Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দমদমে ভাই-বোনকে ‘মার’, উঠছে পাল্টা অভিযোগও

আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলে পরিবার নিয়ে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে চাইলেন দমদমের বাসিন্দা গণেশ কর্মকার। আরজিকরে বোনের চিকিত্‌সা করাতে এসে আতঙ্কিত ওই যুবক বলেন, “বোনকে ওরা গতকাল রাতে বাঁশ দিয়ে পিটিয়েছে। আমাকেও মেরেছে। তার পরেও ওরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওরা আমাদের পাড়া ছাড়া করতে চায়।”

আর জি কর হাসপাতালে লক্ষ্মীদেবী। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

আর জি কর হাসপাতালে লক্ষ্মীদেবী। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাদতা
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলে পরিবার নিয়ে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে চাইলেন দমদমের বাসিন্দা গণেশ কর্মকার। আরজিকরে বোনের চিকিত্‌সা করাতে এসে আতঙ্কিত ওই যুবক বলেন, “বোনকে ওরা গতকাল রাতে বাঁশ দিয়ে পিটিয়েছে। আমাকেও মেরেছে। তার পরেও ওরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওরা আমাদের পাড়া ছাড়া করতে চায়।”

বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে দমদম স্টেশন লাগোয়া বিপিন গাঙ্গুলি রোডে। ওই এলাকার বাসিন্দা গণেশবাবু অফিস থেকে ফিরে ফ্ল্যাটের নীচে সাইকেল রাখছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে তিন যুবক তাঁকে মারধর করেন। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন বোন লক্ষ্মী। অভিযোগ, এর পরেই পড়ে থাকা বাঁশ দিয়ে লক্ষ্মীদেবীর মুখে মারেন তিন যুবক। গণেশবাবুর অভিযোগ, যারা তাঁদের মারধর করেন সেই তারক সাহা, উত্তম শেখর ও লোকনাথ সাহা এলাকায় তৃণমূলকর্মী বলে পরিচিত। তাঁদের নামে দমদম থানায় লিখিত ডায়রি করা হয়েছে। গণেশবাবুর অভিযোগ, তাঁদের একতলার এক কামরার ফ্ল্যাটকে তৃণমূলের পার্টি অফিস করতে চেয়ে বহুদিন ধরেই উত্যক্ত করছিলেন অভিযুক্তরা। ওঁরা উঠতে চাননি। তার জেরেই এই ঘটনা।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দমদমের বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি রোড লাগোয়া এলাকায় সকাল থেকেই চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। গণেশের মা মঞ্জু কর্মকার এক দিকে চিত্‌কার করে বলতে থাকেন, ‘‘ওঁরা আমাদের পাড়ায় থাকতে দেবেন না। আমার ছেলে ও মেয়েকে ওরা অমানবিক ভাবে মারধর করেছে।” অন্য দিকে ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দাদের একাংশ বলতে থাকেন, মঞ্জুদেবীর অভিযোগ মিথ্যা। অভিযুক্তদের মধ্যে উত্তম শেখর ওই ফ্ল্যাটেই থাকেন। তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি শেখর বলেন, “মঙ্গলবার রাতে মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরার সময়ে পড়ে গিয়েছিলেন গণেশ। তাঁকে তুলতে যান লক্ষ্মী। অন্ধকারে লক্ষ্মীও পড়ে গিয়ে দোকানের শাটারে আঘাত পান। আমার স্বামী তখন ঘটনাস্থলের আশপাশেও ছিলেন না।” তাঁর আরও অভিযোগ, “মঞ্জুদেবীরাই ফ্ল্যাটের পরিবেশ নষ্ট করছেন। অকারণে ঝগড়া করেন।”

এ দিন ওই ফ্ল্যাটের কিছু বাসিন্দা আবার মঞ্জুদেবীদের পরিবারের প্রতি এলাকার শান্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন পুলিশের কাছে। বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীদের দ্রুত খুঁজে বার করা হবে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই ফ্ল্যাটটিতে মঞ্জুদেবী একাই থাকেন। গণেশ ও লক্ষ্মী মাঝেমধ্যে মাকে দেখে যান। বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতেই ছিলেন লক্ষ্মী। গণেশবাবু বলেন, “আমি কাছেই থাকি। মায়ের বাড়িতে সাইকেল রাখি। মাকে একলা পেয়ে ওঁরা মাঝেমধ্যেই নানা কটু কথা বলেন। তবে গতকাল যা ঘটল, এমনটা কোনও দিনও ভাবতে পারিনি।”

আরজিকরে গিয়ে দেখা যায় লক্ষ্মীদেবীর চোখ ফুলে গিয়েছে। নাকে ক্ষত চিহ্ন। স্ট্রেচারে শুয়ে কোনও রকমে তিনি বলেন, “দাদাকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। হঠাত্‌ বাঁশ দিয়ে আমাকে মারতে থাকেন ওঁরা। আমার মাথায় ও নাকে লাগে।” গণেশবাবু জানিয়েছেন, “বোনের সিটিস্ক্যান এবং এক্স-রে হয়েছে। মাঝেমধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।”

গণেশবাবুরা অভিযুক্তদের তৃণমূলকর্মী বলে দাবি করলেও এলাকার তৃণমূল নেতা তথা দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ প্রবীর পাল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “গণেশই বরং আমাদের মিটিং-মিছিলে যান। নানা সমস্যায় আমার কাছে আসেন। অভিযুক্ত তিন জন কোনও দিনই তৃণমূলে ছিলেন না। এখন অনেকে তৃণমূলের দলে ভিড়ে পড়ছে। সে রকম কিছু হলে আমার জানা নেই।” প্রবীরবাবুর যুক্তি, “ওই ছোট্ট ফ্ল্যাটে আমাদের পার্টি-অফিস করব কেন? ওখানে আমাদের জমি কিনে বড় পার্টি অফিস করা আছে।”

প্রবীরবাবু আরও বলেন, “ওই ফ্ল্যাটের সমস্যা নিয়ে বাসিন্দারা আগে আমার কাছে এসেছিলেন। অভিযোগ ছিল, ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণের টাকা দেন না গণেশবাবুরা। এ ছাড়াও ওই পরিবার নিয়ে নানা সমস্যার কথা তাঁরা বলেন। একই ভাবে সমস্যার কথা বলতে আসেন গণেশবাবুও।

আমি নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নিতে বলেছিলাম।”

এ দিন সকালেই অবশ্য দমদম থানার পুলিশ ও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কর্তারা ঘটনাস্থলে যান। পাড়ার কিছু যুবক পুলিশ থাকাকালীনই মঞ্জুদেবীর উদ্দেশ্যে রীতিমতো হুমকির সুরে বলেন, “পুলিশ-মিডিয়াকে খবর দিতে কে বলল? ক্লাবে এসেই তো মিটিয়ে নিতে পারতেন। আপদে-বিপদে কিন্তু আমরাই থাকব।”

আতঙ্কিত গণেশবাবু বলেন, “ফিরলে আবার আমাদের মারধর করবে।” বৃহস্পতিবার রাতে মত্ত অবস্থায় থাকার অভিযোগের উত্তরে তিনি বলেন,“আমার রক্ত পরীক্ষা করা হোক। ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটেনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lynching dum dum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE