Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খরচে লাগাম দিতে বাতিস্তম্ভেই সৌর প্যানেল বসাবে পুরসভা

সূর্যের আলোয় বাতিস্তম্ভের (স্ট্রিট পোল) মাথায় বসানো সৌর প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। আর তা সরাসরি চলে যাবে সিইএসসি-র গ্রিডে (বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে)। সন্ধ্যায় সিইএসসি-র ওই গ্রিড থেকেই আবার বিদ্যুৎ নিয়ে আলো জ্বলবে বাতিস্তম্ভগুলিতে। দিনে-রাতে এই বিদ্যুৎ দেওয়া-নেওয়ার পালা চলবে কলকাতা পুরসভা ও সিইএসসি-র মধ্যে।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৭
Share: Save:

সূর্যের আলোয় বাতিস্তম্ভের (স্ট্রিট পোল) মাথায় বসানো সৌর প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। আর তা সরাসরি চলে যাবে সিইএসসি-র গ্রিডে (বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে)। সন্ধ্যায় সিইএসসি-র ওই গ্রিড থেকেই আবার বিদ্যুৎ নিয়ে আলো জ্বলবে বাতিস্তম্ভগুলিতে। দিনে-রাতে এই বিদ্যুৎ দেওয়া-নেওয়ার পালা চলবে কলকাতা পুরসভা ও সিইএসসি-র মধ্যে।

দেশপ্রিয় পার্ককে ঘিরে কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগ বিকল্প শক্তি উৎপাদনের এমনই অভিনব পরিকল্পনা নিয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, পরীক্ষামূলক ভাবে প্রকল্পটি দেশপ্রিয় পার্ক এলাকায় চালু করার পরিকল্পনা হলেও ভবিষ্যতে অন্য পার্কেও এমন প্রকল্প নেওয়া হতে পারে। ফলে পুরসভার বিদ্যুৎ বিলের খরচেও কিছুটা লাগাম দেওয়া যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এ ছাড়া, সৌর-প্রকল্পটি যাতে সফল ভাবে রূপায়িত করা যায়, তার জন্য কলকাতা পুরসভা একটি হাই-পাওয়ার্ড কমিটিও তৈরি করেছে।

এক পুর-কর্তা জানাচ্ছেন, দিনে গ্রিডে সৌর-বিদ্যুৎ দেওয়া এবং সন্ধ্যায় গ্রিড থেকে তাপবিদ্যুৎ নেওয়ার ব্যাপারে পুরসভা এবং সিইএসসি-র মধ্যে চুক্তিও হয়ে গিয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে ‘নেট মিটারিং বিলিং অ্যারেঞ্জমেন্ট’। অর্থাৎ পুরসভা সিইএসিসি-র গ্রিডে যত ইউনিট বিদ্যুৎ দেবে, বিলে তার দাম বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া, কত ইউনিট বিদ্যুৎ দেওয়া-নেওয়া হচ্ছে তার হিসেব রাখতে বসানো হবে বিশেষ ধরনের মিটারও।

সিইএসসি-র কর্তারা জানাচ্ছেন, এ ধরনের প্রকল্প কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে এই প্রথম। তবে বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান, রাজভবন-সহ আরও কয়েকটি জায়গায় এই ধরনের ‘নেট মিটারিং বিলিং অ্যারেঞ্জমেন্ট’ করা হয়েছে। এই উদ্যোগে কোনও প্রতিষ্ঠান সিইএসসি-র গ্রিডে যদি ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ দিয়ে ফের ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ নিজেদের প্রয়োজনে খরচ করে, তা হলে বিলে তাদের এক টাকাও দিতে হবে না। আর ১১৫ ইউনিট ব্যবহার করলে বিল হবে ১৫ ইউনিটের।

মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার (পার্ক ও উদ্যান) জানান, পরিকাঠামোটি গড়তে ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। যার ২৫ লক্ষ টাকা দিচ্ছে হিডকো। বাকি অর্থ খরচ করবে পুরসভা। মূলত বিদ্যুতের বিল কমানোই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

যে বেসরকারি সংস্থাটি এই প্রকল্পের কাজ করছে তার কর্ণধার অনুপম বড়াল জানান, প্রতিটি বাতিস্তম্ভে এলইডি আলো লাগানো হবে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই বিদ্যুৎ খরচ কমবে। রাতে ওই আলোগুলির প্রজ্জ্বলন ক্ষমতা (ডিম করে দেওয়া) বিশেষ সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে কমানো হবে। তখন গ্রিড থেকে আরও কম বিদ্যুৎ লাগবে। ফলে এখনকার তুলনায় বিদ্যুৎ খরচ অনেকই কম হবে।

প্রকল্পটি নিয়ে যাঁরা পরিকল্পনা করছেন তাঁদের দাবি, দেশের মধ্যে এই প্রথম পুর-এলাকায় রাস্তার বাতিস্তম্ভের মাথায় সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা গ্রিডে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। বিনিময়ে ফের গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে রাস্তার আলো জ্বালানো হবে।

তৃণমূল পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরে রাস্তায় ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ বসেছে, লাগানো হয়েছে অন্য বাহারি আলোও। ফলে আগের তুলনায় পুরসভায় বিদ্যুৎ বিল অনেকটাই বেড়েছে। এর ফলে মাঝে মধ্যেই সিইএসসি-র কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে যায়। খরচ কী ভাবে কমানো যায়, তার জন্য পুরসভা মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিয়ে থাকে। যেমন, কলকাতায় বেশ কয়েকটি রাস্তাকে চিহ্নিত করে সেখানে এলইডি আলো লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ বার সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে গ্রিডে দিয়ে বিদ্যুৎ কেনার এই প্রকল্পটি অভিনব বলেই দাবি করছেন পুর-কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE