Advertisement
E-Paper

লক্ষ্মীপুজোর বাজারদর, ঝাঁপি উপুড় করতে হচ্ছে মধ্যবিত্তকে

বাজার তো নয় আগুন! বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো মঙ্গলবার। পাছে দাম বেড়ে যায় তাই রবিবারই থলি হাতে বাজারে হাজির হয়েছিলেন যোধপুর পার্কের হিরন্ময় চক্রবর্তী। লিস্ট মিলিয়ে তিনটি পেয়ারা ওজন করিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে দাম দিতে মানিব্যাগটা পকেট থেকে বের করেছেন কি করেননি, দাম শুনে ভিরমি খাবার জোগার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৫ ১৯:২১

বাজার তো নয় আগুন!

বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো মঙ্গলবার। পাছে দাম বেড়ে যায় তাই রবিবারই থলি হাতে বাজারে হাজির হয়েছিলেন যোধপুর পার্কের হিরন্ময় চক্রবর্তী। লিস্ট মিলিয়ে তিনটি পেয়ারা ওজন করিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে দাম দিতে মানিব্যাগটা পকেট থেকে বের করেছেন কি করেননি, দাম শুনে ভিরমি খাবার জোগার। তিনটি পেয়ারার দাম ৪০ চাকা। চেনা ফলওয়ালা। বছরভর পেয়ারা, শশা, কলা- বারুইপুর থেকে আসা ওই ফল বিক্রেতার কাছ তকেই কেনেন অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসারটি। তাই দরদস্তুর না করেই তিনটি পেয়ারা ওজন করিয়েছিলেন। তার জন্য এমন খেসারত দিতে হবে ভাবেননি তিনি।

দুর্গাপজো সর্বজনীন। ভোগের খরচ কত, ফল প্রসাদের খরচ কত তা নিয়ে আমজনতাকে ভাবতে হয় না। পুজো কমিটিগুলিই বাজারের দায়িত্ব নেন। কিন্তু দুগার্পুজো মিটতেই লক্ষ্মীপুজোর জন্য বাজারে গিয়ে আঁচটা টের পাচ্ছেন অনেকেই। গোবিন্দভোগ চাল, মুগের ডাল, গুর, চিনি সব কিছুর দাম পুজোর আগের সপ্তাহ থেকে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আর ফলের দামতো লাগামছাড়া। বাজারে গিয়ে চমকে উঠছেন বড়ির কর্তা। বাজারে না গিয়ে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে যে সব গৃহিনী ফল কিনছেন তাঁরাও গৃহকর্তাদের ভোগান্তিটা বুঝতে পারছেন।

সোমবার রাতে বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো। দরকার আখ। বাড়ির সামনে দিয়ে ঘাড়ে আখের বোঝা নিয়ে যাচ্ছিলেন এক ফেরিওয়ালা। বাগুইআটির গৃহকর্ত্রী সাহানা দত্ত থামালেন তাঁকে। ভেবেছিলেন দুটি আখ কিনবেন। কিন্তু ফেরিওয়ালা কিছুতেই একটি আখের দাম ২৫ টাকা থেকে কমাতে চাইছিলেন না। পুজোর বাজেট বাড়াননি সাহানাদেবী। একটি আখ কিনে খরচে লাগাম টেনেছেন। বিজয়া করতে গিয়ে শনিার ইছাপুরের এক অত্মীয়ের বাড়ি থেকে তিনটি নারকেল নিয়ে এসেছেন। প্রতিবেশী গৃহিনী তাঁকে জানিয়েছেন, বাজারে ওই সাইজের তিনটি নারকেল ৫০ টাকাতেও মিলছে না।

তবে পুজোটা দেরিতে হওয়ায় ফুলকপির দামটা কিছুটা কমেছে। ঝাড়খণ্ড ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্থানীয় ফুলকপি বাজারে এসে গিয়েছে। বেগুনের দামটাও রবিবার পর্যন্ত তেমন বাড়েনি। সরবরাহেও ঘাটতি নেই। কিন্তু তাতেও শান্তি নেই গৃহিনীর। সাহানাদেবীর মন্তব্য, ‘‘শুধু সবজিতে তো চলবে না! খিচুরি চাই। গোবিন্দভোগ চাল আর সোনামুগের ডাল একে অপরের সঙ্গে দামের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ফলের সঙ্গে না হয় আপোস করতে পারি, কিন্তু খিচুরি না হলেই নয়।’’ গোবিন্দভোগ চাল কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা ১০০ টাকা কেজি দরে। মুগডাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজিতে ১২৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।

পদ্মফুল ছাড়া লক্ষ্মীপুজো ভাবা যায় না। রবিবার জগন্নাথঘাটের ফুল বাজারে এক-একটি পদ্ম ফুল বিকিয়েছে ১২-১৫ টাকা করে। পুজোর আগে তেমন বৃষ্টি না হাওয়াতে এবার বাজারে পদ্মের যোগান ভালোই। এ দিন গাঁদা ফুলের দর ছিল ১৫ টাকা কেজি। তবে ছোট সাইজের গাঁদা ফুলের দাম ছিল কিছুটা কম। ১২ টাকা প্রতি কেজি। কাশিপুরের একটি পাড়ায় ফুল বিক্রি করেন রমেন ঘোষ। তাঁর অভি়জ্ঞতায় এবার ফুলে চাহিদা ও জোগান সমান। তবে রজনীগন্ধার খুচরো ফুলের দাম চড়া। রবিবার পাইকারি বাজারে খুচরো রজনীগন্ধার দাম ছিল কেজি প্রতি ৪০০ টাকার বেশি।

ফলের বাজারও চড়া। মহানগরের বিভিন্ন বাজারে আপেলের দাম ছিল ৭০-১০০ টাকা কেজি। খেজুর ৮০-১০০ টাকা প্রতি কেজি। বাজারে মুসুম্বি বিক্রি হচ্ছে তিনিটে ২০ টাকায়। ১৮০-১৯০ টাকা প্রতি কেজিতে বিকোচ্ছে বেদানা। একটি নারকেলের দাম এ দিন ছিল ২০-২৫টাকার মধ্যে। যেখানে পেয়ারার দাম ছিল ৫০-৫৫ টাকা কেজি, সেখানে ন্যাসপাতি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা প্রতি কেজি। এ দিন বিভিন্ন বাজারে মাঝারি সাইজের ফুলকপি বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা। বাধাকপির দাম প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা। এ ছাড়া বড়বটি, ট্যমেটো,ঢেঁড়শের দাম ছিল কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বেগুন বিকোচ্ছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।

শুধু পুজোর উপকরণ নয়। হাত দেওয়া যাচ্ছে না প্রতিমাতেও। প্রতিমার দামের সঙ্গে আপোস করতে না পেরে অনেকেই কিনেছেন সরা। দক্ষিণ কলকাতার কটি বড় বাজারের একটি দশকর্মা ভাণ্ডারের দোকানী জানালেন, ‘‘আগে সরার প্রতিমা বিক্রিই হত না। কয়েকটা পরিবার কিনত। কিন্তু এখন সরায় পটে আঁকা প্রতিমার বিক্রিরই সব থেকে বেশি। আমিতো দুর্গাপুজোর অনেক আগে থেকেই স্টক করে রেখেছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy