Advertisement
E-Paper

যুক্তির ছায়ায় ঘন হচ্ছে হোর্ডিংয়ের জঙ্গল

দক্ষিণ কলকাতার হাজরা রোডে পাঁচতলা একটি বাড়ির উপর পর্যন্ত ঝুলে রয়েছে হোর্ডিং। আর এক হোর্ডিংয়ে ঢাকা পড়েছে একটি গাছের বেশির ভাগ অংশ। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের কাছে আবার হোর্ডিং ছিঁড়ে ঝুলছে ছেড়া কাপড়। এ ছবি হাজরা মোড়ের। রাসবিহারী মোড়ে ব্যানারের দাপটে বিপন্ন গাছেরা। ফাঁক দিয়ে দু’একটি গাছ উঁকিঝুঁকি মারছে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে একটি মোবাইল টাওয়ারের নীচের দিকেও লাগিয়ে রাখা হয়েছে হোর্ডিং।

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০১:৪৭

দক্ষিণ কলকাতার হাজরা রোডে পাঁচতলা একটি বাড়ির উপর পর্যন্ত ঝুলে রয়েছে হোর্ডিং। আর এক হোর্ডিংয়ে ঢাকা পড়েছে একটি গাছের বেশির ভাগ অংশ।

শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের কাছে আবার হোর্ডিং ছিঁড়ে ঝুলছে ছেড়া কাপড়। এ ছবি হাজরা মোড়ের।

রাসবিহারী মোড়ে ব্যানারের দাপটে বিপন্ন গাছেরা। ফাঁক দিয়ে দু’একটি গাছ উঁকিঝুঁকি মারছে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে একটি মোবাইল টাওয়ারের নীচের দিকেও লাগিয়ে রাখা হয়েছে হোর্ডিং।

শ্যামবাজার মোড়েও চার দিকেই আকাশ ছুঁয়েছে হোর্ডিং। তাতে ঢাকা পড়ে গিয়েছে আশপাশের বহু দোকানের সাইনবোর্ডও।

বিভিন্ন বড় মোড়ে হোর্ডিংয়ের এই দাপটই এখন চেনা ছবি কলকাতায়। ছোট-বড়, লম্বা-চওড়া নানা ধরনের হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গিয়েছে শহর। কোথাও তাদের নীচে ঢাকা পড়েছে বাড়ির জানলা অথবা গাছের অংশ। কোথাও ছাঁটা হয়েছে ডাল কিংবা ধ্বংস হয়েছে সবুজ।

রাসবিহারী বা গড়িয়াহাটের মোড়ে আবার এক হোর্ডিংয়েই ঢেকে গিয়েছে অন্য হোর্ডিং। মৌলালি-মানিকতলা মোড়-সহ কিছু জায়গায় হোর্ডিংয়ের বদলে নজরে পড়েছে উড়ন্ত ছেঁড়া ব্যানার। শহরে অধিকাংশ মোড়ে বহু ফাঁকা হোর্ডিংয়ের কাঠামো ভেঙে ঝুলে থাকলেও তা সরানো হয়নি। মধ্য কলকাতার ডালহৌসি, ধর্মতলা হোর্ডিং ‘ফ্রি জোন’ হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পরে বেশির ভাগ হোর্ডিং খোলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাড়িগুলিতে এখনও ঝুলছে তাদের লোহার কাঠামো।

ঝুলে থাকা এই সমস্ত লোহার কাঠামো যে বাড়িগুলিরই ক্ষতি করে, সে কথা মানেন অনেকেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও পুরসভার তরফে সেই সব কাঠামো খুলে নেওয়ার তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “বিপজ্জনক বা খোলা হোর্ডিং দেখলে সব সময়েই আমরা সরিয়ে নিই। ভবিষ্যতেও এ রকম কিছু নজরে এলে সরিয়ে নেওয়া হবে।”

পরিকল্পনাহীন ভাবে হোর্ডিং লাগানোয় শহরের সৌন্দর্যও যে নষ্ট হয়, এ কথা মানেন সবাই। মানিকতলার বাসিন্দা সাধন সাধুখাঁ বলেন, “প্রতিটি শহরেরই একটি নিজস্ব চরিত্র রয়েছে। অপরিকল্পিত ভাবে হোর্ডিং লাগানোটা শহরের রুচি ও সৌন্দর্যবোধ— দু’য়েরই পরিপন্থী।” পুরকর্তারাও অবশ্য এ কথা অস্বীকার করেন না। দেবাশিসবাবু বলেন, “শহরের সৌন্দর্যায়নের বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। পুরসভার নজরদারিতে অপরিকল্পিত ভাবে হোর্ডিং লাগানোর প্রবণতা অনেক কমেছে। পরিকল্পনা করে দরপত্র ডেকে শহরে প্রায় ৪০০টির মতো হোর্ডিং লাগানো হয়। তাঁর কথায়, “এর বাইরে বেআইনি বা অপরিকল্পিত কোনও হোর্ডিং লাগানো দেখলেই আমরা ব্যবস্থা নিই।”

শুধু দৃশ্যদূষণই নয়, গাছের ডাল ছেঁটে বা গাছ ঢেকে হোর্ডিং লাগানোয় পরিবেশের ক্ষতি হয় বলে মনে করেন পরিবেশবিদেরা। পরিবেশ দফতরের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গাছে হোর্ডিং লাগানোয় জীববৈচিত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়। হোর্ডিংয়ের চড়া আলো এবং তাপ গাছের বৃদ্ধি ও আয়ু অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে।”

হোর্ডিং নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ট্রাফিক-কর্তাদেরও। তাঁদের বক্তব্য, হোর্ডিংগুলি অনেক সময়ে পথ দুর্ঘটনার কারণ হয়। পার্ক সার্কাস মোড়ে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, “আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেক সময়ে হোর্ডিংয়ে নজর পড়ায় মনোযোগ হারিয়েছেন চালক। আর তার ফলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।”

ছবি: সুদীপ আচার্য, সুমন বল্লভ ও স্বাতী চক্রবর্তী।

avik bandyopadhyay supriya tarafdar hoarding
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy