ব্রাজিল বা আর্জেন্তিনার ফুটবলের পাশে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলকে পাতে দেওয়া যায় না তো কী! মেসি-নেইমারদের আনন্দ-যন্ত্রণায় একাকার হয়ে যেতে পরোয়া করেনি বাঙালি। অনেকটা একই ভাবে ভোজ-রীতিতেও ব্রাজিল বা আর্জেন্তিনাই এখন পথ দেখাচ্ছে তাকে। সুখাদ্য নিয়ে শহুরে আমোদের ধারায় লাতিন আমেরিকান মেজাজেই যেন কথা বলছে কলকাতা।
সোজা বাংলায় বলতে গেলে, রেস্তোরাঁর টেবিলে এখন নানা কিসিমের রাশি রাশি সেঁকা-পোড়া মাছ-মাংসের দাপট। এ সব বার্বিকিউ বা গ্রিল করা খানায় ডুবে ক্লান্ত হয়ে পড়া পর্যন্ত নিস্তার নেই। পেলে বা মারাদোনার দেশে এমন ভোজ দারুণ জনপ্রিয়। এ ধরনের রেস্তোরাঁকে বলে গাউচো। ব্রাজিল-আর্জেন্তিনার ঢঙে এমন গাউচো এখন বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত চার-পাঁচ বছর ধরে বেশ কিছু কাবাব-সমৃদ্ধ সেট মিলের মেনু এ শহরের রসিক খাইয়ের মন জয় করেছে। বাইপাসের ধারে সিগ্রি রেস্তোরাঁর নয়া অবতারকে দেখে তা-ই মালুম হবে। সিগ্রি-র নতুন নাম এখন সিগ্রি গ্লোবাল গ্রিল। সেখানে ব্রাজিল, আর্জেন্তিনার গাউচো-র ছায়াটি অত্যন্ত স্পষ্ট। তবে সত্যিকারের গাউচোয় বড্ড বেশি মাংসের বাড়াবাড়ি। কলকাতার জন্য সিগ্রি মাছ-মাংস-চিংড়ি ও শাকাহারীদের কথা ভেবে পনির-আলু-সব্জিটব্জিও রেখেছে।
গাউচোয় আর্জেন্তিনার দেবদুর্লভ মাংসে প্রাণ সঞ্চার করে ব্রাজিলিয়ান বার্বিকিউ-শৈলী বা চুরাস্কো। সিগ্রিতে অনেকটা সেই ঢঙেই টেবিলে সার-সার তপ্ত শিকে গাঁথা মাছ-মাংস মজুত। ধরা যাক, একই সঙ্গে মরোক্কো-আলজিরিয়ার টকটকে লঙ্কাদীপ্ত (বেশি ঝাল কিন্তু নয়) চিংড়ির পাশে ইতালিয়ান পেস্তো সস-জারিত চিকেনের সহাবস্থান। মঙ্গোলিয়ান সয়া বা অয়স্টার সসে স্নাত ল্যাম্বের সঙ্গেও দেখা হতে পারে। আবার বাঙালি সর্ষে চিংড়ি, দেশি কালি মির্চ-হরি মির্চের চিকেন বা জোয়ানগন্ধী মাছের টিক্কাও ব্রাত্য নয়। নিরামিষখোরদের জন্যও সমসংখ্যক পছন্দ থাকছে।
থাকছে নানা ধরনের স্যালাড, দেশ-বিদেশের পাঁউরুটি ও মানানসই ডিপ এবং পাস্তা বা পিৎজা। এবং মেনকোর্সে বিরিয়ানি থেকে শুরু করে নানা দেশের ঢালাও পদ। সিগ্রির বিখ্যাত কালি ডাল বা শ্যামদেশীয় চিংড়ি পেয়ে গেলে তো সোনায় সোহাগা। ডেজার্ট-পর্বটাও কাব্যে উপেক্ষিত নয়। ব্রাউনি, রকমারি টার্ট, গুলাবজামুন, রাবড়ি-টাবড়ি মিলবে।
দুপুরে অনেকেরই বুফে পছন্দ। ক্রমশ গ্রিল বা কাবাবগোছের রান্না বুফের প্রাণভোমরা হয়ে উঠছে। গ্লোবাল গ্রিল-এর ফর্মুলা মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরুতেও জমে উঠেছে। দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কাবাব ফ্যাক্টরি এবং অ্যাবসোলিউট বার্বিকিউ নামে একই ঘরানার দু’টি রেস্তোরাঁ চলছে দেশের বিভিন্ন ছোট-বড় শহরে। এ দেশে এমন কাবাববহুল বুফে-ভোজে পথ দেখিয়েছিল বার্বিকিউ নেশন। কলকাতার সেক্টর ফাইভেও তারা জ্বলজ্বল করছে। গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের খানা খাজানা নিয়ে বাবির্কিউ নেশন এই মুহূর্তে এক উৎসবের আয়োজন করেছে। তাতে অমৃতসরি মাছ থেকে বাঙালি কাসুন্দি চিংড়ি অবধি জিটি রোডের ধারের নানা উৎকর্ষের সম্ভার।
তবে খাবারের এই এলাহি আয়োজন মানেই যে খাইয়ের তৃপ্তি অবশ্যম্ভাবী, সকলে তা মানেন না। প্রবীণ খাদ্যসন্ধ্যানী নন্দন বাগচীর মতে, “সবার পেট তো সমান নয়! একসঙ্গে এত কিছু সবাই খেতে পারেন না। বুফে চোখের খিদেটাই উস্কে দেয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy