Advertisement
১১ জুন ২০২৪

মহিলাকে ‘ধর্ষণে’ ধৃত কাবুলি যুবক

রাত প্রায় সাড়ে ন’টা। আচমকাই পার্ক স্ট্রিট থানায় হাজির এক বিবাহিতা মহিলা। থানার অফিসারদের তিনি বললেন, “আমাকে বাড়িতে ডেকে ধর্ষণ করেছে এক যুবক। তার পরে বারংবার হুমকি দিচ্ছে। ফের ওই বাড়িতে ডেকেও পাঠাচ্ছে।” মঙ্গলবার রাতে এই অভিযোগ পেয়েই তড়িঘড়ি এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত যুবককে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০১:৫০
Share: Save:

রাত প্রায় সাড়ে ন’টা। আচমকাই পার্ক স্ট্রিট থানায় হাজির এক বিবাহিতা মহিলা। থানার অফিসারদের তিনি বললেন, “আমাকে বাড়িতে ডেকে ধর্ষণ করেছে এক যুবক। তার পরে বারংবার হুমকি দিচ্ছে। ফের ওই বাড়িতে ডেকেও পাঠাচ্ছে।” মঙ্গলবার রাতে এই অভিযোগ পেয়েই তড়িঘড়ি এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত যুবককে।

পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম শেখ সাদিক। বাড়ি ওয়েলেসলি সেকেন্ড লেনে। আদতে আফগানিস্তানের বাসিন্দা সাদিকের বাবা কাবুলিওয়ালা। সাদিক ও তাঁর বাবা, দু’জনেরই টাকা ধার দেওয়ার ব্যবসা রয়েছে। আরও কয়েক জনের সঙ্গে সাদিক ও তিনি ওয়েলেসলি সেকেন্ড লেনের ওই বাড়িতেই থাকেন।

ঘটনাচক্রে, ২০১২ সালে এই থানাতেই ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের অভিযোগকারিণী মহিলা। অভিযোগে গুরুত্ব দেওয়ার বদলে অভিযোগকারিণীকেই পুলিশের একাংশের কটূক্তি শুনতে হয় বলে অভিযোগ। পরে সেই ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ঘটনার তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হলেও মূল অভিযুক্ত কাদের খান-সহ দু’জন এখনও ফেরার। লালবাজারেরই একাংশ বলছে, মঙ্গলবারের ঘটনাতেও পুলিশ সক্রিয় না হলে অভিযুক্ত শহর ছেড়ে পালাতে পারত। পুলিশের এক কর্তার কথায়, “সাদিক আফগানিস্তানে চলে গেলে তাকে পাকড়াও করাই মুশকিল হত। সে ক্ষেত্রে পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের পরে ফের সমালোচনার মুখে পড়ত লালবাজার।” লালবাজারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের পর থেকেই কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ধর্ষণ-শ্লীলতাহানির মামলায় সক্রিয় হতে বলেছিলেন থানাগুলিকে। মঙ্গলবার রাতে পার্ক স্ট্রিট থানা সেই নির্দেশই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে বলে মনে করছে লালবাজার।

কী ভাবে ওই মহিলার সঙ্গে সাদিকের পরিচয়? পুলিশ সূত্রের খবর, টাকা ধার দেওয়ার ব্যবসার সূত্রেই ওই মহিলা সাদিকের খপ্পরে পড়েছিলেন। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলা সাদিকের বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। মহিলা পুলিশকে জানান, তিনি সুদ ও আসল মিলিয়ে দেনার অনেকটাই মিটিয়ে দিয়েছিলেন। হাজার পঁচিশেক টাকা বাকি ছিল। তাঁর অভিযোগ, সেই বকেয়া টাকা নিয়ে মিটমাট করার জন্য গত ২৬ এপ্রিল তাঁকে ওয়েলেসলি সেকেন্ড লেনের বাড়িতে ডেকে পাঠান সাদিক। তিনি গিয়ে দেখেন, বাড়িতে সাদিক একাই রয়েছেন। মহিলা ঘরে ঢুকতেই সাদিক তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। কিন্তু সেই ঘটনার এত দিন পরে অভিযোগ জানাচ্ছেন কেন?

মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, ধর্ষণের পরে ঘটনা জানাজানি হলে তাঁর ও তাঁর পরিবারের ক্ষতি হতে পারে বলে সাদিক হুমকি দিয়েছিল। পাশাপাশি, ঘটনা জানাজানি হলে সে মহিলার সম্মানহানি করারও হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। মহিলার দাবি, তাই প্রথমে ঘটনার কথা চেপে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরবর্তী কালেও সাদিক তাঁকে ফোন করে ওই বাড়িতে যেতে বলে। না এলে ক্ষতি করার হুমকিও দিতে থাকে সে। এর পরেই তিনি থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ওই মহিলা।

পুলিশ সূত্রের খবর, তড়িঘড়ি এফআইআর করার পরেই মহিলাকে নিয়ে ওয়েলেসলি সেকেন্ড লেনে সাদিকের বাড়িতে হানা দেয় পার্ক স্ট্রিট থানার একটি দল। সাদিক সে সময়ে বাড়িতেই ছিল। মহিলা সাদিককে চিহ্নিত করার পরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। টাকা না পেয়ে সাদিক তাঁর ক্যামেরাটিও কেড়ে নিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন মহিলা। সেটিও উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতেই মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। ওই মহিলা ও তাঁর জামাকাপড়ের ফরেন্সিক পরীক্ষার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। বুধবার সাদিককে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়। ১৩ মে পর্যন্ত তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। অভিযোগকারিণীর পাশাপাশি সাদিক ও তাঁর পোশাকেরও ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rape sekh sadik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE