Advertisement
E-Paper

ঘর হোক বা অফিস, হাতের মুঠোয় এ বার অ্যাপ্সের পুলিশগিরি

অফিসে বসে কথা বলতে বলতে বারবার নিজের মোবাইল ঘাঁটছিলেন লালবাজারের কর্তাটি। কৌতূহল জানাতেই উত্তর এল, “রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পরিস্থিতি দেখছি।” তার পরেই ল্যান্ডলাইনে এক অধস্তনকে নির্দেশ দিলেন, ‘‘পার্ক সার্কাস মোড়ে যানজট! তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিন।” ওই পুলিশকর্তার ঘরে কোনও স্ক্রিন নেই, কম্পিউটারও বন্ধ রয়েছে। তা হলে কি মোবাইল ফোনেই আসছে এই সব এসএমএস?

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৯

অফিসে বসে কথা বলতে বলতে বারবার নিজের মোবাইল ঘাঁটছিলেন লালবাজারের কর্তাটি। কৌতূহল জানাতেই উত্তর এল, “রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পরিস্থিতি দেখছি।” তার পরেই ল্যান্ডলাইনে এক অধস্তনকে নির্দেশ দিলেন, ‘‘পার্ক সার্কাস মোড়ে যানজট! তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিন।”

ওই পুলিশকর্তার ঘরে কোনও স্ক্রিন নেই, কম্পিউটারও বন্ধ রয়েছে। তা হলে কি মোবাইল ফোনেই আসছে এই সব এসএমএস?

‘‘এটা একদম নতুন ব্যাপার” মোবাইলটা এগিয়ে দিলেন পুলিশকর্তা। দেখলাম, স্ক্রিনে ছোট ছোট খোপে শহরের বিভিন্ন রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের ছবি ফুটে উঠছে। তা দেখেই চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন তাঁরা। কলকাতার পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, দিন কুড়ি আগে চালু হওয়া এই ব্যবস্থা ভোটের বাজারে শহরের আইনশৃঙ্খলা সামলাতেও কাজে আসবে।

লালবাজারের অফিসারেরা জানালেন, ব্যাপারটা একটা ‘মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন’ বা ‘অ্যাপ্স’। এটা ব্যবহার করে ঘরে বা অফিসে বসেই শহরের বিভিন্ন রাস্তার অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা। এর জন্য শুধু প্রয়োজন ‘অ্যান্ড্রয়েড’-যুক্ত একটি স্মার্টফোন। লালবাজারের খবর, রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে সিসিটিভি বসানো। তা দিয়ে ট্রাফিক গার্ড ও কন্ট্রোল রুমে মনিটর করা হয়। শহরের বিভিন্ন মোড়ের ছবি দেখা যায় পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থের ঘরে বসানো স্ক্রিনেও। কিন্তু সব ডেপুটি কমিশনার বা তার উপরের স্তরের কর্তারা এটা দেখতে পারতেন না। এই নতুন পদ্ধতিতে সেই সুবিধার আওতায় এসেছেন তাঁরাও।

পুলিশ জানাচ্ছে, শহরের সব সিসিটিভি-র ফুটেজ ইন্টারনেট মারফত কন্ট্রোল রুমে পৌঁছয়। লালবাজারের আইপিএস-রাও মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওই অ্যাপ্সটিকে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন। “এর পরে ওই অ্যাপ্স খুলে সহজেই বিভিন্ন মোড়ের ছবি দেখতে পারব” মন্তব্য এক আইপিএস-কর্তার। তবে এই অ্যাপ্স দিয়ে ফুটেজ রেকর্ড করা যাবে না। লালবাজারের কর্মীদের একাংশ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, এই অ্যাপ্স তো খোলা বাজারে মেলে। সে ক্ষেত্রে, যে কেউ তা ব্যবহার করতে পারেন।

এমনটা সম্ভব নয় বলেই দাবি করেছেন পুলিশকর্তারা। তাঁদের কথায়, “কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে ইন্টারনেট মারফত যুক্ত হওয়ার সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তা একটি পাসওয়ার্ড দেন। কন্ট্রোল রুম থেকেও একই পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। তার পরেই ক্যামেরার সঙ্গে মোবাইল ফোনের সংযোগ স্থাপিত হয়।” এক পুলিশকর্তা বলেন, “যে ভাবে দু’টি মোবাইলের মধ্যে ‘ব্লু-টুথ পেয়ারিং’ করা হয়, অনেকটা একই কায়দায় কাজ করে এই অ্যাপ্স।”

পুলিশের দাবি, এই অ্যাপ্স দিয়ে কর্তারা ট্রাফিক নিয়ে চটজলদি নির্দেশ দিতে পারবেন। অফিসে বসেই মোবাইল মারফত প্রত্যেক ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনারেরাও রাস্তায় নজরদারি করতে পারবেন। নিজেদের আওতাধীন থানাগুলিকে পথে আইনশৃঙ্খলা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও নির্দেশ দিতে পারবেন।

তাই এই অ্যাপ্সের ব্যবহার শুধু ট্রাফিকে সীমাবদ্ধ রাখতে নারাজ লালবাজার। বরং ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা সামাল দেওয়াকেও প্রাধান্য দিচ্ছেন শীর্ষ কর্তারা। কোথাও কোনও অবৈধ জমায়েত হচ্ছে কি না, বা ছোটখাটো রাজনৈতিক সংঘর্ষ হচ্ছে কি না, সেটাও নজরে রাখা যাবে। বিভিন্ন মোড়ে পুলিশকর্মীরা ঠিক মতো ডিউটি করছেন কি না, নজর রাখা যাবে তার উপরেও।

তা হলে কেমন নজরদারি চলছে? “আগে শুধুই অফিসে বসে নজরদারি করতাম। এখন বাড়িতে বসেও মোবাইলে নজর রাখি” বললেন সেই পুলিশকর্তা।

shibaji dey sarkar kuntak chattopadhyay mobile application lalbazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy