গত সাত দিনে অন্তত তিনটি বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায় নাজেহাল হয়ে যান যাত্রীরা। তবে তিনটি ক্ষেত্রেই সমস্যা ধরা পড়েছিল বিমান মাটিতে থাকাকালীন। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তা কোনও ভাবে বিঘ্নিত হয়নি। কিন্তু রবিবার বিপত্তি মাঝ-আকাশে। ৩৮ হাজার ফুট উচ্চতায় চিড় ধরে গেল পাইলটের সামনে ককপিটের কাচে। উড়ন্ত অবস্থায় সেই কাচ ভেঙে গেলে বিপদের আশঙ্কা ছিল। তবে পাইলট সময়মতো কলকাতায় জরুরি অবতরণ করায় তেমন কোনও বিপদ ঘটেনি।
ভুটানের ড্রুক বিমান সংস্থার বিমানটি পারো থেকে যাচ্ছিল মুম্বই। বিমানটি পটনার আকাশে থাকাকালীন বিপত্তির শুরু। ককপিটের কাচে চিড় দেখে পাইলট যোগাযোগ করেন কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর সঙ্গে। ছুটির দিনের সকালে বিমানটি জরুরি অবতরণ করে কলকাতায়। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ৬৮ জন যাত্রীই নিরাপদে রয়েছেন। কী ভাবে চিড় ধরল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, সকালে পারো থেকে ওড়ার মুহূর্তেই পাখির ধাক্কা লেগে চিড় ধরে থাকতে পারে ওই কাচে।
কলকাতা বিমানবন্দরের এক কর্তা জানান, এ দিন সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট নাগাদ ড্রুকের ওই বিমানটির পাইলট যোগাযোগ করেন কলকাতায়। আকাশের যেখানে ওই দুর্ঘটনার বিষয়টি প্রথম নজরে পড়েছে, কয়েক মিনিট আগে সেখান দিয়েই উল্টো মুখে ভুটানের দিকে উড়ে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিমান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে তিনি এ দিন সকাল ৯টা ৫ মিনিট নাগাদ ভুটানের পারোয় পৌঁছন। এর মধ্যেই পটনার আকাশ থেকে ড্রুক সংস্থার বিমানের পাইলটের বার্তা পেয়ে নড়েচড়ে বসেন কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তড়িঘড়ি জরুরি অবতরণের যাবতীয় ব্যবস্থা মজুত রাখা হয়। অত উপর থেকে ককপিটের কাচে চিড় নিয়ে নেমে আসার পথে সেই কাচ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাতে বিপদ হতে পারত।
সে-ক্ষেত্রে পটনার আকাশে পৌঁছেও সেখানে না-নেমে কলকাতায় ফিরে আসার ঝুঁকি নেওয়া হল কেন?
বিমানবন্দরের অফিসারদের মতে, পটনার বিমানবন্দরটি তুলনায় ছোট। কলকাতার মতো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের সময় সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি পাওয়া যায়। তাই এ-সব ক্ষেত্রে পাইলটেরা কলকাতায় নামতেই পছন্দ করেন। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ৯টা ২০ মিনিট নাগাদ ওই এয়ারবাস-৩১৯ নির্বিঘ্নে নেমে আসার পরে স্বস্তির শ্বাস ফেলেন সকলেই। যাত্রীদের সকাল থেকে বিমানবন্দরেই রাখা হয়। বেলা ১টা ২০ মিনিটে পারো থেকে ড্রুকের অন্য একটি বিমানে তিন ইঞ্জিনিয়ার ককপিটের চিড় ধরা কাচ বদলানোর জন্য নতুন কাচ নিয়ে চলে আসেন কলকাতায়। কিন্তু সন্ধ্যায় সেই কাচ লাগানোর পরেও বিমানটি রাতভর কলকাতাতেই আটকে থাকে। ২৫ জন যাত্রীকে হোটেলে পাঠানো হয়। অন্য যাত্রীরা টিকিট বাতিল করে ফিরে যান।
কাচ বদলের পরেও বিমান আটকে থাকল কেন?
বিমান সংস্থা সূত্রের খবর, তাদের পাইলটদের উড়ান-সূচির সময় পেরিয়ে যাওয়ায় রাতে বিমানটি আর রওনা হতে পারেনি। আটকে পড়া যাত্রীদের নিয়ে আজ, সোমবার সকালে সেটির মুম্বই যাওয়ার কথা।
ঠিক সাত দিন আগে, গত রবিবার কলকাতা থেকে রওনা হওয়ার মুখে স্পাইসজেটের দু’টি বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছিল। একটি বিমান যাচ্ছিল বাগডোগরা, অন্যটির গন্তব্য ছিল হায়দরাবাদ। আর শুক্রবার দিল্লি বিমানবন্দরে যান্ত্রিক বিভ্রাটে আটকে যায় স্পাইসজেটেরই কলকাতামুখী বিমান। তিনটি ক্ষেত্রেই যাত্রীদের দীর্ঘ ক্ষণ আটতে থাকতে হয় বিমানবন্দরে।