Advertisement
E-Paper

সত্যি বলছে না স্কুল, অভিযোগ মৃত পড়ুয়ার অভিভাবকদের

ছ’বছরের রাজন্যর মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সাউথ পয়েন্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনল তার পরিবার। এর আগে স্কুলের বিরুদ্ধে থানায় গাফিলতির অভিযোগও দায়ের করেছিলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে আচমকা মৃত্যু হয় প্রথম শ্রেণির ছাত্র রাজন্য সরকারের। ওই দিনই স্কুলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে বলা হয়, রাজন্যর আগেকার কোনও অসুস্থতা থেকে এমন ঘটেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৪ ০১:৩১
ছেলের স্মৃতি আগলে মা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

ছেলের স্মৃতি আগলে মা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

ছ’বছরের রাজন্যর মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সাউথ পয়েন্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনল তার পরিবার। এর আগে স্কুলের বিরুদ্ধে থানায় গাফিলতির অভিযোগও দায়ের করেছিলেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে আচমকা মৃত্যু হয় প্রথম শ্রেণির ছাত্র রাজন্য সরকারের। ওই দিনই স্কুলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে বলা হয়, রাজন্যর আগেকার কোনও অসুস্থতা থেকে এমন ঘটেছে। ভর্তির সময়ে ওই শিশুর অভিভাবকেরা মেডিক্যাল ফর্মে কোনও অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেননি। তা থেকেই কর্তৃপক্ষের মনে হয়, রাজন্যর আগের রোগ সম্পর্কে তথ্য গোপন করে গিয়েছিলেন অভিভাবকেরা। তাঁদের দাবি, নার্সিংহোমে ওই ছাত্রের মায়ের সঙ্গে চিকিৎসকের কথোপকথনে শুনে তাঁরা জানতে পারেন, শিশুটি আগেও অসুস্থ হয়েছিল। শুক্রবার রাতে শিশুটির পরিবার গড়িয়াহাট থানায় ফের স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। সাংবাদিক বৈঠকে স্কুল কর্তৃপক্ষ যা বলেছেন, তার একটি সিডি থানায় দিয়ে ওই পরিবার জানিয়েছে, স্কুলের বক্তব্যের মধ্যে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে।

শুক্রবার বাঘা যতীন কলোনির ফ্ল্যাটে বসে স্কুলের এই বক্তব্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন রাজন্যর বাবা-মা। তাঁদের বক্তব্য, “স্কুল সত্যি বলছে না। অনেক তথ্য চেপে যাচ্ছে।” রাজন্যর মা রুচিরাদেবী বলেন, “আমার ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। কোনও দিন এমন কোনও রোগে সে আক্রান্ত হয়নি, যা থেকে এমন হতে পারে।” বাবা রাজা সরকার বলেন, “ছেলে এক বার অসুস্থ হয়েছিল। তখন সব পরীক্ষা হয়। রিপোর্টে কিছু ধরা পড়েনি। সেই রিপোর্ট আমাদের কাছে আছে।” তাঁর প্রশ্ন, “রাজন্য আগে থেকেই অসুস্থ ছিল, এ তথ্য স্কুল কর্তৃপক্ষ কোথা থেকে পেলেন, তা আমাদের জানানো হোক।”

এই প্রশ্নের উত্তরে এ দিন কী বলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ? বৃহস্পতিবার স্কুলের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজন্যর অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন স্কুলের ট্রাস্টি কৃষ্ণ দামানি। এ দিন তিনি বলেন, “হাসপাতালে আমাদের কিছু লোক চিকিৎসকের সঙ্গে ছাত্রের মাকে কথা বলতে শুনেছিলেন। তখনই জানা যায়, রাজন্য আগেও দু’বার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেটাই সাংবাদিক ও পুলিশকে জানিয়েছি।”

পুলিশও জানায়, স্কুল কর্তৃপক্ষ রাজন্যের আগের অসুস্থতা সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে মৃত ছাত্রের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেননি তদন্তকারীরা। এ দিন গড়িয়াহাট থানার তদন্তকারী দল স্কুলে যায়। পুলিশ জানায়, শিক্ষিকা ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ টিফিনের ঘণ্টা বাজার কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই শিক্ষিকা রাজন্যকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখেন। তাঁরা এক সহায়কের সাহায্যে রাজন্যকে সিক-রুমে নিয়ে যান। সেখানে এক নার্স প্রাথমিক ভাবে তাকে পরীক্ষা করে জানান, রাজন্যের নাড়ি চলছে। তবে, অক্সিজেন দেওয়া সত্ত্বেও সে সাড়া না দেওয়ায়, তাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্কুলের কাছেই একটি নার্সিং হোমে। মাত্র ১৫ মিনিটে পুরো ঘটনা ঘটে বলে শিক্ষিকা ও কমীরা পুলিশকে জানান।

ওই নার্সিংহোম সূত্রে পুলিশ জেনেছে, প্রাথমিক পরীক্ষায় নার্সিংহোমের চিকিৎসকেরাও রাজন্যের ‘পাল্স বিট’ পেয়েছিলেন। তবে, ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই রাজন্যর মৃত্যু হয় বলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দাবি। পুলিশ জানায়, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে চিকিৎসকেরা জানান, ওই পড়ুয়ার দেহে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট না হওয়ায়, রাজন্যর রক্তের নমুনা ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্কুলে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, মৃত্যুর আগে রাজন্য গানের ক্লাসে ছিল। তখন সে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল কি না, ওই ক্লাসের শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। ঘটনার দিন ঠিক কী হয়েছিল, তা জানতে রাজন্যর কয়েক জন সহপাঠীর সঙ্গেও কথা বলবেন তদন্তকারীরা।

south point rajonyo sarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy