বছর চোদ্দোর এক কিশোরীর বিয়ে রুখতে যাওয়ায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের হুমকি দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল মেয়েটির পরিজনদের বিরুদ্ধে। নিউ টাউন থানার জ্যাংরা হাতিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা। আজ, বৃহস্পতিবার ওই নাবালিকার বিয়ে হওয়ার কথা। আক্রান্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অভিযোগ, তাঁরা পুলিশকে পুরো বিষয়টি জানালেও বুধবার রাত পর্যন্ত তারা বিয়ে বন্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকী অভিযোগ, মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার শিশুকল্যাণ সমিতির তরফে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ নিয়ে বেসরকারি এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থানায় গেলে সেই লিখিত নির্দেশ গ্রহণ করেনি থানা। যদিও রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) শশী পাঁজা বলেন, “ওই মেয়েটির বিয়ে যাতে অবিলম্বে বন্ধ করা যায়, সে বিষয়ে আমি ব্যবস্থা নেব।”।
ওই বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রের খবর, গত ২২ এপ্রিল জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সুলমগাড়ি দক্ষিণপাড়া অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীরা খবর পান, তাঁদের এলাকার এক নাবালিকার বিয়ে ঠিক করেছে তার পরিবার। বছর পঁচিশের পাত্র গোবিন্দ সরকার পেশায় গাড়িচালক। ওই থানার অন্তর্গত গোপালপুর পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে বাকি কর্মীদের নিয়ে ওই কিশোরীর বাড়িতে খোঁজ খবর করতে যান অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীরা। মেয়ের বাবা-মাকে নাবালিকা বিয়ের নানা সমস্যার কথা বোঝাতেও চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ, মেয়েটির বাড়ি গিয়ে এ নিয়ে কথা শুরু করতেই তার পরিজনেরা প্রায় চড়াও হন তাঁদের উপর। এমনকী, অঙ্গনওয়াড়ির এক কর্মীকে ‘দেখে নেওয়া হবে’ বলে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।
আরও অভিযোগ, শুধু হুমকিই নয়, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মারার জন্য ওই কিশোরীর পরিজনেরা-সহ আশপাশের কিছু বাসিন্দা লাঠি হাতে নিয়ে ঘিরে ফেলেন তাঁদের। ওই কিশোরীর পরিবার পাল্টা দাবি করে, তাদের মেয়ে নিখোঁজ। আর এই নিখোঁজ হওয়ার পিছনে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের হাত রয়েছে এবং সেজন্য তাঁরা এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও জানাবেন। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা ফিরে যান। ঘটনার পরের দিনই মেয়েটির বয়সের প্রমাণপত্র-সহ যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে ওই কর্মীরা নিউটাউন থানায় এবং বিডিও-র কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তার পরে প্রায় ৭ দিন কেটে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ আক্রান্ত ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের।
শুধু তা-ই নয়, জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজে থানায় গিয়েছিলেন পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে। কিন্তু অভিযোগ, থানার অফিসাররা নিজেরা কোনও খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা না করে ওই আধিকারিকের কাছে কিশোরীর বিয়ের কার্ড দেখতে চান। এ বিষয়ে শিশু সুরক্ষা আধিকারিক জানান, কোনও নাবালিকা নিখোঁজ থাকলে সেই ডায়েরি ‘এফআইআর’ হিসেবে গণ্য হবে এই তথ্যটুকুও ওই থানার অফিসারেরা জানতেন না।
পাশাপাশি জেলার শিশুকল্যাণ সমিতিরও অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করছে থানা। নিজেরা এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর জোগাড় করে তদন্তও করেনি। যদিও ওই কিশোরীর বিয়ে হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন নিউ টাউন থানার অফিসার। বুধবার সন্ধা্যয় তিনি জানান, বিডিও-র ফোন পেয়ে তাঁরা মেয়েটির বাড়ি গিয়ে তার বাবা-মা ও পড়শিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু ওই কিশোরীর পরিবার মেয়ের বিয়ের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছে। যদিও স্থানীয় বেশ কয়েক জন বাসিন্দার দাবি, মেয়েটি আদৌ নিখোঁজ নয়। কারণ এর আগেও রাজারহাট এলাকায় একই ভাবে এক নাবালিকাকে নিখোঁজ দাবি করে থানায় অভিযোগ জানিয়েছিল মেয়েটির পরিবার। পরে দেখা যায়, অন্য জায়গা থেকে মেয়েটির বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও সে পথ অবলম্বন করা হতে পারে বলে স্থানীয় ওই বাসিন্দাদের পাশাপাশি জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির আশঙ্কা।
বুধবার রাতে বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসি সন্তোষ নিম্বলকর অবশ্য বলেন, “আমাকে নিউ টাউন থানা থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এখনই বিষয়টি দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy