Advertisement
১১ মে ২০২৪

কলকাতার কড়চা

....

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

শতবর্ষে ফিরে এল পুজোর গান

টার্নটেবলে ঘুরতে ঘুরতে শতবর্ষ পেরলো শারদ অর্ঘ্য। সে যুগে পুজোর গানের ঐতিহ্য নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল গ্রামোফোন কোম্পানির। ১৯১৪-র ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ ক্যাটালগে প্রথম উল্লেখ মেলে পুজোর গানের। শিল্পী তালিকায় ছিলেন মানদাসুন্দরী দাসী, নারায়ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কে মল্লিক, কৃষ্ণভামিনী, সরলা বাঈ, শশীভূষণ দে প্রমুখ। এ বার শতবর্ষের বাছাই করা পুজোর গান নিয়ে ‘সারেগামা’ প্রকাশ করছে পাঁচটি সিডির একটি অ্যালবাম। থাকছে একশো জন শিল্পীর একটি করে, মোট একশোটি গান।

বিশের দশকের শিল্পীদের তালিকায় ছিলেন আশ্চর্যময়ী দাসী, আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা, কমলা (ঝরিয়া), কৃষ্ণচন্দ্র দে, পঙ্কজকুমার মল্লিকের মতো শিল্পী। তিরিশের দশকে বাংলা ছবি সবাক হওয়ার ফলে ক্রমেই বাংলা গান তথা শারদ অর্ঘ্যে মিলেছিল আধুনিকতার ছোঁয়া। পরবর্তী কালে পুজোর গানই হয়ে ওঠে আধুনিক বাংলা গানের একটি মূল স্তম্ভ। শিল্পীদের বছরভর রেকর্ড বেরলেও পুজোর গানের একটা আলাদা আকর্ষণ ছিল। সে কালে ধর্মতলা, শিয়ালদহ কিংবা শ্যামবাজারের বিভিন্ন রেকর্ডের দোকানের সামনে দু’দণ্ড দাঁড়ালেও যেমন শোনা যেত পুজোর নতুন গান, তেমনই পুজো মণ্ডপের মাইকের দৌলতে ছড়িয়ে পড়ত সে সব গান।

স্মৃতি হাতড়ে প্রবীণ শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “তখন রেকর্ডে থাকত দু’টি করে গান। পুজোর মাস খানেক আগে থেকেই নলিনী সরকার স্ট্রিটের রিহার্সাল রুমে শুরু হত রিহার্সাল। তার পরে গান রেকর্ড করা হত। তখন শিল্পীদের চেনা যেত তাঁদের গান দিয়ে। সে যুগে পুজোয় নতুন জামাকাপড় কেনার পাশাপাশি মানুষ নতুন রেকর্ড কিনতেন। গান শোনার সেই অভ্যাসটাই এখন বদলে গিয়েছে।” শিল্পীদের পাশাপাশি গীতিকার, সুরকার এবং নেপথ্যে থাকা যন্ত্রানুষঙ্গ পরিচালকদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

ছবিটা আজ আমূল বদলেছে। পুজোর গান কি আজ কি আর কেউ মাথা ঘামান? হারানো শিল্পীদের ফিরে পাওয়ার চেষ্টা এই অ্যালবামে। তবে শিল্পীদের গাওয়া মাত্র একটি করে গান কি পারবে শারদ অর্ঘ্যের সেই নস্টালজিয়া ছুঁয়ে শ্রোতাদের প্রত্যাশা পূর্ণ করতে?

বন্যপ্রাণ

তীক্ষ্ণ নখ, ধারাল ঠোঁট আর ক্ষিপ্রগতি—সব মিলিয়ে শিকারি পাখিদের অন্যতম কুটুরে প্যাঁচা। নাইলনের সুতোর প্যাঁচে সেই প্যাঁচা আটকে গেছে। যত ছাড়াতে চেষ্টা করে, ততই জড়িয়ে যায়। বন্যপ্রাণ (সম্পা: হিরণ্ময় মাইতি) পত্রিকার প্রথমেই রয়েছে এই প্যাঁচা উদ্ধারের রোমাঞ্চকর ঘটনা। মৃগাঙ্ক ভাঙ্গড় ও রাজীব কুমার পালের লেখায় কলকাতার কাছেই শ্যামনগরের বর্তির বিলে পাখির ছবি তোলার কাহিনির সঙ্গে চোখজুড়ানো ছবি দেখলেই সামনের শীতে এক দিন সেখানে বেরিয়ে আসতে মন চাইবেই। শ্রেয়া সিংহরায়ের ‘ভরতপুর থেকে চম্বল’, চঞ্চল সিনহার ‘মংলাজোড়ির রূপকথা’, রূপক ঘোষদস্তিদারের ‘রাজ ধনেশ’ লেখা ও ছবিতে পাখিদের কথা সত্যিই মন ভাল করে দেয়। সুব্রত ঘোষের লেখা ও ছবিতে ‘কাকলেশ’ রয়েছে পরিচিত বক মাছ সম্বন্ধে নানা অজানা তথ্য। আরও আছে তাপস কুমার দত্তের ‘মাকড়সার খোঁজে’, পার্থ সেনের ‘এটোশার ডায়েরি’, শান্তনু বিশ্বাসের ‘হিমালয়ের ভাম’।

পাথরপ্রতিমা

বচ্ছরকার পুজোয় মাটির প্রতিমাই তৈরি হয়। তবে চিতপুর এলাকায় পাথরের মূর্তিও মেলে। জোড়াসাঁকো মার্বেল মূর্তি অ্যাসোসিয়েশন-এর অধীনে রবীন্দ্র সরণিতে রয়েছে ৫৩টা এমনই ছোটবড় দোকান। মার্বেল পাথরের মূর্তি রাজস্থান, ওড়িশা থেকে আসে, আবার এখানেও তৈরি করেন শিল্পীরা। বাইরের থেকে আসা মূর্তিতে রঙও করেন তাঁরা। ফেব্রিক, পোস্টার, ফ্লুরোসেন্ট রঙ। তবে বাজার মন্দা। এক সময় লক্ষ্মীপুুজোর আগে প্রায় ষাট-সত্তরটি পাথরের মূর্তি বিক্রি হত। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ-ছ’টিতে।

লিপিনাগরিক

দুর্গাপুজো নিয়ে ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথ কী ভাবতেন? কেমন ছিল সে কালের পুজোর জলসা? আশিস খাস্তগীর দেখাচ্ছেন, ১৮৬১ থেকে ১৯০০ পর্যন্ত পুজোয় হরেক কিসিমের বই বেরিয়েছে! মন্দির টেরাকোটায় দুর্গার নানা রূপ খুঁজেছেন অজয় কোনার। পুজোর গান, মহিষাসুরমর্দিনী, পুজোর যাত্রা, পটের দুর্গা, পুজোর ফ্যাশন, পুজো নিয়ে বই, পুজোর মজা, চলচ্চিত্রে পুজো-- সঙ্গে চমত্‌কার অজস্র সাদাকালো ছবি আর অলংকরণ, এই সব মিলিয়েই এ বারের পুজোর ‘লিপিনাগরিক’ (সম্পা: দেবব্রত মিত্র ও সৈকত মুখোপাধ্যায়)। সূচনায় সুধীর চক্রবর্তীর অনবদ্য কলমে ‘স্মৃতিগন্ধা পুজো’, পারিবারিক আবহে পুজোর দিনের স্মৃতিচারণ।

নবীন শিল্পী

প্রবাসে থেকেও বাংলাকে ভুলে যাননি তিনি। কলকাতার লাহা পরিবারে জন্ম সঞ্চারীর, কিন্তু বড় হয়ে ওঠা মুম্বইতে। বাড়িতে সঙ্গীতের আবহ ছিল বলে ছোট থেকেই গানে আগ্রহ। তালিম শুরু পাঁচ বছরে, প্রথমে সূর্য ভট্টাচার্য ও বিনয় পাঠক এবং এখন শিখছেন গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কাছে। ঠাকুর্দা প্রয়াত লক্ষ্মীকান্ত লাহা ছিলেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী। সঞ্চারী এখন মুম্বইয়ের মিঠিবাই কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। প্রবাসে তিনি শিল্পী হিসেবে ইতিমধ্যেই নাম করেছেন। এ বারে ওঁর জন্য পুজোর গানে কলম ধরেছিলেন শ্রীজাত ও স্মরজিত্‌ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ওর জন্য লিখতে গিয়ে আমি নিজেই কখন ছোট হয়ে গেছি’, বলছিলেন শ্রীজাত। সুর দিয়েছেন জয় সরকার ও ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। এমন আটটি আধুনিক বাংলা গান নিয়ে প্রকাশ পেল ওঁর দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ছোট্ট একটা মন’। ইউডি এন্টারটেনমেন্ট-এর নিবেদনে সিডি প্রকাশ অনুষ্ঠানে সঞ্চারী শোনালেন তাঁর প্রিয় বাংলা গান।

ব্রাত্যজন

‘যে প্রতীক বা চিহ্ন পাশ্চাত্যের থিয়েটারে মনন নয় বরং জীবনযাত্রার এক বাহক হয়ে উঠে আসে, তাকে তৃতীয় বিশ্বে চোলাই করার পেছনে ভাবনার এক দৈন্য ও সংবেদনহীনতাকে মূর্ত করে এ কথা সারা পৃথিবী আজ স্বীকার করে নিয়েছে।’ এক আলোচনাচক্রের পর্যবেক্ষণ সূত্রে সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করেছেন ব্রাত্যজন নাট্যপত্র-এর প্রধান সম্পাদক ব্রাত্য বসু। নাট্যপত্রের শুরুতেই তাঁর শম্ভু মিত্রকে নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য: ‘এক নীল নক্ষত্র অথবা ঈশ্বরের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার গল্প’। প্রবন্ধে বাদল সরকারকে নিয়ে পঙ্কজ মুন্সি ও খালেদ চৌধুরীকে নিয়ে শৈবাল মিত্র। অমর মিত্র আর শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের নাটকের সঙ্গে ব্রাত্য বসুর নতুন নাটক ‘কে?’। এটি নিয়ে আছে একটি ক্রোড়পত্রও। দ্বিতীয় ক্রোড়পত্রে ব্রাত্যজন-এর আন্তর্জাতিক নাট্য আয়োজন নিয়ে সংকলন। ‘সিনেমার মতো’র ইংরেজি অনুবাদ সুচন্দ্রা ঘোষ-কৃত। সমালোচনা অস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর প্রভাত কুমার দাসের। এ বারের ‘বিষ্ণু বসু স্মারক বক্তৃতা’-য় ‘অভিনেতা ও নির্দেশকের সম্পর্ক’ বিষয়ে চমত্‌কার বলেছেন সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়, সেটিও আছে এখানে।

পরম্পরা

শান্তিপুর থেকে যতীন্দ্রনাথ পাল জীবিকার সন্ধানে চলে আসেন কুমোরটুলিতে। ছেলে অরুণচন্দ্রও মৃত্‌শিল্পী। নাতি সমীরের এই কাজে হাতেখড়ি সাত বছর বয়সে, ঠাকুর্দা আর বাবার কাছে। পরে কাকা সুনীল পালের কাছে অনেক কিছু শিখেছেন।

ছবি তুলেছেন শুভাশিস ভট্টাচার্য।

আজও জানার আগ্রহে কাকার কাছেই ছুটে যান। ঠাকুর্দার তৈরি ছাঁচে কিছু সংযোজন করে এখন তিনি লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ তৈরি করেন। সিসাহীন রঙের সঙ্গে জলরঙ, সিন্থেটিক, ফেব্রিক সবই ব্যবহার করেন ৬-১৪ ইঞ্চির প্রতিমায়। ভাই শ্যামলও মৃত্‌শিল্পী, দুই ভাইয়ের দুই মেয়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত। মূর্তি গড়ায় পঞ্চাশ বছর কেটে গেল, ভবিষ্যতে এই সব ছাঁচ আর কাজে লাগবে কি না কে জানে, আক্ষেপ সমীরের।

দামিনী হে

‘প্রান্তিক মানুষের কাব্য রচনা করতে চেয়েছি। তাদের দারিদ্রই শুধু বড় হয়ে ওঠে আমাদের শিল্পে, কিন্তু তাদের জীবনে কত রং, বেঁচে থাকার কত গহন স্তর, সে সব দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। নিসর্গের উপর নির্ভরশীল তারা, প্রকৃতিকেও তাই বুক দিয়ে আগলায়, উন্নয়নের নামে ধ্বংসপ্রকল্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। প্রচলিত পুরাণে বিশ্বাসী বলে লৌকিক-অলৌকিকের দোলাচলে দুলতে থাকে তাদের জীবন।’

বলছিলেন মেঘনাদ ভট্টাচার্য তাঁর নির্দেশিত সায়ক নাট্যগোষ্ঠীর নতুন প্রযোজনা ‘দামিনী হে’ নিয়ে। অমর মিত্রের গল্প অবলম্বনে চন্দন সেনের নাট্যরূপ। ইতিমধ্যে মঞ্চস্থ হলেও আজ ৬ অক্টোবর অভিনীত হবে অ্যাকাডেমিতে সন্ধে সাড়ে ৬টায়। পরিচালক জানালেন, ‘দামিনীর চরিত্রে সুরঞ্জনা দাশগুপ্তের মেয়ে কথাকলি, চমত্‌কার গান গায়। আরেকটি চরিত্রে পাপিয়া রায়।’ (সঙ্গের ছবি)। ‘‘মূলত আমার ‘আকাল’, সঙ্গে ‘অন্ন’ও, এ দু’টি গল্পের মিশেলে তৈরি ‘দামিনী হে’। এক নারীর সঙ্গে তিন বয়সের তিন পুরুষের সম্পর্ককে কাব্যিক সুষমায় ধরতে চেয়েছিলাম গল্পে। মাদার আর্কিটাইপ-এর ছায়া এসে পড়েছে তাতে।’ জানালেন অমর মিত্র।

বিকল্প সাধনা

বিজ্ঞাপন-বিপণনের বাইরে এক বিকল্প সারস্বত সাধনা। লিটল ম্যাগাজিনের জগত্‌। তাতে নিছক সাহিত্যচর্চার চেয়েও বড় হয়ে ওঠে সংস্কৃতি রাজনীতি সমাজচিন্তা পরিবেশ লোকাচার স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতো বিবিধ বিষয়। লেখক পাঠক উভয়েরই মাতৃভাষার মাধ্যমে মত প্রকাশ ও বিনিময়ের এক প্ল্যাটফর্ম এই লিটল ম্যাগাজিন। কলকাতা কেন্দ্রিকতা থাকলেও মফস্সল-সহ পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্তে চালু এই চর্চা। অসংখ্য পত্রিকা বেরোয়, আবার বেরোচ্ছে বা বেরোবেও আরও অসংখ্য পত্রিকা। নব্বই দশক থেকে মুদ্রণপ্রযুক্তির রমরমায় লিটল ম্যাগাজিনের প্রকাশনায় এসেছে নতুন জোয়ার। এ সমস্ত নিয়েই ছবি করেছেন অভিজয় কার্লেকার ও উত্‌পল বসু: ‘লিটল ম্যাগাজিনের কথা’ (প্রযোজনা: ‘শেপ’)। ১০৩ মিনিটের এই বাংলা প্রামাণ্যচিত্রে সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া লিটল ম্যাগাজিনের সংজ্ঞা-আদর্শের ইতিহাস বুনে দিতে চেয়েছেন দুই পরিচালক। সদ্য দেখানো হল ম্যাক্সমুলার ভবনে, গ্যেটে ইনস্টিটিউটে ‘ডকুফোরাম’ বিভাগের উদ্যোগে।

বাঙালির লক্ষ্মীলাভ

শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মীর পরীক্ষায় বাঙালি পাশ করল, এবং ডিস্টিংশন নিয়ে। সেই কবে থেকে ঘোর অপবাদ, সে নাকি কমলার তৃতীয় সন্তান, অন্যেরা সব তাঁর আশীর্বাদে সাতমহলা ঐশ্বর্যে দেশদুনিয়ার চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, বাঙালি মাটির ভাঁড়ে দু’আনা চার আনা জমিয়ে সন্তুষ্ট থাকে আর কোজাগরী পূর্ণিমায় নারকেল নাড়ু পাকায়।

বছর বছর দুর্গাপুজোর জাঁক আর ধনতেরাসের ধামাকার মাঝখানে তার লক্ষ্মীঠাকরুন একলাটি ফাঁকা প্যান্ডেলে দু’দিন অপ্রস্তুত হাসি মুখে নিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু আর নহে, আর নয়। গরিব বাঙালির জমানো খুদকুঁড়ো সংগ্রহ করে করে হাজার হাজার কোটি টাকার কারবার তৈরি করে বঙ্গসন্তানরা দেখিয়ে দিয়েছেন, সাহসে বসতে লক্ষ্মীঃ। বাঙালি ব্যবসা করতে জানে না? বাঙালি বড় করে ভাবতে পারে না? মুখের মতো জবাব দিয়েছেন, দিয়ে চলেছেন গৌরী সেনের উত্তরপ্রজন্ম। এলেম দেখে দেবী অবাক। আরও অবাক তাঁর এই এলেমদার উপাসকদের হেনস্থা দেখে। ধরে ধরে কয়েদ করছে, এর পর নাকি জেলে পুরবে! এক বারও ভেবে দেখল না, ওরাই তো শেষ পর্যন্ত বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করল। গৃহলক্ষ্মীকে মহালক্ষ্মী করল। কাল চাঁদ উঠলে এক বার হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে যেয়ো মা, দুটো প্রশংসা করে এসো, মলিন মুখে হাসি ফুটবে।

স্বভাবত স্বতন্ত্র

অসিত মুখোপাধ্যায়। বাংলা থিয়েটারের একটা point of reference। বলেছেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শঙ্খ ঘোষ: ‘অসিত মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়ধরন ছিল চল্তি ছাঁচ থেকে একটু দূরে, একটু স্বতন্ত্র। সেই স্বাতন্ত্র্যের আমি অনুরাগী ছিলাম।’ মাত্র ৬৪ বছর বয়সে একটু তাড়াতাড়িই যেন নাট্যজগত্‌ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন অসিতবাবু (১৯৩৬-২০০০), যখন তাঁর অনবদ্য অভিনয়ের নিত্যপিপাসু হয়ে উঠেছিল বাঙালি দর্শক। তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত অসিত মুখোপাধ্যায় স্মারক গ্রন্থ-এ (সম্পা: অশোক মজুমদার। উদাহরণ) বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ছাড়াও লিখেছেন দেবেশ রায় দিব্যেন্দু পালিতের মতো সাহিত্যিকেরা। রয়েছে তাঁর প্রবন্ধ-বক্তৃতা-চিঠি-সাক্ষাত্‌কার-নাট্যতালিকা-বংশলতিকার প্রয়োজনীয় সংকলন। রয়েছে তাঁর ‘আত্মকথা’ও। বাবার চাকরিসূত্রে কাশীবাসী হতে হয়েছিল, বলতেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে কাশীবাসী হয় সবাই, আমায় শৈশবেই কাশীবাসী হতে হয়েছিল।’ এক ঝড়ের রাতে জন্ম বলে তাঁর ডাকনাম ছিল ‘ঝোড়ো’। বাবার মৃত্যুর পর কাশীর পাট চুকিয়ে শেওড়াফুলি, তারপর পাকাপাকি ভাবে কলকাতার মনোহরপুকুরে। আঠেরো বছরই শৌখিন নাট্যদলে অভিনয়জীবন শুরু। ’৬০-এ যোগ দেন রূপকার-এ। ’৬৯-এ নির্দেশক ও অভিনেতা হিসেবে ‘তারারা শোনে না’ নাটকে খ্যাতি অর্জন। তাঁর নাট্যগোষ্ঠী গান্ধার থেকে চুপকথা, একের পর এক—ঘোড়া, নীলাম নীলাম, ভম্মা, বিসর্জন, তখন বিকেল, আকরিক, জন্মদিন প্রভৃতি প্রযোজনায় তুমুল সাফল্য। শুধু নাটক নিয়ে জীবন কাটাবেন বলে ব্যাঙ্কের চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নেন। এই শহরের মানুষজন আজও মনে রেখেছেন তাঁকে, কারণ থিয়েটারে তাঁর লড়াইটা ছিল সামাজিক ক্ষয়ের বিরুদ্ধে। স্মারকগ্রন্থটি নিঃসন্দেহে সেই স্মৃতিকে উজ্জ্বল করে তুলল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE