Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের খণ্ডযুদ্ধে এ বার রক্তাক্ত দমদম

সরু রাস্তা লাগোয়া বাড়ির দেওয়ালে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। রাস্তায় পড়ে বড় বড় পাথরের ভাঙা টুকরো। তারই একটা হাতে তুলে নিয়ে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানালেন, এ রকমই একটা পাথর দিয়ে এলাকার যুবক সোমনাথ সাধুখাঁর (৩২) মাথায় মেরে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।

গোলমালের পরে। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র।

গোলমালের পরে। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০২:০০
Share: Save:

সরু রাস্তা লাগোয়া বাড়ির দেওয়ালে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। রাস্তায় পড়ে বড় বড় পাথরের ভাঙা টুকরো। তারই একটা হাতে তুলে নিয়ে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানালেন, এ রকমই একটা পাথর দিয়ে এলাকার যুবক সোমনাথ সাধুখাঁর (৩২) মাথায় মেরে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার প্রায় বারো ঘণ্টা পরেও এলাকায় আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। যে বাড়ির দেওয়ালে রক্তের দাগ লেগেছিল, তার এক বাসিন্দা বললেন, “আমরা কিছুই জানি না। কী হয়েছে, বলতে পারব না।”

কী ঘটেছিল বুধবার রাতে? এলাকার বাসিন্দারা জানান, লোকসভা ভোটে তৃণমূলের জয় উদযাপন করতে অগ্রদূত ক্লাবে ভোজের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। সেখানে হাজির ছিলেন উত্‌সবের প্রধান উদ্যোক্তা তথা দক্ষিণ দমদম পুরসভার কাউন্সিলর ও মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) প্রবীর পালও। অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দারা যখন খাওয়াদাওয়া সেরে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন, তখনই অতর্কিতে আক্রমণ করে কয়েক জন দুষ্কৃতী। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা কাউন্সিলর প্রবীর পালের কয়েক জন অনুগামীই সিন্ডিকেটের দখল নিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। যদিও প্রবীরবাবু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “এলাকার এক সময়ের ত্রাস সিপিএম-এর দীপক বিশ্বাসের অনুগামীরা এলাকায় ঢুকতে পারছে না। ওদের আমরা বাধা দিচ্ছি বলেই ওরা পরিকল্পিত ভাবে আমাদের কর্মীদের মারধর করছে।”

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় বেশ কিছু মানুষের জটলা। রাস্তায় যেখানে পাথরের টুকরো পড়েছিল, তার আশপাশেই দেখা গিয়েছে রক্তের ছোপ। বুধবার রাতে সোমনাথকে যখন বাঁশ দিয়ে পেটানো হচ্ছিল, তখন কাছেই ছিলেন তাঁর এক বন্ধু বিজয় সাহা ওরফে ডন। তিনি জানান, ওই রাতে দুষ্কৃতীরা তাঁকে ক্ষুর মেরেছে। বিজয় বলেন, “পালাতে গিয়ে পিছন ফিরে দেখি রক্তে ভেসে যাচ্ছে সোমনাথের শরীর। ওকে যখন পাথর দিয়ে থেঁতলানো হচ্ছিল, তখন সোমনাতের মাথা ফেটে ঘিলুও বেরিয়ে গিয়েছিল। ”

এলাকাবাসীদের অভিযোগ, শুধু গত বুধবারই নয় মাস দুই আগে দুষ্কৃতীরা মধুগড় এলাকায় কয়েক জন যুবকের উপরে হামলা করে। ওই ঘটনায় এক যুবকের মাথায় দা দিয়ে কোপ মারে তারা। কয়েকটা বোমাও ছোড়া হয়।

বারবার কেন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দমদমের মধুগড়?

উত্তর খুঁজতে গেলে সেই সিন্ডিকেট ব্যবসাই সামনে আসে। দমদমের পূর্ব সিঁথি এলাকায় রয়েছে ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড। এর মধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মধুগড়ে এখন চলছে প্রচুর বহুতল নির্মাণের কাজ। অভিযোগ, এই সব বহুতলে কোন সিন্ডিকেট ইট-বালি সরবরাহ করবে, তা নিয়েই গণ্ডগোল।

সিন্ডিকেটের দখল নিয়েই যে এই গোলমাল, তা স্বীকার করে নিলেন এলাকার স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এতে জড়িত তৃণমূলেরই এক নেতার ছাতার তলায় থাকা কয়েক জন নেতা। অভিযোগ, ওই এলাকায় কোন সিন্ডিকেট কোন কাজের বরাত পাবে, তা ঠিক করে দেন তৃণমূলের নেতা তথা ১৪ নম্বর এলাকার কাউন্সিলর প্রবীর পাল। এলাকা দখল নিয়ে প্রবীরবাবুর দুই গোষ্ঠীই এই মারপিটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। যদিও প্রবীরবাবুর অনুগামীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের মতে, স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী যারা সিপিএমের এক সময়কার ত্রাস দীপক বিশ্বাসের অনুগামী, তারাই নিজেদের তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এলাকার সিপিএম নেতা পলাশ দাস অবশ্য বলেন, “অভিযোগ মিথ্যা। মধুগড়ে তৃণমূলেরই দৌরাত্ম্য চলছে। তৃণমূলের কর্মীরাই সিন্ডিকেটের বখরা নিয়ে একে-অপরের সঙ্গে লড়াই করছে।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের এই দখলদারিকে কেন্দ্র করে এলাকায় বেশ কয়েক মাস ধরেই গোলমাল চলছে। স্থানীয় বাসিন্দা এক মধ্যবয়স্ক মহিলা বলেন “বারবার এ রকম ঘটনার পরে এলাকায় মানুষ নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে।” যদিও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এডিসি সুরেশ চ্যাটভির দাবি, “এলাকায় নিয়মিত পুলিশি টহল চলছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সোমনাথ এখন সিন্ডিকেটের ব্যবসা করলেও আগে স্কুলগাড়ি চালাতেন। তাঁর ফ্ল্যাট মধুগড়েই। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা সাধুখাঁ ছাড়াও রয়েছেন মা ও বছর সাতের ছেলে রোহিত। কৃষ্ণাদেবী বলেন, “আমার স্বামীর শক্র কে ছিল বলতে পারব না। আশা করি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে ও বাড়ি ফিরে আসবে।” বাবা তাড়াতাড়ি ফিরুক, সেই আশাতেই এখন দিন গুনছে ছোট্ট রোহিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc clash dumdum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE