Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মিউটেশনের ‘দুষ্টচক্র’ ফাঁস পুরসভায়

এ যেন রক্ষকই ভক্ষক। পুর এলাকার খাটাল, জলাভূমি এবং খাস জমিতে মিউটেশন না দেওয়ার দায়িত্ব যাঁদের উপর, পুরসভার সেই কর-মূল্যায়ন দফতরের ‘সহায়তা’য় বদলে গেল জমির চরিত্র। অভিযোগ, দক্ষিণ কলকাতার ৮০বি কসবা-বোসপুকুর রোডের প্রায় তিন বিঘা জমি বেআইনি ভাবে মিউটেশন করে দিয়েছে ওই দফতর।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০০:২১
Share: Save:

এ যেন রক্ষকই ভক্ষক।

পুর এলাকার খাটাল, জলাভূমি এবং খাস জমিতে মিউটেশন না দেওয়ার দায়িত্ব যাঁদের উপর, পুরসভার সেই কর-মূল্যায়ন দফতরের ‘সহায়তা’য় বদলে গেল জমির চরিত্র। অভিযোগ, দক্ষিণ কলকাতার ৮০বি কসবা-বোসপুকুর রোডের প্রায় তিন বিঘা জমি বেআইনি ভাবে মিউটেশন করে দিয়েছে ওই দফতর। গত বছরের ঘটনা হলেও সম্প্রতি তা পুর প্রশাসনের নজরে এসেছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই কর-মূল্যায়ন দফতরের চার অফিসারকে শোকজ করেছেন পুর কমিশনার। সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই মিউটেশন বাতিল করা হবে। যদিও ওই ঘটনার জন্য পুরসভার কর-মূল্যায়ন দফতরের চিফ ম্যানেজারও দায়ী বলে পুরসভার অন্দরমহলে অভিযোগ উঠেছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বলেন, “ওই ঘটনায় কাউকে ছাড়া হবে না। দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হচ্ছে।” অন্য দিকে, ওই জমি যাঁরা কিনেছেন তাঁদেরই একজনের অভিযোগ, “ওই কাজ করানোর জন্য পুরসভায় ৭৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।

কী হয়েছে সেখানে?

পুরসভার নথি অনুযায়ী বহু কাল আগে ৮০ নম্বর কসবা-বোসপুকুরের ঠিকানায় একটি জলাশয় ছিল। পরে ওই জলাশয়ের একটা অংশ ৮০বি ঠিকানায় চিহ্নিত হয়। অর্থাৎ জলাশয় থেকে জমিকে আলাদা করার জন্য ওই পৃথকীকরণ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আর সেই কাজ পুর কমিশনারের কোনও অনুমোদন ছাড়াই করা হয়েছে যা পুরো বেআইনি।

সেখানেই শেষ নয়, ওই জমিটি কিনেছেন ২১ জন ব্যক্তি। তাঁদের প্রত্যেকের নামেই পৃথক দলিল বানানো হয়েছে। পুরসভার নিয়মানুযায়ী একটি জমির দলিল একটি ঠিকানায় হবে।

পুরসভার কর দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ওই জমিটি মিউটেশন করার জন্য গড়িয়াহাট কর-মূল্যায়ন দফতরে আবেদন জানানো হয়। ২১ জন একসঙ্গেই মিউটেশনের জন্য আবেদন জানান।” যদিও ওই জমি মিউটেশন করা বেআইনি বলে জানান ওই অফিসার।

অভিযোগ উঠেছে, গড়িয়াহাট শাখার এক ডেপুটি অ্যাসেসর কালেক্টরের যোগসাজসে মিউটেশন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পুরসভার যুগ্ম কমিশনার দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “জলাশয়ের চরিত্র বদলের ক্ষেত্রে নজর রাখার জন্য পুরসভার ওয়াটার বডি ম্যানেজমেন্ট বোর্ড রয়েছে। সেই বোর্ডের অন্যতম সদস্য কর-মূল্যায়ন দফতরের চিফ ম্যানেজার।” নথি বলছে, গত বছরের ১১ জুলাই সেই বোর্ডের বৈঠকে এই ‘বেআইনি’ কাজও পাশ হয়ে যায়। কর দফতরেরই এক অফিসারের কথায়, পরে ওই জমিতে বাড়ি করার অনুমতি নিতে আসেন মালিকেরা। বিল্ডিং দফতর জানিয়ে দেয় তাঁদের রেকর্ডে আছে ওটা জলাশয়ের জমি। তাই অনুমতি মিলবে না। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এ দিন ঘটনার কথা স্বীকারও করেন। তিনি বলেন, “কাউকে ছাড়া হবে না।” আগামী ২৬ জুন ওই জমির মালিকদের পুরসভায় ডাকা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE