Advertisement
E-Paper

পাসপোর্ট সম্বল করে কেল্লাফতের ছক কষে সিকন্দর

শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়। বিদেশে চাকরির জন্য একটি পাসপোর্ট-ই পুঁজি। এ ভাবেই বিদেশে গিয়ে টাকা রোজগারের সহজ রাস্তা বেছে নিয়েছিল একবালপুরের মা ও দুই মেয়েকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সিকন্দর। তবে শুধু সিকন্দরই নয়, বন্দরের খিদিরপুর-মেটিয়াবুরুজ এলাকার বহু যুবকই সহজে টাকা রোজগারের জন্য বেছে নিয়েছে এই পথ। তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, পাসপোর্ট থাকলে স্কুলের গণ্ডি না টপকালেও বিদেশে চাকরি পাওয়া যায়। এ ভাবে উপার্জন করা মোটা টাকা দেশে ফিরে নানা ভাবে ওড়ান ওই যুবকদের একাংশ।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৩:১১

শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়। বিদেশে চাকরির জন্য একটি পাসপোর্ট-ই পুঁজি। এ ভাবেই বিদেশে গিয়ে টাকা রোজগারের সহজ রাস্তা বেছে নিয়েছিল একবালপুরের মা ও দুই মেয়েকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সিকন্দর।

তবে শুধু সিকন্দরই নয়, বন্দরের খিদিরপুর-মেটিয়াবুরুজ এলাকার বহু যুবকই সহজে টাকা রোজগারের জন্য বেছে নিয়েছে এই পথ। তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, পাসপোর্ট থাকলে স্কুলের গণ্ডি না টপকালেও বিদেশে চাকরি পাওয়া যায়। এ ভাবে উপার্জন করা মোটা টাকা দেশে ফিরে নানা ভাবে ওড়ান ওই যুবকদের একাংশ।

ফ্ল্যাট বাড়ির দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে একবালপুরের সুধীর বসু রোডে মা ও দুই মেয়েকে খুনের ঘটনায় ধৃত সিকন্দরকে জেরা করে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, সিকন্দর বেশ কয়েক বছর ধরে হংকং-এ যাতায়াত করছে। সম্প্রতি একাধিক বার হংকং গিয়েছে সে। ওখানে চাকরিও করেছে বলে তদন্তকারীদের কাছে স্বীকার করেছে সিকন্দর। তার পরে ফের দেশে ফিরে এসেছে। হংকং-এর বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় চাকরি করেছে সে। এর মধ্যে কোনও শপিং মলে ফাই-ফরমাশ খাটার চাকরিও জুটেছিল। ফেরার পথে বিদেশি পণ্য কলকাতায় নিয়ে এসেছে সিকন্দর। তদন্তকারীরা জেনেছেন, বিদেশে চাকরির বেতন-সহ পণ্য আনার জন্য এলাকার ব্যবসায়ীদের একাংশের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল সে। তদন্তকারীদের সিকন্দর জানিয়েছে, শুধু সে-ই নয়, ঠিক এ ভাবেই বন্দর এলাকার একবালপুর, ওয়াটগঞ্জ, পশ্চিম বন্দর ও মেটিয়াবুরুজ থানা এলাকায় বহু যুবক মোটা রোজগার করে থাকেন।

কী ভাবে? এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, একটি পাসপোর্টে বছরে সরকারি দরে ভারতীয় মুদ্রার বিনিময়ে সাড়ে তিন হাজার ডলার পাওয়া যায়। সাধারণ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও পর্যটনের জন্য বছরে সাড়ে তিন হাজার মার্কিন মুদ্রা বরাদ্দ রয়েছে। আর সরকারি দরে পাওয়া ডলার ব্যবসায়ীদের কাছে মুনাফার হাতছানি।

তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, এই যুবকদের একটি বড় অংশ নিজের পাসপোর্ট আমদানি ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেন। পাসপোর্টের মালিকের নামে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী ভারতীয় মুদ্রার বিনিময়ে সাড়ে তিন হাজার ডলার তুলে নেন ওই ব্যবসায়ী। সরকারি দরে পাওয়া ওই ডলার পাসপোর্টের মালিকের বদলে বকলমে আমদানি ব্যবসায়ীর হাতে চলে যায়।

এর পরে পাসপোর্টের মালিককে হংকং-ব্যাঙ্কক-সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার জন্য তিন মাসের পর্যটন ভিসা নেওয়া হয়। তার পরে ওই শহরে পাসপোর্ট মালিকের জন্য কোনও রেস্তোরাঁ অথবা শপিং মলে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। থাকা ও খাওয়ার খরচ বাদে ভারতীয় মুদ্রায় মাসিক প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা বেতনের চাকরিরও ব্যবস্থা করা হয়। প্রয়োজনে কোনও কোনও ক্ষেত্রে পর্যটন ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। কেউ কেউ ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বছরখানেকও থেকে যান সেখানে। ভিসা শেষ হওয়ার পরে বেতনের টাকায় ওই আমদানি ব্যবসায়ীদের পরামর্শ অনুযায়ী বিদেশি জামা নিয়ে দেশে ফেরে পাসপোর্টের মালিক। সে ক্ষেত্রে বেতনের টাকায় পণ্য এনে তা আমদানি ব্যবসায়ীদের বিক্রির পরেও আর এক দফায় লাভবান হয় ওই পাসপোর্ট মালিক।

ওই যুবকদের একাংশ অবশ্য বিদেশে চাকরি না করেও পণ্য আমদানির ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে কাজ করে নিয়মিত মোটা টাকা রোজগার করেন। কী ভাবে?

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে আসার সময়ে বাড়তি বিমান ভাড়া না দিয়েও কিছুটা পণ্য নিয়ে আসা যায়। কোনও যাত্রী বিমানে এলে ব্যাগেজে ৪০ কেজি ও হ্যান্ড ব্যাগেজে ৭ কেজি পণ্য বিনা ভাড়ায় নিয়ে আসতে পারেন। এই সমস্ত ক্ষেত্রে নানা বিমান সংস্থার কয়েকটি ছাড়ও রয়েছে। যেমন, বছরে পাঁচ বারের বেশি যাতায়াত করলে সিলভার কার্ড এবং ১০ বারের বেশি যাতায়াত করলে গোল্ডেন কার্ড হোল্ডার হওয়া যায়। এ রকম সিলভার কার্ডে অতিরিক্ত ১০ কিলোগ্রাম এবং গোল্ডেন কার্ডে আরও ২০ কেজি পণ্য নিয়ে আসা যায়। এ ভাবে পাসপোর্টের দৌলতে ক্যারিয়ারের কাজ করে সংসার চালান ওই সব এলাকার অনেক বাসিন্দা।

subhashis ghatak ekbalpur incident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy