শৌচালয়ের ভিতরে ঢুকলে স্পষ্টই বোঝা যায় তা পরিষ্কার করা হয়নি। দেওয়ালের টালিতে পানের দাগ। এমনকী মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট শৌচালয় ব্যবহার করেন পুরুষেরাই। ফলে, অধিকাংশ সময়েই মহিলারা তা ব্যবহার না করতে পেরে ফিরে যান। এই অবস্থা ক্যানাল ইস্ট রোডের এক সুলভ শৌচালয়ের। তবে এটা কোনও ব্যতিক্রম নয়, শহরের আনাচে কানাচে এই ধরনের শৌচালয় রয়েই গিয়েছে।
শহরে সুলভ শৌচালয়ের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই কলকাতা পুরসভা বহু দিন আগেই দ্বিতল সুলভ শৌচালয়ের পরিকল্পনা করে। এমন কয়েকটি ইতিমধ্যে তৈরিও হয়েছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। বেশ কয়েকটি শৌচালয় তৈরি হলেও তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যার জেরে সমস্যায় পড়ছেন নাগরিকেরা।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দার বলেন, “দ্বিতল শৌচালয় চালানো নিয়েই মূল সমস্যা। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে এগিয়ে আসছে না। তাই পুরসভার বিভিন্ন বরোর মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে শৌচালয়গুলি চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করছি, এতে সমস্যার সমাধান হবে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে একতলা শৌচালয়ের সংখ্যা ২৮০টি। এগুলি ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পুরসভা প্রথমে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার বিরুদ্ধে নোটিস দেয়। এতে কাজ না হলে সংস্থার চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়। গত বছর পুজোর আগেই পুরসভা পাঁচটি সংস্থার চুক্তিপত্র বাতিল করেছে বলে স্বপনবাবুর দাবি।
শহরে বেশি সংখ্যক শৌচালয় নির্মাণের উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে কেন্দ্রের প্রকল্পানুযায়ী সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে ৯৬টি দ্বিতল শৌচালয় নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। প্রকল্প অনুযায়ী, প্রতিটি শৌচালয় নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ করবে প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা। পুরসভা দেবে দু’লক্ষ টাকা।
পুরসভা সূত্রে খবর, এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৬৬টি শৌচালয়ের পরিকল্পনা করা হয়। তার মধ্যে ৩৭টি তৈরি হলেও মাত্র আটটির বেশি কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। বাকিগুলি তৈরি করা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। এই পর্যায়ের কাজ শেষ হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩০টি শৌচালয়ের নির্মাণ শুরু হবে।
শৌচালয়ের সংখ্যা অপ্রতুল থাকলে কী সমস্যা হতে পারে?
ইউরোলজিস্ট অমিত ঘোষ বলেন, “সময় মতো প্রস্রাব না করলে মূত্রনালীতে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণের মাত্রা বেশি। এর জেরে মূত্রথলিতে সমস্যাও এমনকী কিডনির সমস্যাও হতে পারে। তাই শহরে পরিষ্কার এবং বহু সংখ্যক শৌচালয় থাকা জরুরি।”
শৌচালয় চালানো নিয়ে সমস্যা কোথায়? নিয়মানুযায়ী, কলকাতা পুরসভা সুলভ শৌচালয় তৈরির পরে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অর্থের বিনিময়ে তা চালানোর জন্য হস্তান্তর করে। যে সংস্থা পুরসভাকে বেশি অর্থ বরাদ্দ করবে সেই সংস্থাই শৌচালয় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায়। এ জন্য পুরসভায় নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ জমা রাখতে হয়।
বস্তি দফতরের এক আধিকারিক জানান, পুরসভার নিয়মানুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়েছিল কোনও সংস্থাকে সুলভ চালানোর জন্য বাৎসরিক ন্যুনতম ৩০,০০০ টাকা দিতে হবে। জমা রাখতে হবে অন্তত ১৮,০০০ টাকা। এ ছাড়াও শৌচালয়গুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ‘ভ্যাট’ দিতে হবে। এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের একাংশ। তাঁরা পুরসভাকে জানান, শৌচালয় রক্ষণাবেক্ষণ নাগরিক পরিষেবারই একটি অংশ। এটি কোনও ব্যবসা নয়। সুতরাং, তাঁরা পুরসভাকে ভ্যাট দিতে অপারগ। তাই তারা শৌচালয় রক্ষণাবেক্ষণ করতে চান না।
এর পরে সমস্যা হয় জমিজট নিয়ে। স্বপনবাবু জানান, শহরের রাস্তায় জায়গা কম। পুরসভা ছাড়াও বহু রাস্তা সরকারি বিভিন্ন দফতরের অন্তর্গত। এই ধরণের প্রকল্প করতে গেলে সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি নিতে হয়। এমনকী, বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়েরাও শৌচালয় তৈরির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ফলে প্রয়োজনীয় শৌচালয় নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না বলেও পুরকর্তৃপক্ষের অভিযোগ।
সমস্যার সমাধানে কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুরসভা?
স্বপনবাবু জানিয়েছেন, পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, শৌচালয় রক্ষণাবেক্ষণে কোনও ভ্যাট নেওয়া হবে না। অন্য দিকে, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারা পিছিয়ে এলেও বিভিন্ন বরোর মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমেই এই শৌচালয়গুলি রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। মহিলা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ক্ষেত্রে পুরসভা বাৎসরিক ১৫ হাজার টাকা দেবে এবং তাঁরা জমা রাখবেন ১০ হাজার টাকা। তবে, অন্য সংস্থার ক্ষেত্রে আগের দর বলবৎ থাকবে। মেয়র পারিষদ জানিয়েছেন, জায়গার জন্য বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় ছাড়াও স্থানীয় কাউন্সিলর ও বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে চাইছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy