Advertisement
E-Paper

ছাত্রভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েও রাজ্যের দিকে তাকিয়ে যাদবপুর

রাজ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন জুন-জুলাইয়ে হবে বলে অক্টোবরে ঘোষণা করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি চায়, নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ ফেব্রয়ারির মধ্যেই ওই নির্বাচন সম্পন্ন হোক। মঙ্গলবার কর্মসমিতি এই মর্মে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজেদের আইনে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত অস্বাভাবিক কিছু নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৫৩
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মিছিল। মঙ্গলবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মিছিল। মঙ্গলবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

রাজ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন জুন-জুলাইয়ে হবে বলে অক্টোবরে ঘোষণা করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি চায়, নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ ফেব্রয়ারির মধ্যেই ওই নির্বাচন সম্পন্ন হোক। মঙ্গলবার কর্মসমিতি এই মর্মে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজেদের আইনে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত অস্বাভাবিক কিছু নয়।

কিন্তু যাদবপুর ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও যা করতে চলেছে, তাতে শিক্ষা শিবিরে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছে। যাদবপুর ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েও সেটি পাঠাচ্ছে রাজ্য সরকারের কাছে। তারা জানিয়েছে, সরকার ওই সিদ্ধান্ত মেনে নিলে অবিলম্বে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে বিশ্ববিদ্যালয়। আর সরকারের আপত্তি থাকলে কর্মসমিতি ফের বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেবে— তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার রক্ষা করবে, নাকি ছাত্রভোটের ক্ষেত্রেও সরকারের হস্তক্ষেপ মেনে নেবে।

প্রশ্নের শুরু এখান থেকেই।
•স্বাধিকার রক্ষার দায়িত্ব তো সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়েরই। তা হলে ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েও সরকারের মুখাপেক্ষী কেন হচ্ছেন যাদবপুর-কর্তৃপক্ষ?
•রাজ্য সরকার অনুমতি দিক না-দিক, কর্তৃপক্ষ আদৌ তাদের
কাছে কর্মসমিতির ওই সিদ্ধান্ত পাঠাচ্ছেন কেন?

সরাসরি জবাব মিলছে না। এ দিন কর্মসমিতির বৈঠক শেষে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘জানুয়ারিতেই ছাত্র সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদি রাজ্যের কথা শুনে ভোট করাতে হয়, তা হলে বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হবে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-শূন্য থাকলে জরুরি কিছু সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়। তাই কর্মসমিতি চায়, নির্ঘণ্ট মেনেই নির্দিষ্ট সময়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হোক।’’ কর্মসমিতির এক সদস্য জানান, কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত শিক্ষা দফতরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার পরে ১৫ দিন অপেক্ষা করা হবে। ‘‘তার মধ্যে সরকার মতামত না-জানালে আমরা আমাদের মতোই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে দেব। রাজ্য সরকার অনুমোদন না-দিলে কর্মসমিতি বৈঠকে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে,’’ বলেছেন কর্মসমিতির ওই সদস্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও আইনেই ছাত্রভোটের দিন ঘোষণার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নেওয়ার কথা নেই। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েও রাজ্যের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশও। যাদবপুরের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় নিজস্ব আইনে। সেই আইনে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সরকারের কোনও ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়নি।’’

নির্দিষ্ট সময়ে ছাত্রভোটের দাবি তুলে এ দিন অরবিন্দ ভবনের বাইরে বিক্ষোভ দেখায় যাদবপুরের এসএফআই ইউনিট। সংগঠনের লোকাল কমিটির সহ-সম্পাদক অভীক ঘোষ বলেন, ‘‘কর্মসমিতির বৈঠক চলাকালীন আমাদের ভিতরে ডেকে নিয়ে গিয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ১৮ ফেব্রুয়ারি সম্ভাব্য নির্বাচনের দিন ঠিক হয়েছে। অথচ কর্মসমিতি এখন বলছে, তাদের সিদ্ধান্ত তারা রাজ্যকে জানিয়ে দেবে। কোনও ভাবে যদি ভোট আটকে যায়, আমরা পথে নেমে বৃহত্তর আন্দোলন করব।’’

এ দিন কর্মসমিতির বৈঠক চলাকালীনই বাইরে এসে রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ জানান, ছাত্রভোট হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি। শিক্ষা দফতরকে কর্মসমিতির এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে। ওই দফতরের সিদ্ধান্ত জেনে কর্মসমিতি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। অবিলম্বে নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভকারী এসএফআই-কেও নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কর্মসমিতির বৈঠকের পরে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রারের ঘোষণা থেকে পিছিয়ে এলেন কেন, তার সদুত্তর মেলেনি। কর্মসমিতির এক সদস্যের ব্যাখ্যা, ‘‘রেজিস্ট্রার যখন এই ঘোষণা করেছিলেন, তখনও কমর্সমিতির বৈঠকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়নি।’’

অক্টোবরে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাসূচির কথা মাথায় রেখেই জুন-জুলাই নাগাদ ছাত্রভোট করা হবে। নির্বাচন ছ’মাস পিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশে তখনই সমালোচনায় সরব হন শিক্ষাবিদদের একাংশ এবং বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি। তাঁদের বক্তব্য, ওই নির্দেশিকা জারি করে কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে সরকার। কারণ, ছাত্র সংসদের নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর কোনও এক্তিয়ারই নেই। রাজ্য সরকারের আপত্তি সত্ত্বেও এ দিন কর্মসমিতির বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ যদি অটল থাকেন, বর্তমান জমানায় সেটা বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদদের অনেকেই।

যাদবপুরের কর্মসমিতি নির্দিষ্ট সময়ে ভোটের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে কি না, এখন সেটাই দেখার।

Jadavpur University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy