Advertisement
E-Paper

তৃণমূল নেতার পরিচয়ে তোলাবাজি, জুলুম, অভিযুক্ত যুবক

ইমারতিদ্রব্য সরবরাহে সিন্ডিকেটের দখল নিয়ে তুলকালামের পর এ বার তোলাবাজি, জুলুমবাজি। নিউ টাউনের পর এ বার বন্দর এলাকার খিদিরপুর-একবালপুর। যেখানে অভিযুক্ত তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতা। নিজেকে যিনি শাসকদলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দক্ষিণ কলকাতার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাহির করে বেড়ান। এমনকী, এই পরিচয়ে তাঁর ছাপানো লেটারহেডও রয়েছে। যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা ওই নেতাকে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মানতে চাননি।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০২:৪২

ইমারতিদ্রব্য সরবরাহে সিন্ডিকেটের দখল নিয়ে তুলকালামের পর এ বার তোলাবাজি, জুলুমবাজি। নিউ টাউনের পর এ বার বন্দর এলাকার খিদিরপুর-একবালপুর। যেখানে অভিযুক্ত তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতা। নিজেকে যিনি শাসকদলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দক্ষিণ কলকাতার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাহির করে বেড়ান। এমনকী, এই পরিচয়ে তাঁর ছাপানো লেটারহেডও রয়েছে। যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা ওই নেতাকে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মানতে চাননি।

পুলিশ জানায়, বছর আঠাশের ওই যুবকের নাম রাজেশ সাউ। তাঁর বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে ওয়াটগঞ্জ ও একবালপুর থানায় তোলাবাজি, বোমাবাজির একাধিক অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বেহালার পাঠকপাড়ার বাসিন্দা তৃণমূলের ওই নেতা এখন ফেরার। পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাঁর দলের লোকেরাও। বেহালার বাসিন্দা হলেও খিদিরপুরের হরিসভা স্ট্রিটে রাজেশের একটি মুদির দোকান রয়েছে। সেই সঙ্গে আছে কেরোসিনের ডিলারশিপও। ব্যবসায়িক সূত্রে যাতায়াতের সুবাদে ও শাসক দলের কয়েক জন নেতার ছত্রছায়ায় মাস সাত-আটেক যাবদ এই যুবকের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ এবং পুলিশও স্বীকার করে নিচ্ছে।

লালবাজার সূত্রের খবর, গত ২ জুন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধদমন) পল্লবকান্তি ঘোষের কাছে জমা পড়া একটি লিখিত অভিযোগে জানানো হয়, রাজেশ সাউ খিদিরপুরের এক প্রোমোটারের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা তোলা চেয়ে হুমকি দিয়েছেন। ওই প্রোমোটার হরিসভা স্ট্রিটে একটি বহুতল তৈরি করছেন। গোয়েন্দাপ্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে, তোলা না পেলে ওই প্রোমোটারের চরম বিপদ হবে বলে হুমকি দিয়েছেন রাজেশ।

ওই অভিযোগ পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ওয়াটগঞ্জ থানায় রাজেশের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। কিছু দিন আগে ওই হরিসভা স্ট্রিটেই এক ব্যক্তি নিজের দোতলা বাড়ি সারাই করছিলেন। তাঁর কাছ থেকেও দেড় লক্ষ টাকা তোলা চেয়ে রাজেশ হুমকি দেন বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়। অভিযোগ, মাস দুয়েক আগে খিদিরপুরের গণেশ সরকার লেনের একটি জায়গা জবরদখল করে রাজেশের নেতৃত্বে বেআইনি ভাবে তৃণমূল পার্টি অফিস নির্মাণের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। পাঁচিল গাঁথার কাজও হয়ে যায়। প্রথম দিকে পুলিশকে জানানো হলেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা সাংসদ সুব্রত বক্সীর হস্তক্ষেপে পুলিশ ওই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এলাকায় কোনও নতুন নির্মাণ শুরু হলেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেখানে রাজেশ ও তাঁর দলবল পৌঁছে দাবি করেন, হয় তাদের ইমারতিদ্রব্য সরবরাহের একচেটিয়া বরাত দিতে হবে, নয়তো চাহিদা মতো নগদ টাকা তোলা দিতে হবে। পুলিশ গোড়াতেই নড়েচড়ে বসলে এর দৌরাত্ম্য এতটা বাড়ত না বলে অভিযোগ করছেন এলাকার মানুষের একটা বড় অংশ।

শুধু বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রেই নয়, রাজেশের বিরুদ্ধে জুলুমবাজির অভিযোগ উঠেছে অন্যত্রও। সম্প্রতি বন্দরে ইন্ডিয়ান শিপিং কর্পোরেশনের কর্মী নিয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়। পুলিশ জানায়, রাজেশ ও তার সঙ্গীরা সেখানে চড়াও হয়ে নিজেদের বেশ কয়েক জন লোককে ঢোকানোর দাবি তোলেন। কিন্তু তাঁদের দাবিতে আমল না দেওয়ায় নিয়োগে যুক্ত এক ব্যক্তির একবালপুর লেনের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাজেশ ও তাঁর দলবল বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ পায় পুলিশ। এই ব্যাপারে একবালপুর থানায় মামলাও রুজু করা হয়েছে। বস্তুত তার পর থেকেই রাজেশ পলাতক বলে পুলিশের দাবি। রাজেশের সঙ্গে রবিবার দিনভর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

তৃণমূলের পরিচয় ভাঙানোর অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?

শঙ্কুদেবের বক্তব্য, “আমরা গোটা বিষয়টি দেখছি। প্রয়োজনে নিশ্চয়ই আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।” রাজেশের দৌরাত্ম্য মূলত যে জায়গায়, সেই ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিজামুদ্দিন শামস অবশ্য জানিয়েছেন, রাজেশ তৃণমূলেরই ছেলে। তবে তিনি বলেন, ‘‘রাজেশ যদি অপরাধ করে থাকে তবে আইন আইনের পথেই চলবে।”

ডিসি (বন্দর) ভি সলোমন নেশাকুমার বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে রাজেশ সাউয়ের নামে মামলা রুজু করেছি। তদন্ত হচ্ছে।”

rajesh sau ekbalpur khidirpur surbek biswas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy