল্টোরথের দিন মেলা বসে।
তারকনাথ প্রামাণিকের রথ: প্রায় ১৭৫ বছরের পুরনো রথ। দোতলা পিতলের রথের প্রতিটি তলায় চার ধারে রয়েছে চারটি করে দাঁড়ানো পরীর মূর্তি। রথের দিন আগে সিমলে অঞ্চলের কাঁসারি পাড়া থেকে বড়বাজার পর্যন্ত যেত রথটি। এখন রথ বাড়ির বাইরে যায় না। রথের দিন বাড়ির উঠোনেই রথ টানা হয়। রথযাত্রার পরে রথটি সম্পূর্ণ খুলে ফেলা হয়।
টালিগঞ্জ বড় রাসবাড়ির রথ: ১৫০ বছরেরও বেশি পুরনো। কাঠের পাঁচটি চূড়া বিশিষ্ট রথ। রথে দুর্গা-সহ নানা দেব দেবীর ছবি আঁকা থাকে। এখানে রথে চড়েন নারায়ণ শিলা লক্ষ্মীজনার্দন। এই রথের প্রতিষ্ঠাতা বাওয়ালির জমিদার উদয়নারায়ণ মণ্ডল। রথযাত্রার সময় নামসংকীর্তন করা হয়। রাস্তায় ভক্তদের উদ্দেশে হরির লুট দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy