সুড়ঙ্গের ‘ডেঞ্জার জোনে’ মেট্রোর আটকে পড়ার ঘটনায় কোনও দিশাই দিতে পারল না তদন্ত রিপোর্ট। অগত্যা এখন চলছে ধামাচাপা দেওয়ার পালা।
বেলগাছিয়া-শ্যামবাজারের মাঝে ওই ‘ডেঞ্জার জোনে’ মেট্রোর আটকে পড়ার ঘটনায় কোনও ত্রুটিই খুঁজে পাননি তদন্তকারীরা। তাই ঘটনার তদন্ত রিপোর্টে কেন ওই দিন অর্থাৎ গত ২১ ফেব্রুয়ারি মেট্রো আটকে পড়েছিল, তা স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তাঁরা। শুক্রবার তদন্তকারীদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার। ওই ঘটনার দায় কার তা চিহ্নিত করতে না পেরে মুশকিলে পড়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এখন মেট্রোকর্তাদের সকলেরই মুখে কুলুপ। মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ অফিসার রবি মহাপাত্রকেও এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “রিপোর্ট নিয়ে কোনও তথ্য আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
কী ঘটেছিল ২১ ফেব্রুয়ারি? মেট্রো সূত্রে খবর, ওই দিন বেলগাছিয়া স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ার পরেই সুড়ঙ্গে আটকে দাঁড়িয়ে পড়ে। যেখানে মেট্রো আটকে যায়, তার উপর দিয়েই বয়ে গিয়েছে বেলগাছিয়া খাল। সুড়ঙ্গের ওই জায়গাটি এমনিতেই ‘ডেঞ্জার জোন’ হিসেবে চিহ্নিত। সেখানে ট্রেন দাঁড়ানোর কথা নয়। যোগাযোগের মাধ্যমও খারাপ হয়ে থাকায় চালক দীর্ঘক্ষণ কন্ট্রোলেও যোগাযোগ করতে পারেননি। ফলে উদ্ধারকাজও শুরু হয় অনেক দেরিতে।
ঘটনার পরদিন জেনারেল ম্যানেজার প্রাথমিক তদন্তে গিয়ে কিছু ফরমান জারি করেন তিনি। কয়েক দফা বিষয়ে তিনি যা যা করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ধরেই নেওয়া যায় নিজে ঘটনার কারণ দেখেশুনেই সেগুলি দিয়েছিলেন তিনি। তা হলে তদন্তকারীরা কিছুই পেলেন না, এটা কী ভাবে সম্ভব?
মেট্রোর একাংশ বলছেন, তদন্তকারীরা একে অপরের বিরুদ্ধে বলতে ভয় পাচ্ছেন। যেমন বিদ্যুৎ (ইলেট্রিক্যাল) এবং সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন (এস অ্যান্ড টি) এবং অপারেশনস্। মেট্রোর তদন্ত কমিটিতে ওই তিন দফতরের কর্তারাই ছিলেন।
এর পাশাপাশি আর একটি প্রশ্নও উঠেছে। সেটা হল বাতানুকূল মেট্রো রেকের নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ঠিক মতো ওয়াকিবহাল না হওয়ায় তদন্তকারীরা কি ওই গোলমাল ধরতেই পারেননি? তদন্তে কিছু বেরিয়ে না আসায় মেট্রোর অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, ওই তদন্ত কেন রেলের সেফ্টি অফিসার বা রেল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে করানো হল না? রেলের নিয়মে কোনও দুর্ঘটনায় মৃত্যু না হলে সেফ্টি অফিসার তদন্ত করেন না। কিন্তু মেট্রোর কর্তা-কর্মীদের ওই অংশের যুক্তি, গত ২১ ফেব্রুয়ারির ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়নি ঠিকই, কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতা ছিল মারাত্মক। সেই কারণে সেফ্টি অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করানোটাই বাঞ্ছনীয় ছিল।
আসলে মেট্রোর গোটা পরিকাঠামোটাই ঘুণ ধরে গিয়েছে বলে মেট্রো রেলেরই একাংশের অভিমত। রেক থেকে কর্মী সবেতেই। রেক বদলানোর পাশাপাশি কর্মী-অফিসারদেরও বদলি করা প্রয়োজন। রেলের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ২৫ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে তাঁরাও মানসিক ভাবে ক্লান্ত। সে কারণেই ত্রুটি খুঁজে বার করা যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy