আলো-বিহীন পথে এ ভাবেই যান চলাচল। নিজস্ব চিত্র।
ঝাঁ-চকচকে রাস্তা। দু’ধারে বাতিস্তম্ভ। অথচ, কোথাও আলোর রেশমাত্র নেই। শহরের খাসতালুক বাসন্তী হাইওয়ের আপাতত এটাই ছবি। রাস্তা অন্ধকার হওয়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনা। কিন্তু এক দিকে পূর্ত দফতরের ভাঁড়ারে টানাটানি আর অন্য দিকে সরকারি লাল ফিতের গেরোর টানাপোড়েনে আলো লাগানোর কাজ শিকেয় উঠেছে। তাই এ বার দুর্ঘটনা আটকাতে রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুলিশ।
২০১১-এর সেপ্টেম্বরে বাসন্তী হাইওয়ের বানতলা পর্যন্ত এলাকা কলকাতা পুলিশের আওতায় আসে। তার পরে এই রাস্তায় এত দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে পুলিশ কিছু তথ্য জানতে পারে এই রাস্তায় গাড়ির চাপ এমনিই যথেষ্ট বেশি, বিকেলের পরে তা আরও বাড়ে। রাস্তায় বেশ কিছু বাঁকের আগে কোনও স্পিড ব্রেকার বা চালককে সতর্ক করার জন্য বোর্ড না থাকায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটত। বেশির ভাগ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে গাড়ি কয়লা ডিপো এলাকায় রাস্তার পাশের খালে পড়ে যেত।
কলকাতা পুলিশেরই উদ্যোগে চারটি গুরুতর বাঁকে স্পিড ব্রেকার লাগানো হয়। রাস্তার দু’দিকের সব পোস্টে রিফ্লেক্টিভ টেপ এবং চালকদের সতর্ক করতে রিফ্লেক্টিভ সাইনাস লাগানো হয়। খাল এলাকায় রাস্তার পাশে কংক্রিটের দেওয়াল তৈরি করা হয় এবং সৌরশক্তি চালিত ব্লিঙ্কার লাগানো হয়। কিন্তু এতেও দুর্ঘটনা না কমায় আলো লাগানো জরুরি হয়ে পড়ে।
রাস্তাটি পূর্ত দফতরের অধীনে হওয়ায় তাদের যোগাযোগ করে কলকাতা পুলিশ। সমীক্ষা করে পূর্ত দফতর জানায় বানতলা বাজার পর্যন্ত মোট ৪৮৮টি বাতিস্তম্ভ বসাতে আনুমানিক ৬৩ লক্ষ টাকা খরচ হবে। কিন্তু এই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাজ করা সম্ভব নয়।
পূর্ত দফতরের দাবি, এলাকাটি ফাঁকা, ফলে প্রচুর চুরি হয়। আট বছর আগে ১০ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে আলো লাগানোর মাসখানেকের মধ্যেই মিটার, তার, আলো-সহ যাবতীয় জিনিস চুরি হয়ে যায়। তা ফের লাগাতে প্রচুর টাকা প্রয়োজন। এ নিয়ে আগে বহু বার দফতরে আলোচনা হলেও অনুমোদন মোলেনি। ফের অনুদান চেয়ে একটি আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে, কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, রাস্তাটি পূর্ত দফতরের। তাই পুরসভা সেখানে আলো লাগাতে গেলে সরকারি নিয়মের ফাঁস রয়ে যাচ্ছে। তা না মিটলে কাজ করা সম্ভব নয়।
কলকাতা পুলিশের তরফে ট্রাফিক পুলিশের স্পেশ্যাল সিপিকেও চিঠি দিয়ে এই বিষয়ে উদ্যোগী হতে আবেদন করা হয়েছে। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “পূর্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে আমরাও বিষয়টি দেখছি।”
পূর্ত দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস বিশ্বাস বলেন, “আলো লাগাতে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার তরফ থেকে আমাদের কাছে বার বার চিঠি এসেছে। সংস্থাটি পুরসভা ও পুলিশকেও বিষয়টি দেখতে বলেছে। কিন্তু টাকার অভাবে আমাদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।” তবে তিনি জানান, পুরসভার সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে।
এ দিকে কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, পূর্ত দফতরের এলাকায় পুরসভা আলো লাগাতে গেলে যে সব সরকারি নিয়ম মানতে হয় সেই কাজই বর্তমানে চলছে।
এই টানাপোড়েনে বন্ধ হয়ে রয়েছে রাস্তার আলো লাগানোর কাজ। আর অন্ধকারে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy