নবম বা দশম শ্রেণিতে অন্য স্কুলে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশিকা জারি করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। আগে এই বদলিতে তেমন কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি স্কুলগুলিতে নতুন নির্দেশ পাঠিয়ে পর্ষদ বলেছে, মাধ্যমিক স্তরে অন্য স্কুল থেকে সর্বোচ্চ ১০ জন পড়ুয়াকে ভর্তি নেওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই বদলির তথ্য জানাতে হবে পর্ষদকে।
কেন এমন সিদ্ধান্ত?
অনেক সময়ই দেখা যায় বড়-নামী স্কুলের পড়ুয়ারা নবম শ্রেণিতে ভাল ফল করতে না পারলে তাদের পাশ করানো হয় না। ওই সব স্কুল কড়াকড়ি করে থাকে, যাতে মাধ্যমিকে ভাল ফল হয়। কিন্তু অনেক পড়ুয়ার অভিভাবকই চান না বছর নষ্ট করতে। তখন ওই সব পড়ুয়ারা অপেক্ষাকৃত ছোট বা অনামী স্কুল ভর্তি হয়ে সেই স্কুল থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চায়। এখানেই সমস্যা।
আরও পড়ুন:
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ব্যাখ্যা, অনেক সময়ই দেখা যায় নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাওয়ার পর কোনও পড়ুয়া বদলি নিচ্ছে। কিন্তু সেই তথ্য পরের স্কুলটি ঠিক সময়ে পর্ষদকে জানাচ্ছে না। তার ফলে ওই পড়ুয়ার অ্যাডমিট কার্ড পৌঁছে যাচ্ছে আগের স্কুলে।
এই সমস্যা সমাধানেই কড়া হচ্ছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এর পাশাপাশি যে সব পড়ুয়া তিন বছরের বেশি ব্যবধানে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করতে চাইছেন, তাঁদের জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, কেন তিন বছর বা তার বেশি দিন পড়াশোনা করেননি, তা লিখিত ভাবে জানাতে হবে পর্ষদকে। কোন শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন, তার নথিও পেশ করতে হবে।
এ বিষয়ে অবশ্য শিক্ষকদের একাংশ খানিক সমস্যার আশঙ্কা করছেন। তাঁদের দাবি, যে সব স্কুলে এমনিতেই পড়ুয়ার অভাব, তারা মেধার সঙ্গে আপোস করে হলেও অন্য স্কুলে কিছু পড়ুয়া ভর্তি নিতে পারত। সেই সংখ্যা কমে গেলে আখেরে মুশকিলে পড়বে স্কুলগুলি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত খুবই কম পড়ুয়া রয়েছে, এমন স্কুলের সংখ্যা কম নয়। তারা অনেক সময়ই মাধ্যমিকে পড়ুয়ার সংখ্যা বা়ড়িয়ে দেখানোর সুযোগ পায়।
আবার প়ড়ুয়াদের তরফেও কিছু অসুবিধা হতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা। যেমন কলকাতার পার্ক ইনস্টিটিউশন এর প্রধানশিক্ষক বাসবকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই সিদ্ধান্ত ফের একবার বিবেচনা করা উচিত পর্ষদ ও সরকারের। পড়ুয়াদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হতে পারে।”
নারায়ন দাস বাঙ্গুর স্কুলে প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “একসঙ্গে অনেক পড়ুয়া ভর্তি হতে চাইলে, আমরা কাকে বাছাই করব তা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হবে। কোনও পড়ুয়া পছন্দের স্কুলে সুযোগ না পেলে তার ফল আরও খারাপ হতে পারে।” পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৭-এ যারা মাধ্যমিক দেবে, তাদের নতুন স্কুলে ভর্তির আবেদনপত্র মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে পাঠাতে হবে ৩০ জুন ২০২৬-এর মধ্যে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নবম-দশমে ভর্তির বিষয়ে কড়াকড়ি করছে। এতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেই স্কুলগুলি যাদের প়ড়ুয়া কম।”