Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বিয়েবাড়িতে নাচ গড়াল খুনে

বিয়েবাড়িতে নাচগানকে কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে এক যুবককে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছেন অন্য দুই যুবক। শুক্রবার বেশি রাতে ঘটনাটি ঘটে এন্টালির মালিপাড়ায়। নিহতের নাম চন্দন ঘোষ (২১)। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ঘটনাস্থলের কাছে টহলদারি পুলিশ থাকলেও তারা নিষ্ক্রিয় ছিল।

চন্দন ঘোষ।

চন্দন ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০১:০৪
Share: Save:

বিয়েবাড়িতে নাচগানকে কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে এক যুবককে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছেন অন্য দুই যুবক। শুক্রবার বেশি রাতে ঘটনাটি ঘটে এন্টালির মালিপাড়ায়। নিহতের নাম চন্দন ঘোষ (২১)। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ঘটনাস্থলের কাছে টহলদারি পুলিশ থাকলেও তারা নিষ্ক্রিয় ছিল। অভিযোগ অস্বীকার করে লালবাজারের পুলিশকর্তাদের পাল্টা দাবি, ঘটনার রাতে মালিপাড়ায় পুলিশি টহল ছিল। কিন্তু তাদের সামনে ওই যুবককে খুন করা হয়নি। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।

কী হয়েছিল ওই রাতে? নিহতের আত্মীয় জখম বিশু সরকার বলেন, “দুর্গামাঠে পাড়ার একটি মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। বরযাত্রীদের কয়েক জন খাওয়াদাওয়ার পরেও সেখানে ছিলেন। মাইকে গান বাজছিল। তখন আমি, আমার ভাই টিঙ্কু ও চন্দন মণ্ডপে সোফায় বসেছিলাম।” ওই যুবকের অভিযোগ, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ সুধা দাস নামে পাড়ার এক বাসিন্দা হঠাত্‌ই নাচতে শুরু করলে তিনি ওই মহিলার স্বামী টোটনকে ডেকে তাঁকে ঘরে নিয়ে যেতে বলেন। বিশুর বক্তব্য, তাঁর কথায় টোটন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সকলের জোরাজুরিতে টোটন তখনকার মতো চলে গেলেও ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে যায় বিশুকে।

স্থানীয়েরা পুলিশকে জানিয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই টোটন ফিরে আসে। সঙ্গে দলবল। তাদের অনেকেরই হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল বলে প্রতিবেশীদের অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, তখনই বিশু ও তাঁর ভাই টিঙ্কু চপারের আঘাতে গুরুতর জখম হন। এর পরে টোটনরা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। বিশু বলেন, “আমাদের চিত্‌কারে তিন-চার জন পুলিশকর্মী ছুটে আসেন। তাঁরাই আমাকে ও ভাইকে দিয়ে অভিযোগ লেখাতে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেন।” পাড়ার লোকজনের অভিযোগ, বিশুদের থানার গাড়িতে উঠছে দেখে টোটনরা ভাবে পুলিশ ওদেরই গ্রেফতার করেছে। ফলে ফের দলবল নিয়ে এলাকায় ফেরে তারা।

পুলিশ জেনেছে, ওই সময়ে পাড়ার একটি নির্মীয়মাণ মন্দিরের সামনে একা দাঁড়িয়েছিলেন চন্দন। অভিযোগ, টোটনের সঙ্গীরা তখনই তাঁর উপরে হামলা চালায়। চন্দনের বাঁ হাতের কনুই ও উরুতে উপর্যুপরি কোপ মারা হয়। প্রাণ বাঁচাতে অলিগলি দিয়ে ছুটতে শুরু করেন চন্দন। কিন্তু কিছুটা দূরেই আততায়ীরা তাঁকে ধরে ফেলেন। ফের সেখানে কোপানো হয় চন্দনকে। তার পরেও বাঁচার একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন ওই যুবক। কিন্তু পারেননি। পুলিশ জানায়, নিজেরই বাড়ির খুব কাছে একটি গলির মুখে মুখ থুবড়ে পড়ে যান চন্দন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের জন্য ওটি-তে ঢোকানো হলেও কিছুক্ষণেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই রাতেই নিহতের দাদা অমিত ঘোষ এন্টালি থানায় টোটন, সুধা এবং তাঁদের তিন সঙ্গী মিঠু, সন্তু ও বুচোর নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, টোটন ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও গুন্ডামির বহু অভিযোগ রয়েছে। একাধিক বার তারা পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছে।

এ দিন সকালে দেখা যায়, তখনও মালিপাড়ার একাধিক গলিতে রক্ত চাপ বেঁধে রয়েছে। মোড়ে মোড়ে স্থানীয়দের জটলা। চন্দনের বাড়িতে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মৌসুমী অঝোরে কেঁদে চলেছেন। নিহতের বাবা রমেশ ঘোষ জানান, চন্দন আগে গাড়ি চালাতেন। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বেশি সময় দেওয়ার জন্য সম্প্রতি সে স্থানীয় এক প্রোমোটরের কাছে কাজ নিয়েছিলেন। পুলিশ বলছে, সেই কাজ নেওয়াই কাল হয়েছিল চন্দনের। তিনি যে প্রোমোটরের কাছে কাজ শুরু করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে সেখানকারই এক প্রোমোটরের ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। অন্য প্রোমোটারের ঘনিষ্ঠ টোটন। সেই সূত্রে পুরনো আক্রোশে চন্দনকে ছক কষে খুন করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

রমেশবাবু ও পাড়ার লোকজনের অভিযোগ, বিশুদের যখন কোপানো হয়, তখন টোটন এলাকাতেই ছিল। পুলিশও ছিল কাছেই। বিশু যখন পুলিশকে জানিয়েছিল, টোটন ও তার দলবল কুপিয়েছে, তখন পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করে অভিযোগকারীদের কেন থানার গাড়িতে তুলেছিল, প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তা নিয়ে। চন্দনের বাবার আফশোস, পুলিশ প্রথম দফায় টোটনকে ধরে ফেললে তাঁর ছেলেকে এ ভাবে অকালে মরতে হত না। এ দিন দুপুরে নিহতের বাড়িতে যান কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ও ডেপুটি কমিশনার (ইএসডি) ধ্রুবজ্যোতি দে। সেখানে দাঁড়িয়েই প্রদীপবাবু এন্টালি থানার ওসি অতনু তরফদারকে ডেকে প্রশ্ন করেন, “টহলদারি পুলিশ তো এলাকায় ছিল। তা সত্ত্বেও এই ঘটনা এড়ানো গেল না?” নিরুত্তর থাকেন ওসি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE