ফের আগুন লাগল বহুতলে। এ বার দক্ষিণ কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটের শান্তিনিকেতন বিল্ডিংয়ে। মঙ্গলবারের এই ঘটনায় পুড়ে যায় বাড়িটির দোতলায় থাকা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অফিসঘর। এ ছাড়াও পুড়ে গিয়েছে যাবতীয় নথিপত্র ও কম্পিউটার। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ওই ভবনের এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, সকালে ওই বহুতলের নীচে এক ও দু’নম্বর লিফ্টের কাছে ডিউটি করছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আরও তিন জন। তিনি বলেন, “সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ হঠাৎ দেখি দোতলার জানলা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। একে একে ভাঙতে থাকে কাচের জানলা। খবর দেওয়া হয় দমকলে।” তিনি জানান, প্রথমে নিজেরাই জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও পরে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দোতলার অফিসটি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। তবে আর কোথাও আগুন ছড়ায়নি। এ দিন ঘটনার পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল গোটা ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ। বন্ধ করা হয় ১৬ তলা ওই ভবনের মোট পাঁচটি লিফ্টও।
এ দিনের ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও বহুতলটির অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওই ভবনে থাকা বিভিন্ন সংস্থার কর্তৃপক্ষ। ওই ভবনের বিভিন্ন কর্মচারীদের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তাঁরা। এই ভবনেই রিয়্যাল এস্টেটের অফিস রয়েছে গিরিধারীলাল শর্মার। তাঁর অভিযোগ, “এখানে বেসমেন্টে অনেকেই প্রকাশ্যে ধূমপান করেন। বারবার বলেও তা বন্ধ করা যায়নি।’’ শরৎ টেডিয়ার নামে এক ব্যবসায়ী জানান, বহুতল কর্তৃপক্ষকে সব জায়গায় ‘ফায়ার-ফাইটিং’ সিস্টেম রাখতে বলেছিলাম। আগুন লাগলে জল দেওয়ার যে পাইপ রয়েছে, তা-ও নিয়মিত দেখভালের জন্য বারবার আবেদন করেছিলাম। বিপদে পড়লে বাঁচার জন্য এই বহুতলের ভিতরের মানচিত্রের প্রতিলিপি চেয়েও আবেদন করি। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি।” এই বহুতলে বিভিন্ন ক্যুরিয়ার সংস্থার অফিস রয়েছে। বহুতলের একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, বেসমেন্টে দিনের পর দিন মজুত থাকে ওই অফিসগুলির ক্যুরিয়ারের সামগ্রী। এই নিয়ে একাধিক বার জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের।
যদিও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ‘শান্তিনিকেতন বিল্ডিং’ কর্তৃপক্ষ। বহুতলের ম্যানেজার বিজয় অগ্রবাল বলেন, “দুর্ঘটনা যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে। তবে আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা অনেক উন্নত।”
এই বহুতলে একটি বেসরকারি বেতার সংস্থা ও সংবাদপত্রের অফিসও রয়েছে। ওই বেতার সংস্থার সঞ্চালক মীর বলেন, “অফিসে ঢোকার সময়ে আগুন দেখি। এখন ক’দিন লিফট বন্ধ থাকবে। আজকের ঘটনায় অনেক বড় ক্ষতি হতে পারত। দমকলের তৎপরতায় আমরা বেঁচে গিয়েছি।”