বেশ কিছু দিন ধরেই অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে মারা গেলেন সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্য। বয়স হয়েছিল ৬৬। নাট্যকার-অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্য এবং সাহিত্যিক-সমাজসেবী মহাশ্বেতা দেবীর পুত্র নবারুণ একাধারে কবি, গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক হিসেবে একটি স্বকীয় ধারা গড়ে তুলেছিলেন।
দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ‘সোভিয়েত দেশ’ পত্রিকায়। নাটক করেছেন কলকাতার মঞ্চে। ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’-র মতো কবিতা, ‘যুদ্ধপরিস্থিতি’-র মতো গল্প, ‘খেলনানগর’, ‘হারবাটর্’ বা ‘কাঙাল মালসাটে’র মতো উপন্যাস এক ধরনের প্রতিষ্ঠান-বিরোধী পরিচিতি তৈরি করেছিল নবারুণের। জীবনযাপনেও ছিলেন অনাড়ম্বর। ঘোরতর রাজনৈতিক লেখা লিখেও বাম বা ডান, কোনও সরকারেরই কাছের মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেননি কোনও দিন। যদিও চিন্তার দিক থেকে বরাবরই বামপন্থী ছিলেন। এবং মূলস্রোতের বাইরে থেকেও তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘ফ্যাতাড়ু’-স্রষ্টা বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিলেন। ‘ফ্যাৎ ফ্যাৎ সাঁই সাঁই’-এর মতো শব্দবন্ধ, পুরন্দর ভাটের লেখা কবিতার লাইন তাদের অনেকেরই মুখে মুখে ঘোরে।
নবারুণের লেখা থেকে দেবেশ চট্টোপাধ্যায়-সুমন মুখোপাধ্যায়রা মঞ্চসফল নাটক করেছেন। সুমনের তিনটি ছবি ‘হারবার্ট’, ‘মহানগর@কলকাতা’ এবং ‘কাঙাল মালসাট’ও নবারুণের রচনা অবলম্বনে। সুমন বলছিলেন, “যে তির্যক রাজনৈতিক অন্তর্ঘাত নবারুণের লেখায় আসত, তাঁর যে অনন্য রচনাশৈলী, সমকালে তার জোড়া ছিল না। নবারুণ নিজেই একটা ধারার জন্ম দিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুতেই সম্ভবত তার শেষ হল।”
বৃহস্পতিবার নবারুণের দেহ পিস হেভ্নে রাখা হয়। শুক্রবার সকাল ন’টা নাগাদ কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া ঘুরে তাঁর বাসভবন হয়ে দুপুরে কেওড়াতলায় লেখকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। নবারুণ যখন শ্মশানে পৌঁছবেন, প্রায় তখনই শহরের মঞ্চে অভিনীত হওয়ার কথা তাঁর অনুবাদ করা নাটক, ‘যারা আগুন লাগায়’। অন্তিম সমাপতন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy