জনশূন্য বিমানবন্দর স্টেশন। নিজস্ব চিত্র
স্টেশনের নাম বিমানবন্দর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৯টি ট্রেন ছাড়ে। সারাদিন ধরে টিকিট বিক্রি হয় গড়ে ১৫০ থেকে ২০০টি। দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে কত জন যাত্রী আছে, আঙুল গুনেই তা বলে দেওয়া যায়।
স্টেশনের নাম যশোহর রোড। “দাদা, টিকিট কাউন্টারটা কোথায়? টিকিট কাটব।” এক যাত্রীর প্রশ্নের উত্তরে আর এক জন বললেন, “টিকিট কাউন্টার এই স্টেশনে আর নেই। অনেক দিন হল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ট্রেনে উঠে পড়ুন। দমদমে টিকিট চেকার ধরলে বলবেন যশোহর রোড স্টেশন থেকে উঠেছি। ছেড়ে দেবে।”
আট বছর হয়ে গেল। এ ভাবেই চলছে বিমানবন্দর থেকে দমদম, শিয়ালদহগামী লোকাল ট্রেন। সম্প্রতি তৈরি হয়েছে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন আন্তর্জাতিক টার্মিনাল। সেই সঙ্গে যাত্রীদের সুবিধার জন্য তৈরি হয়েছে নতুন বাস, ট্যাক্সিস্ট্যান্ডও। নতুন টার্মিনালকে কেন্দ্র করে পরিকাঠামোর উন্নতি হলেও অভিযোগ, বিমানবন্দর রেল স্টেশনের অবস্থা যে কে সেই। বরং আরও খারাপ হচ্ছে। অভিযোগ, পরিকাঠামোর অভাব, ট্রেনের সংখ্যা কম, মাঝেমধ্যেই ট্রেন বাতিল সব মিলিয়েই ধুঁকছে এই রেল-রুট। শুধু বিমানবন্দর স্টেশনই নয়, ঠিক পরের স্টেশন যশোহর রোডের অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে তো বহু দিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে টিকিট কাউন্টারও।
২০০৬ সালে লালুপ্রসাদ যাদব যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন উদ্বোধন হয়েছিল এই রুটের। লালুপ্রসাদই উদ্বোধন করেছিলেন এই স্টেশন। উদ্দেশ্য ছিল বিমানবন্দর থেকে খুব কম সময়ে ও কম খরচে যাত্রীদের দমদম বা শিয়ালদহে পৌঁছে দেওয়া। যেখান থেকে যাত্রীরা শহরের যে কোনও জায়গায় খুব সহজে চলে যেতে পারবেন। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে দমদম স্টেশন যেতে সময় লাগে মাত্র পনেরো মিনিট। আর সেখান থেকে মেট্রো রেল, চক্র রেল, এমনকী শহরতলি যাওয়ার লোকাল ট্রেনও মেলে সহজেই। বিশেষত বিমানযাত্রীদের এই সুবিধার কথা ভেবেই তৈরি হয় এই রেল-রুট।
তবে বিমানবন্দর স্টেশনে ঘুরে দেখা গেল, বসার একটি চেয়ারও আস্ত নেই। বিমানযাত্রীদের ব্যাগ নিয়ে স্টেশনে ওঠার জন্য লিফ্ট থাকলেও তাঁদের ব্যাগ রাখার জায়গা বা ওয়েটিং রুম কিছুই নেই। শৌচাগারের অবস্থাও তথৈবচ। বিকেল তিনটেয় দাঁড়িয়ে থাকা দমদমমুখী আট কামরার লোকাল ট্রেনের যাত্রীসংখ্যা সাকুল্যে ২৪। সেখানকার স্টেশন মাস্টার জানালেন, সারাদিন ধরেই যাত্রী সংখ্যা খুব কম। বিমানবন্দরে যারা কাজ করেন অথবা রেলে চাকরি করেন, এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। স্টেশন মাস্টারের মতে, ট্রেনের সংখ্যা কম বলেই এই সমস্যা। ট্রেনের সংখ্যা বিশেষত বিকেলে ও সকালে যদি বাড়ানো যেত, তা হলেই বাড়ত যাত্রী সংখ্যা।
অন্য দিকে, রেল জানাচ্ছে যাত্রী নেই, তাই বাড়ানো যাচ্ছে না ট্রেন। রেলের মুখ্য জনসংযোগ অফিসার রবি মহাপাত্র বলেন, “যাত্রী নেই, তাই ট্রেন বাড়িয়ে লাভ কী? একটি লাইন আছে। ট্রেন চলছে। এই পর্যন্তই। এই রুটে যাত্রী বাড়লেই ট্রেন বাড়াব।”
সাধারণ যাত্রীরা অবশ্য রেলের এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, যাত্রী তখনই বাড়বে যখন ভাল পরিষেবা পাওয়া যাবে। যশোহর রোড স্টেশন সংলগ্ন এক বাসিন্দার অভিযোগ, ওই রাস্তা লাগোয়া এক নম্বর মোড়ের একদম কাছে এই স্টেশনে ন্যূনতম একটি টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত নেই। স্টেশনে ঢোকার গেট যেহেতু সব সময় খোলা, তাই রাত বাড়লে স্টেশনে মদ-জুয়ার আড্ডা বসে। অথচ এই স্টেশনের পরিকাঠামো ভাল থাকলে শুধু বিমানযাত্রীরাই নন, উপকৃত হতেন বিমানবন্দর ও দমদম এলাকার অনেক মানুষও।
রবিবাবু অবশ্য বলেন, “এই অসুবিধা আর বেশি দিন থাকবে না। বিমানবন্দরের এই রেল-রুট মেট্রো হয়ে যাচ্ছে। দমদম থেকে নোয়াপাড়া হয়ে বিমানবন্দর আসবে মেট্রো। কাজও কিছুটা হয়ে গিয়েছে।” যদিও সাধারণ মানুষের বক্তব্য, এই রুট মেট্রো হবে, এ কথা তো তাঁরা অনেক দিন ধরেই শুনছেন। মেট্রোর কাজ হলেও তা খুবই ধীর গতিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy