ঘরের মধ্যে আলমারিতে ভর্তি গয়না, টাকা, সঙ্গে দামি আসবাবপত্র। ছেলে মেয়ে-সহ আত্মীয়েরা থাকেন বিদেশে বা দূরে কোথাও। ফ্ল্যাট বা বাড়ি সামলাচ্ছেন একা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। অশীতিপর ওই মানুষটিকে কাবু করতে পারলেই দখল নেওয়া সম্ভব ঘরে থাকা ওই মূল্যবান জিনিসপত্রের।
কোথাও বাড়ির পরিচারক, কখনও ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, কখনও সাফাইকর্মী হিসেবে কাজে ঢুকে এই সুযোগ নিয়ে লুঠপাট চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
টালিগঞ্জের রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়, মানিকতলার বিধান আবাসনের শান্তা ভট্টাচার্য থেকে পাটুলির শঙ্করপ্রসাদ রায় এবং হালে গার্ডেনরিচের জহুরা খাতুন একের পর এক ডাকাতি ও খুনের ঘটনার তদন্তে গোয়েন্দাদের ধারণা, দুর্বল বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সহজে কাবু করে লুঠ করাই ছিল দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য।
এই ‘সফ্ট টার্গেট’-দের নিরাপত্তা দিতে জন্য কী ভাবছেন পুলিশকর্তারা? কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “থানাগুলির যা পরিকাঠামো, তাতে আলাদা করে একা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা কার্যত অসম্ভব।” কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানায় কাজ করা, বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার দায়িত্বে থাকা এক অতিরিক্ত কমিশনারের মন্তব্য, “পুলিশের একার পক্ষে ওই ধরনের অপরাধ আটকানো সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন প্রতিবেশীদের সাহায্যও। একলা থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাশাপাশি তাঁদের আত্মীয়দেরও নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া উচিত।”
নাগরিক সচেতনতার পাশাপাশি লালবাজার অবশ্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সাহায্যে প্রণাম নামের একটি প্রকল্প চালু করেছে। ২০০৮ সালে প্রথমে লেক থানায় ওই প্রকল্প চালু হয়। পরের বছর কলকাতা পুলিশ তা শহরের সব থানায় চালু করে। সোমবার রাতে লেক থানা এলাকারই যতীন দাস রোডে একটি ফ্ল্যাট থেকে কমলাদেবী মিন্ত্রি নামে এক বৃদ্ধার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ওই বৃদ্ধা একা থাকলেও প্রণামের সদস্য ছিলেন না।
পুলিশ জানায়, প্রথমে প্রণাম প্রকল্পের সদস্য হতে হবে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। এর পরে তাঁরা বিপদে পড়লে শুধুমাত্র একটি ফোন করলেই পুলিশি সাহায্য মিলবে। এর জন্য তাঁদের আর পুলিশকে নিজের বাড়ির ঠিকানা বা অন্য তথ্য জানাতে হবে না। শুধু নাম বললেই পুলিশ তাঁর পৌঁছে যাবে। লালবাজারের কর্তারা জানান, প্রকল্পের জন্য কলকাতা পুলিশের প্রতি থানায় এক জন অফিসারের নেতৃত্বে চার জন করে পুলিশকর্মীকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, ডিসেম্বর পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের ৬৯টি থানা এলাকায় প্রণামের সদস্য দশ হাজারের কিছু বেশি। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (৩) দেবাশিস রায় বলেন, “অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের কাছে বার বার আবেদন করছি ওই প্রকল্পের সদস্য হওয়ার জন্য। তাঁদের সহায়তা করার জন্যই প্রণাম চালু করা হয়েছে।”
ছ’বছরের বেশি সময় কেটে গিয়েছে প্রণাম প্রকল্প চালু হওয়ার পরে। কিন্তু তার সদস্য সংখ্যা এত কম কেন? কলকাতা পুলিশ এলাকায় উত্তর বিভাগের একটি থানায় কাজ করা এক অফিসার বলেন, “ঘটা করেই প্রকল্প চালু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তার সদস্য নিয়োগে বেশ খামতি থেকে গিয়েছে।” প্রণামের প্রচার এখন করা হয় না বলেও পুলিশের একাংশের অভিযোগ।
তবে ওই অভিযোগ মানতে চাননি লালবাজারের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, “কোনও বাড়িতে নতুন পরিচারিকা-পরিচারক নিয়োগ করার আগে আমার যেমন তাঁদের বিস্তারিত তথ্য থানায় জমা দিতে বলি, তেমনই কোনও বাড়িতে একলা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকলে তাঁদেরও আমরা সব সময় প্রণামের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন জানাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy